in

এলজিবিটি প্রচার ও প্রসারে নেটফ্লিক্স

netflix to promote lgbt

মার্ক রেন্ডলফ রিড হেস্টিংসের সাথে নেটফ্লিক্স প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি কোম্পানির সিইও হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

নেটফ্লিক্সকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। এটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্ট্রিমিং সার্ভিস, যারা সারা পৃথিবীতে নিষ্ঠার সাথে এলজিবিটি এজেন্ডা ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে।

কিন্তু নেটফ্লিক্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রেন্ডলফের একটি ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে যা অনেকের কাছেই অজানা:

  • সিগমন্ড ফ্রয়েড তার আত্মীয়। ফ্রয়েড পশ্চিমা সাধারণ জনগণদের মধ্যে যৌনতাকে ডাল-ভাতে রূপান্তরের জন্য দায়ী।
  • তিনি এডওয়ার্ড বার্নেসের সাথেও সম্পর্কিত। বার্নেসকে প্রোপাগান্ডার জনক বলে মনে করা হয়। এমনকি ১৯২৮ সালে তার প্রকাশিত বইয়ের নামই ছিল Propaganda। বইটি গোয়েবেলস সহ অনেককে প্রভাবিত করেছিল।

রেন্ডলফের সাথে ফ্রয়েড বা বার্নেসের সম্পর্ক আছে মানেই যে সে নিজেও খারাপ হবে আমরা এমন জেনেটিক নির্ধারণীতে  বিশ্বাস করি না। কিন্তু আমরা এই লেখায় দেখব, এই দুই মহারথীর প্রভাব রেন্ডলফের ওপর কেমন ছিল।

ফ্রয়েডঃ যৌনতাই যার কাছে সব

ফ্রয়েডকে আলাদাভাবে পরিচয় করানোর কোনো প্রয়োজন নেই। খুব সহজভাবে বলতে গেলে, তিনি সবচেয়ে প্রভাবশালী আধুনিক মনোবিজ্ঞানী।

মনোবিজ্ঞানে যার বিন্দুমাত্র আগ্রহ আছে সে-ই ফ্রয়েডের নাম জানে, তার চেহারা দেখেছে। জানে, ফ্রয়েডের সব কাজের উদ্দেশ্য ছিল মানব অস্তিত্বের মূল চাবিকাঠি হিসেবে যৌনতাকে উপস্থাপন করা।

যৌনতাকে জীবনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে দেখানোটা তার শিষ্যদের অনেকেই পছন্দ করেনি। ফলে তারা ফ্রয়েডের আদর্শ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিতে থাকে। কার্ল ইউং এর মতো ভিন্ন মতাদর্শীরা যৌনতার চেয়ে আধ্যাত্মিকতাকে বেশি গুরত্ব দিয়েছিলেন। অন্যদিকে অটো রেঙ্ক দাবি করেন, জন্মের ট্রমাই মানুষের স্নায়ুরোগের মূল কারণ।

ফ্রয়েডের একটি বড় আইডিয়া ছিল অডিপাস কমপ্লেক্স। তার এই আইডিয়াটি হচ্ছে, ছেলেদের সাথে তাদের বাবার বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক থাকে (কারণ বাবা কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে থাকেন) আর একই সাথে মায়ের প্রতি তার অজাচারের আকাঙ্ক্ষা থাকে।

কিন্তু মানুষ তার এই আইডিয়া নিয়ে বিতর্ক করেছে। মালিনোস্কি দেখেছেন, কিছু সমাজে বাবার বদলে চাচারাই কর্তৃত্বের জায়গায় থাকেন। এ ছাড়া ওয়েস্টারমার্ক দেখিয়েছেন, ভাই-বোন একসাথে বেড়ে উঠলেও তারা একে-অপরের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে না।

তবে মানুষ ফ্রয়েডের মতকে মেনে না নিলেও তার মূল আইডিয়াটা বিরাজমান থাকে যেঃ সবকিছুর মূলে যৌনতা। যুক্তরাষ্ট্রে উইলহেম রেইখ নামক সাইকোঅ্যানালিস্ট ফ্রয়েডের যৌনতাকেন্দ্রিক ধারণাগুলোকে আরো জনপ্রিয় করে তোলেন। তিনি যৌনতাকে মার্কসবাদের সাথে মেশান, বলেন, মানুষকে নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার টাকার পাশাপাশি কঠোর যৌন আইন প্রণয়ন করে।

রেইখ ১৯৩৬ সালে “দ্য সেক্সুয়াল রেভোলিউশন” নামে একটি বই লেখেন। সেখানে তিনি যৌনতাসংক্রান্ত ট্রেডিশনাল বিশ্বাসের সমালোচনা করেন এবং বলেন, বাচ্চাদেরকে অবাধে তাদের যৌনতা উপভোগ করতে দিতে হবে।

ফ্রয়েডের অনুসারী রেইখ তার আইডিয়াগুলোকে চরম পর্যায়ে নিয়ে যান। উন্মুক্ত যৌনতাকে স্বাভাবিকীকরণে তার ভূমিকা নিয়ে গর্ব করেন। ১৯২৮ সালে তিনি শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের যৌন স্বাধীনতা প্রচারের জন্য একটি সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। যেহেতু সমাজে অল্প বয়সে যৌনতা ট্যাবু ছিল, তাই তারা এটাকে চ্যালেঞ্জ করেন। সবাই তার এই কাজে সম্মত না হলেও বিষয়গুলোকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার ভিত্তি তৈরি করে দেয়।

রেইখের দৃষ্টিভঙ্গি এতটাই চরমপন্থি ছিল যে তিনি ফ্রয়েড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান, কারণ ফ্রয়েডকে তখন তার রক্ষণশীল মনে হচ্ছিল। তা সত্ত্বেও, ফ্রয়েডের প্রভাব অব্যাহত থাকে। তার প্রভাব শুধু ব্যক্তিকে সীমাবদ্ধ না থেকে সমাজকেও প্রভাবিত করতে শুরু করে।

ইরানী বুদ্ধিজীবী আলি শারিয়াতি তুলে ধরেন, ফ্রয়েডের ধারণাগুলো কীভাবে উদার-পুঁজিবাদী বিশ্বদর্শনের সাথে খাপ খায়। তিনি বলেন, বুর্জোয়া যুগে ফ্রয়েডীয় ধারণাগুলো প্রাধান্য পায়। ফলে মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে। মানুষকে দেখা হচ্ছিল শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দিক দিয়ে, মানবতা মানেই যেন অতৃপ্ত যৌন আকাঙ্ক্ষা।

মুসলিম দেশগুলোতে সরাসরি এলজিবিটি প্রচারে গেলে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু সমীকরণ পাল্টে যায় যখন একই আইডিয়া নেটফ্লিক্স অরিজিনাল টিভি শো-এর নামে সাজায় এবং এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যেন দর্শকরা চরিত্রের সাথে মিশে যায়। এ আই জেনারেটেড ছবির ক্রেডিট: লেখক

ফ্রয়েডের প্রভাব শিল্প, বিশেষ করে সিনেমায় ছড়িয়ে পড়ে। সিনেমার মূল থিম হয়ে দাঁড়ায় যৌনতা। শরিয়তি উল্লেখ করেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রয়েডের দৃষ্টিভঙ্গি ডানা মেলতে শুরু করে এবং পরবর্তীতে পশ্চিমা শিল্পের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়। হয়তো অনিচ্ছাকৃতভাবেই পুঁজিবাদকে পালতে শুরু করে ফ্রয়েডতত্ত্ব। এই সম্পর্ক নেটফ্লিক্সের মতো প্ল্যাটফর্মে দেখা যাচ্ছে, যারা যৌনতাকে তাদের এজেন্ডা হিসেবে ব্যবহার করছে। যেন পুরো বিশ্বকে কওমে লুতের দুনিয়ায় পরিণত করা যায়।

বার্নেইসঃ প্রোপাগান্ডার জনক

ফ্রয়েডের ভাগ্নে বার্নেইস। বার্নেইসকে রেন্ডলফ উল্লেখ করেছেন “পাবলিক রিলেশন”-এর জনক হিসেবে। কিন্তু তিনি আসলে ছিলেন প্রোপাগান্ডার জনক।

চাচা ফ্রয়েডের তত্ত্ব থেকে প্রভাবিত হয়ে বার্নেইস প্রোপাগান্ডার জগতে বিপ্লব ঘটান। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রোপাগান্ডাকে নেতিবাচক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল, তাই তিনি এর নাম দেন “পাবলিক রিলেশন”। যুদ্ধে প্রোপাগান্ডার কার্যকারিতা দেখে বার্নেইস চিন্তা করেন, শান্তির সময়েও প্রোপাগান্ডাকে কাজে লাগানো যায় কী না। নতুন এক পরিভাষার জন্ম হয় “ইঞ্জিনিয়ারং কনসেন্ট” – অর্থাৎ মানুষের ভেতর কোনো বিষয়ের ব্যাপারে সম্মতি সৃষ্টি করা। মানুষের অবচেতন মনকে নিয়ন্ত্রণ করে তাদের দিয়ে নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করে নেওয়া।

তার সবচেয়ে পরিচিত বিজ্ঞাপন ক্যাম্পেইন হলো নারীদের ধূমপান করতে উদ্বুদ্ধ করা। অথচ তিনি নিজের পরিবারকেই ধূমপান করতে দিতেন না। এই হলো মুনাফিকের চরিত্র। স্টিভ জবসকেও একই অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তিনিও তার সন্তানদের “অত্যাধুনিক প্রযুক্তির” ব্যবহার থেকে দূরে রাখতেন।

বার্নেইসের প্রভাব শুধুমাত্র বিজ্ঞাপনেই সীমাবদ্ধ ছিল না। রাজনৈতিক ন্যারেটিভ নির্মাণেও সমানতালে ভূমিকা রেখেছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ারকে কমিউনিজমভীতিকে কাজে লাগিয়ে আমেরিকানদের ব্যয় বৃদ্ধি করতে উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯৩৯ সালে নিউ ইয়র্ক ওয়ার্ল্ড ফেয়ারে তার অংশগ্রহণে তিনি দেখান, তিনি গণতন্ত্র ও পুঁজিবাদকে সংযুক্ত করার ক্ষমতা রাখেন। এই বিষয়টি মানুষকে এক ইউটোপিয়ান ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়েছিল।

ফ্রয়েডীয় ধারণা থেকে বার্নেইস নিজে আইডিয়া নেন, আর তার কৌশলগুলো লিবারেল পুঁজিবাদের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে ওঠে। তিনি সমাজকে ভোগবাদী সমাজে পরিণত করেন। আর এই বিষয়টির চাক্ষুষ প্রমাণ আমরা অ্যাপলের একেকটি পণ্য বের হওয়ার সময় দেখতে পাই। নতুন আইফোন বের হলেই সেটা কেনার জন্য মানুষ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। এই পরিবর্তন থেকে বোঝা যায়, বার্নেইস কেবল পণ্যই বিক্রি করেননি বরং পুঁজিবাদকে প্রচার ও টিকিয়ে রাখতে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

ফ্রয়েডের মতো পাঠক এখানেও বার্নেইস ও নেটফ্লিক্সের মধ্যেকার কানেকশন সহজেই ধরতে পারছেন। বার্নেইসের মতো নেটফ্লিক্সও মানুষের মস্তিষ্কের যৌন অংশটিকে উসকে দিয়ে, যৌনতাকে প্রচার করে তারা তাদের কাওমে লুত এজেন্ডাকে বাস্তবায়িত করতে চায়।

বাংলাদেশ, পাকিস্তান কিংবা সৌদি আরবের মতো “সংরক্ষণশীল” দেশে যদি সরাসরি এলজিবিটি প্রচারের কথা বলা হয় তাহলে তাদের গোমর ফাঁস হয়ে যাবে, উদ্দেশ্য প্রকাশ হয়ে যাবে।

কিন্তু যখনই সেই একই আইডিয়া নেটফ্লিক্স অরিজিনাল টিভি শো-এর নামে উপস্থাপন করা হয় তখন পুরো সমীকরণ পালটে যায়। সিনেমা বা টিভি শো-এর চরিত্রগুলোকে এমনভাবে সাজানো হয়, এমনভাবে আবেগিকভাবে উপস্থাপন করা হয় যে স্বাভাবিক দর্শকও যেন চরিত্রের সাথে নিজে মিশে যান।

আজকের মার্ক রেন্ডলফ হয়ে ওঠার পেছনে ফ্রয়েড ও বার্নেইস উভয়েরই ভূমিকা আছে। হয়তো বা এই পুরো ব্যাপারটিই অযাচিত ব্যাপার। কিন্তু নেটফ্লিক্সের কওমে লুত প্রোপাগান্ডায় বিষয়টি তো জ্বলজ্বল করেই ফুটে উঠছে।

What do you think?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

ইলম অর্জন

ইলম অর্জনে অলসতা কখনো সফলতা আনতে পারে না

Dajjal's Fitnah and Sura Kahf

দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার দোয়া: সূরা কাহাফের দশ আয়াত