বুদ্ধিমত্তা নানা ধরনের হতে পারে; ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা আবেগিক বুদ্ধিমত্তা এর মধ্যে একটি। কিন্তু এই বুদ্ধিমত্তায় অধিকাংশ নারী সহজাতভাবেই অত্যন্ত দক্ষ হয়।
পুরুষদের আছে বিভিন্ন ধরণের বুদ্ধিমত্তাঃ নিজের সাপেক্ষে বিভিন্ন জিনিস বা বস্তুর অবস্থান বোঝা, বিভিন্ন জিনিস কীভাবে কাজ করে তা বোঝা, অ্যাবস্ট্রাক্ট চিন্তাভাবনা ইত্যাদি। নারীদের আছে ঠিক ভিন্ন ধরণের দক্ষতাঃ তারা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সহানুভূতি প্রদর্শন করে, সামাজিক সম্পর্ক গড়তে পারে। নারীরাই পারিবারিক বন্ধনকে ধরে রাখে। নারী না থাকলে পরিবারব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে।
মুসলিম নারীর কর্তব্য হচ্ছে তারা তাদের সহজাত আবেগিক বুদ্ধিমত্তাকে বিকশিত করবে যেন তারা মা ও স্ত্রীর ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করতে পারে। এই ভূমিকার সঠিক পালন স্বামী-সন্তানদের মধ্যে আনন্দ ও নিরাপত্তার অনুভূতি নিয়ে আসে। সামগ্রিক সুখ বৃদ্ধি করে।
এবার দেখা যাক, আবেগিক বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন মুসলিম স্ত্রীদের কি কি বৈশিষ্ট্য থাকে:
১. আত্ম–সচেতনতা
ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা আবেগিক বুদ্ধিমত্তার ভিত্তিই হচ্ছে আত্ম-সচেতনতা। ইমোশনালি ইন্টেলিজেন্ট মানুষেরা সহজেই তাদের আবেগ, মূল্যবোধ, শক্তিশালী দিক, দুর্বল দিক ইত্যাদি চিনতে পারে। তাদের আবেগ কীভাবে তাদের অনুভূতি, ভাবনা ও কাজকে প্রভাবিত করছে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করে। তারা সচেতনভাবে জীবনযাপন করে। জীবনের স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয় না। যেমন, তারা জীবনে স্ট্রেস অনুভব করলে তাদের পেশীতে টান অনুভব করে, তাদের হৃদপিণ্ড দ্রুতগতিতে চলে, মাথায় চিন্তার ঝড় বয়ে যায়। তাদের রাগ হলে তারা দ্রুত বুঝতে পারে যে তারা রেগে যাচ্ছে, তারা সাথে সাথে সমস্যাটা বুঝতে সক্ষম হয়।
আধুনিকতাবাদ নারীদেরকে তাদের সহজাত নারীত্বকে অস্বীকার করে পুরুষদের অনুকরণ করতে বলে। কিন্তু তারা বড় ভুল করছে। নারীত্ব ভীষণ সুন্দর, সমাজের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। আল্লাহ নারীদের যা দিয়েছেন তা-ই তাদের জন্য যথেষ্ট, আলহামদুলিল্লাহ।
আত্মসচেতন না হলে মানুষ জীবনে রক্ষণাত্মকভাবে চলে। জীবনে কিছু ঘটলে তার প্রতি তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া দেখায়, ভাবনাচিন্তা করে না। এর ফলে অনেক সময় তারা ওভাররিয়্যাক্ট করে বসে, অনেক সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে অন্যদের ক্ষতিও করে।
যে স্ত্রীর আত্মসচেতনতা প্রবল তিনি তার অনুভূতি, মানসিক অবস্থা এবং আবেগের প্রতি সচেতন থাকেন। তিনি তার আবেগ ও অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। স্বামীর সাথে আচরণের সময় নিজের আবেগকে প্রাধান্য পেতে দেন না। যেমন, স্ত্রীর মনমেজাজ খারাপ থাকলে তিনি স্বামীর ওপর মেজাজ খারাপ দেখান না, তিনি বোঝেন যে মন খারাপটা তার পক্ষ থেকেই আসছে। তিনি নিজের অনুভূতির ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখেন, অন্যের ওপর চাপিয়ে দেন না।
২. আবেগ নিয়ন্ত্রণ
আবেগ বোঝা, নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। ইমোশনালি ইন্টেলিজেন্ট স্ত্রী বুঝতে পারে কখন সে চাপে আছে। চাপ মোকাবেলার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেয়। যেমন, সে জিকির করে, রাসুলের ওপর দুরুদ পাঠ করে, গভীর শ্বাস নেয়, একটু থেমে নিজেকে গুছিয়ে নেয়। নিজের আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য জার্নালিং করা, অর্থাৎ কোনো ডায়েরিতে নিজের অনুভূতি লিখে রাখতে পারে। স্বামীর সাথে আলাপ-আলোচনা উত্তপ্ত হয়ে গেলে স্ত্রী থেমে যান, গভীরভাবে শ্বাস নেন, এতে তার চাপ কমে যায়। তিনি স্বামীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে পারেন, স্বামীর প্রতি ভালোবাসা-শ্রদ্ধা প্রকাশ করতে পারেন। দুজনেই শান্ত হলে তারা পুনরায় আলাপ শুরু করতে পারেন।
৩. সহমর্মিতা
সহমর্মিতা হলো আরেকজন কি অনুভব করছে তা বুঝতে পারা। সহমর্মিতা প্রদর্শনের মাধ্যমে অন্যদের সাথেও নিজেদের সম্পর্ক গাঢ় করা যায়।
যাদের সহমর্মিতা কম তারা আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর হয়। তারা কেবল নিজেদের চাহিদা-চাওয়াপাওয়ার বাইরে কিছু দেখতে পায় না। তারা মনে করে তারা বিশেষ কেউ। তারা সবসময় নিজেদের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতির মধ্যে ডুবে থাকে, তাই তারা অন্যের অনুভূতি বুঝতে পারে না বা কেয়ারও করে না।
ইমোশনালি ইন্টেলিজেন্ট স্ত্রী অন্যকে সহমর্মিতা দেখায়, বিশেষ করে স্বামী-সন্তান ও পরিবারের প্রতি। সে নিজেকে অন্যের অবস্থানে বসিয়ে পরিস্থিতি বিবেচনা করে, বোঝার চেষ্টা করে আরেকজন কিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এতে সে সহনশীল হয়, অন্যকে বোঝার মানসিকতা তৈরী হয়। ফলে সে অন্যের প্রতি নরম হয়, মানুষ তার কাছে স্বস্তি পায়।
যেমন, একদিন তার স্বামী কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরে এল রাগান্বিতভাবে। স্ত্রী স্বামীকে হাসিমুখে স্বাগত জানাল। কিন্তু স্বামী অধৈর্যভাবে স্ত্রীকে ঠেলে ঘরে ঢুকে গেল। এখন স্ত্রীর সামনে দুটো বিকল্প আছে। প্রথম বিকল্প হচ্ছেঃ স্ত্রীও স্বামীর প্রতি রেগে যেতে পারে। স্বামীর রাগকে ব্যক্তিগতভাবে নিতে পারে, স্বামীর সাথে মারামারি লাগিয়ে দিতে পারে।
দ্বিতীয় বিকল্প হলঃ তিনি অবিলম্বে স্বামীর মেজাজ খারাপ বুঝতে পারেন, বোঝেন যে স্বামী তার প্রতি রেগে নেই বরং তিনি ভিন্ন কোনো কারণে ক্ষুব্ধ। হয়তো সারাদিনের কাজের পর তিনি ক্লান্তি, অথবা চাকরিক্ষেত্রে হয়তো তার সাথে খারাপ কিছু ঘটেছে অথবা কেউ তাকে আঘাত করেছে। ফলে তিনি স্বামীর রাগকে ব্যক্তিগতভাবে নেবেন না।
সহমর্মিতাবোধের কারণেই তিনি স্বামীর অনুভূতি বুঝতে পারেন। তাই তিনি নিজের অনুভূতিকে আড়াল করেন যেন স্বামীর যন্ত্রণা দেখতে পারেন। বুঝবানের দৃষ্টিতে তিনি স্বামীর দিকে তাকান। স্বামীকে চাকুরির চাপ থেকে শিথিল হওয়ার জন্য কিছুটা স্পেস দেন। অথবা তার কাছে গিয়ে তাকে ভালোবাসার সাথে জড়িয়ে ধরেন। তিনি বুঝতে পারেন স্বামীর তখন কি দরকার। সহমর্মিতাবোধের কারণেই স্বামীর প্রয়োজন তিনি পূরণ করতে পারেন।
একজন ভালো স্বামীও স্ত্রীর এবং তার সহজাত দক্ষতার কদর করে। স্ত্রীর এই দক্ষতা পুরুষদের চেয়ে ভিন্ন। পরিবারের কল্যাণ ও শান্তির জন্য উভয় ধরণের দক্ষতাই জরুরী ও গুরত্বপূর্ণ।
وَ مِنۡ اٰیٰتِهٖۤ اَنۡ خَلَقَ لَکُمۡ مِّنۡ اَنۡفُسِکُمۡ اَزۡوَاجًا لِّتَسۡکُنُوۡۤا اِلَیۡهَا وَ جَعَلَ بَیۡنَکُمۡ مَّوَدَّۃً وَّ رَحۡمَۃً ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یَّتَفَکَّرُوۡنَ ﴿۲۱﴾
আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে। [সুরা রুমঃ ২১]
আল্লাহ তায়ালা নারীদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক বিশেষ দক্ষতা ও বিশেষ ধরনের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে। তারা পরিবারে সাকিনাহ বা প্রশান্তি এবং রহমত বয়ে আনে।
তাই নারীরা যেন তাদের সহজাত প্রজ্ঞা এবং নারীসুলভ সক্ষমতাকে পুরোপুরি জড়িয়ে ধরতে পারেন এটাই সকলের কামনা। নারীরা পুরুষদের সাথে প্রতিযোগিতা না করে একে-অপরের সহযোগী হওয়ার চেষ্টা করবে।
আধুনিকতাবাদ নারীদেরকে তাদের সহজাত নারীত্বকে অস্বীকার করে পুরুষদের অনুকরণ করতে বলে। কিন্তু তারা বড় ভুল করছে। নারীত্ব ভীষণ সুন্দর, সমাজের জন্য অতি প্রয়োজনীয়।
আল্লাহ নারীদের যা দিয়েছেন তা-ই তাদের জন্য যথেষ্ট, আলহামদুলিল্লাহ।
লেখাটি মুসলিম স্কেপটিক (Muslim Skeptic) সাইটে প্রকাশিত উম্মু খালিদ এর ইংরেজী লেখা অবলম্বনে রচিত
GIPHY App Key not set. Please check settings