in

ইসলামে রিজিক মানে আমাদের ভাবনার চেয়ে বেশি কিছু

ইসলামে রিজিক

প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষই জীবনের প্রতিটি পদে রিজিকের প্রয়োজনীয়তা বোধ করে। রিজিক নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তা কেন্দ্র করে ঘুরে। কি খাব, কি পরব এই ভাবনা তাদের! কিন্তু ইসলামে রিজিকের ধারণা এত সংকীর্ণ নয়। ইসলামে রিজিকের কনসেপ্ট একটি বিস্তৃত বিষয়। রিজিক কখনো কখনো আসে অজানা উৎস থেকে, বিভিন্ন উপায়ে। সম্পদ, স্বাস্থ্য এমনকি ধূসর হয়ে যাওয়া চুলও আল্লাহর পক্ষ থেকে রিজিক হতে পারে। ইলম, নেককার স্ত্রী, সন্তান-সন্তানাদি সবই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পাঠানো রিজিক। এমনকি যে জিনিস কল্যাণ বয়ে আনে এবং ক্ষতিকে দূরে রাখে তা-ও রিজিক।

আল্লাহ আর-রাজিক এবং আর-রাজ্জাক

পবিত্র কুরআনে রিজিক শব্দটি ১২৩ বার এসেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রিজিক কিভাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে তা বলা হয়েছে। একজন ব্যক্তি জীবনে কি কি বিষয় ও জিনিস অর্জন করবে তা তিনিই নির্ধারণ করেন। আল্লাহই আমাদের সুখী করেন, মন খারাপের বিষয়গুলো দেওয়ার মালিকও তিনি। তিনিই আল্লাহ, আর-রাজিক এবং আর-রাজ্জাক। তিনি দানশীল, একমাত্র দাতা। আল্লাহ নিজের ব্যাপারে কুরআনে বলেছেন,


﴿ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلرَّزَّاقُ٥٨﴾ [الذاريات: ٥٨]

“নিশ্চয় আল্লাহই রিজিকদাতা।” [সুরা জারিয়াত, আয়াত: ৫৮]

আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেন,

﴿وَمَا مِن دَآبَّةٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا عَلَى ٱللَّهِ رِزۡقُهَا٦﴾ [هود: ٦]

“আর জমিনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহরই।” [সুরা হুদ, আয়াত: ৬]

মহান আল্লাহ রিজিকদাতা। তার আছে অফুরন্ত রিজিক যা তিনি তার বান্দাদের মধ্যে বিতরণ করেন। তার রিজিক প্রত্যেকের কাছে পৌঁছে যায়।

রিজিক লেখা হয়ে গেছে

রিজিকের কনসেপ্ট ভীষণ সুন্দর। আপনি যে ফলটা খাচ্ছেন, সেই ফল আপনার জন্যই লেখা ছিল। গাছে ফুল ধরেছিল, সেখান থেকে ফল হয়েছিল, আরো শত শত ফল ঝরে পড়ে গেছে, কিছু ফল পাখি খেয়ে নিয়েছে, কিন্তু ওই ফলটা অক্ষত ছিল। এরপর অসংখ্য হাত পেরিয়ে, কত দেশ ভ্রমণ করে ফলটা আপনার হাতে এসেছে। কারণ, ফলটা আপনার রিজিকেই লেখা ছিল।

আবু আবদির রহমান আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- যিনি সত্যবাদী ও যার কথাকে সত্য বলে মেনে নেয়া হয়- তিনি আমাদেরকে বলেছেন:

তোমাদের সকলের সৃষ্টি নিজের মায়ের পেটে চল্লিশ দিন যাবৎ শুক্ররূপে জমা হওয়ার মাধ্যমে শুরু হতে থাকে, পরবর্তী চল্লিশ দিন জমাট বাঁধা রক্তরূপে থাকে, পরবর্তী চল্লিশ দিন মাংসপিণ্ড রূপে থাকে, তারপর তার কাছে ফেরেশতা পাঠানো হয়। অতঃপর সে তার মধ্যে রূহ প্রবেশ করায় এবং তাকে চারটি বিষয় লিখে দেয়ার জন্য হুকুম দেয়া হয়- তার রুজি, বয়স, কাজ এবং সে কি সৌভাগ্যবান না দুর্ভাগ্যবান।

অতএব, আল্লাহর কসম- যিনি ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ নেই- তোমাদের মধ্যে একজন জান্নাতবাসীর মত কাজ করে- এমনকি তার ও জান্নাতের মধ্যে মাত্র এক হাত ব্যবধান থাকে, এ অবস্থায় তার লিখন তার উপর প্রভাব বিস্তার করে বলে সে জাহান্নামবাসীর মত কাজ শুরু করে এবং তার ফলে তাতে প্রবেশ করে।

এবং তোমাদের মধ্যে অপর এক ব্যক্তি জাহান্নামীদের মত কাজ শুরু করে দেয়- এমনকি তার ও জাহান্নামের মধ্যে মাত্র এক হাত ব্যবধান থাকে, এ অবস্থায় তার লিখন তার উপর প্রভাব বিস্তার করে বলে সে জান্নাতবাসীদের মত কাজ শুরু করে আর সে তাতে প্রবেশ করে। [সহিহ বুখারিঃ ৩২০৮, মুসলিমঃ ২৬৪৩]

উল্লিখিত হাদিসে আমরা দেখছি, জীবনের অন্যান্য বিষয়ের মতো রিজিকও নির্ধারিত। এই বিষয়টাকে বোঝার দুটো রাস্তা আছেঃ

১. একজন ব্যক্তি যে কষ্টদায়ক ও গরিবি হালতে বড় হয়েছেন সেটার জন্য নিজের তাকদিরকে দায়ী করত পারেন। কেউ কেউ এমনকি এটাও বলতে পারে যে, তার জন্য জীবনে সুখী হওয়া তাকদিরে নেই কারণ আগে থেকেই তাকদিরে তার জন্য খারাপ ভাগ্য লেখা আছে।

২. আমরা স্বীকার করে নেব যে, স্বস্তি এবং কষ্ট দুটোই আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। তাই একজন মুসলিমকে নিজের অবস্থান উন্নত করার জন্য কাজ করতে হবে। অন্য কথায়, যথাযথ প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

প্রচেষ্টা চালানোর গুরত্ব এবং রিজিকের প্রকারভেদ

রিজিক নির্ধারিত – এটা অবশ্যই সঠিক। কিন্তু আমরা তো জানি না আল্লাহ কি লিখে রেখেছেন। তাই প্রতিটি সক্ষম ব্যক্তিকে রিজিকের জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এই বিষয়টা পশু-পাখি, তাদের জীবনযাপন, বেঁচে থাকা ও প্রজননের প্রচেষ্টার মধ্যেও প্রতিফলিত হয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

‏لو أنكم تتوكلون على الله حق توكله لرزقكم كما يرزق الطير ، تغدو خماصاً وتروح بطاناً

যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথাযোগ্য ভরসা রাখ, তবে তিনি তোমাদেরকে সেই মত রুজি দান করবেন যেমন পাখিদেরকে দান করে থাকেন। তারা সকালে ক্ষুধার্ত হয়ে (বাসা থেকে) বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে (বাসায়) ফিরে। [তিরমিজিঃ ২৩৪৪]

মুমিন হিসেবে আমাদের ইমান ও রিজিকের সন্ধানের মধ্যেকার সম্পর্কটা বুঝতে হবে। রিজিক আপনাআপনি চলে আসবে, এর জন্য কোনো প্রচেষ্টা চালানোর দরকার নেই -এই বিশ্বাস রাখা যাবে না। তেমনি বিপরীত বিশ্বাসও রাখা যাবে না। অর্থাৎ, আমরা পর্যাপ্ত প্রয়াস চালাবো রিজিকের জন্য, কিন্তু আল্লাহর ওপর ভরসা রাখার প্রয়োজন নেই। এরকম বিশ্বাসী ব্যক্তিও বিপথগামী, তার জন্য অপ্রত্যাশিত ফলাফল অপেক্ষা করছে।

উদাহরণ হিসেবে ট্যাক্সি ড্রাইভারের কথা বলা যাক। মনে করুন, এক ট্যাক্সি ড্রাইভার ট্যাক্সিতে বসে বসে কাস্টমার আসার জন্য দুআ করছে এবং স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। কিন্তু এভাবে বসে থাকলে তো কিছু দূরে এক কোণায় দাঁড়িয়ে থাকা কাস্টোমার তার চোখে পড়বে না। অপরদিকে, কোনো ড্রাইভার যদি পুরো শহর চক্কর দেয়, কিন্তু আল্লাহর ওপর ভরসা না করে, এতে তার সব অর্জন মূল্যহীন হয়ে পড়বে।

মুমিনকে মনে করতে হবে, বাহিরে পরিশ্রমের পর সে তার ঘরের টেবিলে যে খাবার নিয়ে আসছে, তা তার জন্য আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত রিজিকের ক্ষুদ্র একটি অংশ। যে দিনে আপনার ওপর কোনো বিপদাপদ আসেনি, আপনি সুখে দিনাতিপাত করেছেন, স্ত্রী-সন্তানদের সাথে এক ছাদের নিচে কাটিয়েছেন – এটাও রিজিক। যে পরিবেশে আপনার সন্তানরা ইলম অর্জন করে, ভালো মুসলিম হতে শেখে তা-ও রিজিক। আল্লাহ আমাদের কত কিছু দেন, সুবহানআল্লাহ। কিন্তু আমরা এ সবকিছু এড়িয়ে যাই। তিনি আমাদের ওপর যেসব পরীক্ষা চাপিয়ে দেন আমরা কেবল সেসবের ওপরই ফোকাস করি।

রিজিক কেবল শারীরিক বিষয় নয়। মানসিক, আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোও রিজিকের অন্তর্ভুক্ত। যেমন তৃপ্ত অনুভব করা, স্বস্তিতে থাকাও রিজিকের উদাহরণ। 

What do you think?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Banned Coca Cola, A Religious Demand

কোকাকোলা বর্জন ঈমানি দাবি

semiconductor chip war, China USA, the world is in danger

চিপ যুদ্ধ এবং ভূরাজনীতি; বিপর্যয়ের মুখে বিশ্ব