in

ফিলিস্তিন পরিস্থিতি এবং আমাদের করণীয়

the-philistine-situation-and-what-we-can-do

সুবহানআল্লাহ! মাস দুয়েক আগে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। কিন্তু কেউই ভাবেনি এই যুদ্ধের কারণে গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ব্যাপক গণহত্যা শুরু হবে। আমাদের দিনগুলো অন্ধকারে, আঘাতে আর হতাশায় ভরে গেছে। প্রতিনিয়ত গাজার হাজার হাজার ভিডিও ও ছবি আমাদের সামনে আসছে। গাজার মাটিতে প্রতিদিন পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে। আমরা মহান রবের কাছে প্রার্থনা করছি, ইনশাআল্লাহ একদিন ফিলিস্তিনে শান্তি বিরাজ করবেই।

গাজাবাসীদের ওপর ব্যাপক নিপীড়ন ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে। তবে বৈশ্বিক সমর্থনের দিক দিয়ে স্রোতের মোড় তাদের দিকেই ঘুরেছে। বিশ্বব্যাপী ফিলিস্তিন সমর্থকদের সংখ্যা বাড়ছে। অনেক দেশ, নেতৃবৃন্দ, প্রভাবশালী মানুষজন এবং অ্যাকটিভিস্টরা ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি তাদের সমর্থনের ক্ষেত্রে আরও সোচ্চার হতে শুরু করেছে।

আমরা ফিলিস্তিনের অবস্থাকে কিভাবে হ্যান্ডেল করব এই লেখায় তার কুরআনি প্রেসক্রিপশন দেখব ইনশাআল্লাহ।

১. পরীক্ষা ও সবর

 وَ لَنَبۡلُوَنَّکُمۡ بِشَیۡءٍ مِّنَ الۡخَوۡفِ وَ الۡجُوۡعِ وَ نَقۡصٍ مِّنَ الۡاَمۡوَالِ وَ الۡاَنۡفُسِ وَ الثَّمَرٰتِ ؕ وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیۡنَ ﴿۱۵۵﴾ۙ  الَّذِیۡنَ اِذَاۤ اَصَابَتۡهُمۡ مُّصِیۡبَۃٌ ۙ قَالُوۡۤا اِنَّا لِلّٰهِ وَ اِنَّاۤ اِلَیۡهِ رٰجِعُوۡنَ ﴿۱۵۶﴾ؕ  اُولٰٓئِکَ عَلَیۡهِمۡ صَلَوٰتٌ مِّنۡ رَّبِّهِمۡ وَ رَحۡمَۃٌ ۟ وَ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡمُهۡتَدُوۡنَ ﴿۱۵۷﴾

আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা, তাদেরকে যখন বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। তাদের উপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত। [সুরা বাকারাঃ ১৫৫-১৫৭]

জীবন যখন পরীক্ষা ও দুঃখ-কষ্টে ভরে যায়, তখন কুরআনের কাছেই আমরা স্বান্ত্বনা ও দিকনির্দেশনা খুঁজে পাই। ফিলিস্তিনের কঠিন পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করে কুরআনের আয়াতগুলো যেন আরো মর্মস্পর্শী হয়ে উঠেছে। কুরআন আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, ইমানের জোর বিশ্বাস মনের জোর কতটা বাড়িয়ে দেয়। এর বাস্তব প্রমাণও আমরা ফিলিস্তিনের ভাই-বোনদের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি।

মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশই হলো পরীক্ষা। সুরা আল বাকারায় (২:১৫৫) – এসেছে, “আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।” এই আয়াতে ধৈর্য, অধ্যবসায়ের কথা বলা হয়েছে। যারা ইমানের সাথে কষ্ট সহ্য করে তাদেরকে অভাবনীয় পুরষ্কৃত করার কথাও এসেছে।

এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে আমরা ফিলিস্তিনি মুক্তিকামী ভাইদের সাথে একাত্মতা ও ঐক্য পোষণ করছি। আসুন আমরা কুরআনের দিকে ফিরি প্রশান্তি ও অনুপ্রেরণার জন্য। কুরআন আমাদের আশান্বিত করে, বিপদে দৃঢ়ভাবে টিকে থাকতে শেখায়। স্মরণ করিয়ে দেয়, আল্লাহ সবরকারীদের পাশেই আছেন। কুরআনের প্রজ্ঞা এবং নির্দেশনা আমাদের সংকল্পকে শক্তিশালী করুক, অভাবীদের সান্ত্বনা দিক, আমিন। ঘুটঘুটে অন্ধকারেও আমরা এগিয়ে চলব ইমানের আলোতে, ইনশাআল্লাহ।

২. দুঃখ     

بَلٰی ٭ مَنۡ اَسۡلَمَ وَجۡهَهٗ لِلّٰهِ وَ هُوَ مُحۡسِنٌ فَلَهٗۤ اَجۡرُهٗ عِنۡدَ رَبِّهٖ ۪ وَ لَا خَوۡفٌ عَلَیۡهِمۡ وَ لَا هُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ ﴿۱۱۲﴾

হ্যাঁ, যে নিজকে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করেছে এবং সে সৎকর্মশীলও, তবে তার জন্য রয়েছে তার রবের নিকট প্রতিদান। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। [সুরা বাকারাঃ ১১২]

জীবনে আমরা কখনো প্রিয়জনকে হারাই, কখনো হারাই সম্পদ। মুসলিম উম্মাহ বিপদে আপতিত হয়। এসব সময়ে আমরা আবেগতাড়িত হয়ে পড়ি। এর প্রভাব পড়ে আমাদের জীবনযাপনের ওপর। পরিবারের সদস্য ও প্রিয়জনরাও এর দ্বারা প্রভাবিত হয়। কেউ কেউ খুব ঘনঘন দুঃখ অনুভব করে। কারো এই অনুভূতি হতে পারে কয়েকদিন পরপর।

কুরআনের বিভিন্ন আয়াত তিলাওয়াতকারীর ওপর ভিন্ন প্রভাব ফেলে। জান্নাতের আয়াতে আমরা আশান্বিত হই, জাহান্নামের আয়াত ভীতি সৃষ্টি করে। আল্লাহ সান্ত্বনা দিলে আমরাও সান্ত্বনা পাই।

মুমিন হলেই জীবন আরাম-আয়েশে ভরে যাবে, কোনো টেনশন থাকবে না – বিষয়টি কখনোই এমন নয়। তবে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস করলে, তার ইবাদত করলে, তার ওপর আশা-ভরসা রাখলে, আমরা যে কোনো সমস্যা ও অবস্থা কাটিয়ে ওঠার মানসিক শক্তি পাব। ঠিক এই বিষয়টিই আমরা দৈনিক ফিলিস্তিনে দেখছে। বাবা-মাদের তাদের সন্তানদের কবর দিতে হচ্ছে। অথচ তারা তবুও আল্লাহর প্রশংসা ও শুকরিয়া আদায় করছে।

৩. দুর্দশা

ফিলিস্তিনে আমাদের ভাই-বোনেরা যে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে, এই অবস্থায় নিম্নোক্ত আয়াতের বিষয়বস্তু আরো প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। সুরা বাকারায় আল্লাহ আমাদের স্মরণ করিয়ে বলছেন,

وَ لَنَبۡلُوَنَّکُمۡ بِشَیۡءٍ مِّنَ الۡخَوۡفِ وَ الۡجُوۡعِ وَ نَقۡصٍ مِّنَ الۡاَمۡوَالِ وَ الۡاَنۡفُسِ وَ الثَّمَرٰتِ ؕ وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیۡنَ ﴿۱۵۵﴾ۙ

আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। [সুরা বাকারাঃ ১৫৫]

কুরআনের আয়াতে কষ্টে ধৈর্যধারণের যে বিষয়গুলো এসেছে তা কেবল ব্যক্তিগত সংগ্রামের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য  নয়। অন্যদের কষ্ট অনুধাবন করা, তাদেরকে সান্ত্বনা ও দিকনির্দেশনা দেওয়ার বিষয়টাও আসে কুরআন থেকেই।

আমরা শুধু কুরআনের তাদাব্বুর করেই নিজেদের দায়িত্ব শেষ বলে মনে করব না। বরং আয়াতগুলো আমলে নিয়ে আসতে হবে। কিভাবে কুরআনের আয়াতকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা হয় তা শিখতে হবে। এতে কুরআন আমাদের জীবনে জীবন্ত হবে।

৪. মৃত্যু

 وَ لَوۡ یُؤَاخِذُ اللّٰهُ النَّاسَ بِظُلۡمِهِمۡ مَّا تَرَکَ عَلَیۡهَا مِنۡ دَآبَّۃٍ وَّ لٰکِنۡ یُّؤَخِّرُهُمۡ اِلٰۤی اَجَلٍ مُّسَمًّی ۚ فَاِذَا جَآءَ اَجَلُهُمۡ لَا یَسۡتَاۡخِرُوۡنَ سَاعَۃً وَّ لَا یَسۡتَقۡدِمُوۡنَ ﴿۶۱﴾

আর আল্লাহ যদি মানবজাতিকে তাদের যুলমের কারণে পাকড়াও করতেন, তবে তাতে (যমীনে) কোনো বিচরণকারী প্রাণীকেই ছাড়তেন না। তবে আল্লাহ তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দেন। যখন তাদের নির্দিষ্ট সময় চলে আসে, তখন এক মুহূর্তও পেছাতে পারে না, এবং আগাতেও পারে না। [সুরা নাহলঃ ৬১]

এখানে আমাদেরকে আমাদের চূড়ান্ত পরিণতি – মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা কেউই এটা বদলাতে পারব না। আমরা যতই মনে করি না কেন যে আমাদের জীবনের নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে। কিন্তু বাস্তবতা হল, আমাদের প্রতিটি বিষয়ের নিয়ন্ত্রক মহান আল্লাহ। তার কাছেই আমাদের আত্মসমর্পণ করতে হবে। মৃত্যুকে দেখতে হবে আল্লাহর রহমত হিসেবে, এটি পৃথিবীর সব মানুষের জন্যই সুনির্ধারিত। এর জন্য নিতে হবে সুচারু প্রস্তুতি।

গত কয়েক সপ্তাহে গাজায় ঘটে যাওয়া যেসব ভয়ঙ্কর দৃশ্যের সাক্ষী হয়েছি আমরা, এরকম নৃশংস ও বেদনাদায়ক চিত্র আমরা কেউ আগে কখনো দেখিনি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা প্রতিটি হারিয়ে যাওয়া জীবনকে শহীদ হিসাবে কবুল করুন এবং তাদের জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন এবং তাদের দুঃখ-কষ্টের অবসান করুন। আমিন।

আমাদের মৃত্যুর সময় নির্ধারিত। এর এক সেকেন্ড আগে বা পরে আমরা মারা যাব না। মৃত্যুর কথা ভাবার সময় ভাবব, এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় কিছু প্রাপ্তির আশায় যেন আমরা আল্লাহর সাথে সম্পর্ক নষ্ট না করি। আমরা যদি আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার সন্তুষ্টিতে জীবনযাপন করি, তাহলে শেষ নিঃশ্বাস নিয়ে ভীত হওয়ারও কিছু নেই।

ফিলিস্তিনে ভাইবোনদের সাথে আমাদের মিলের বিষয়টি হল, আমরা সবাই এক সময় না এক সময় মারা যাবই। আমরা যারা এখন যুদ্ধক্ষেত্রে নেই, শান্তিতে নিরাপদে ঘরে বাস করছি তারা মহান রবের কাছে এই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করি। আমরা দৃঢ় নিয়ত করি, আমরা যেন জীবনের প্রতিটি মূহুর্ত জুলুম ও জালিমের প্রতিহতকরণের পেছনে ব্যয় করতে পারি। ফিলিস্তিনকে মুক্ত করা যেন হয় আমাদের জীবনের লক্ষ্য।

What do you think?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

semiconductor chip war, China USA, the world is in danger

চিপ যুদ্ধ এবং ভূরাজনীতি; বিপর্যয়ের মুখে বিশ্ব

Information Overload

ইনফরমেশন ওভারলোড যেভাবে আমাদের ধ্বংস করছে