in

দুআ একটি ইবাদত, মুমিনের হাতিয়ার

দুআ একটি ইবাদত

দুআ মুমিনের হাতিয়ার। দুআ এবং আল্লাহর কাছে থেকে নিরাপত্তা কামনা করা হাতিয়ারের মতোই। কিন্তু একটা অস্ত্র কতটা কার্যকরী হবে তা নির্ভর করে অস্ত্রটি কতটা ধারালো এবং যিনি অস্ত্রটি চালাচ্ছেন তার দক্ষতার ওপর। তেমনি ব্যক্তির সঠিকভাবে দুআ করার মধ্যেই নিহিত রয়েছে দুআ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা।

আলি রা. থেকে বর্ণিত আছে যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

দুআ হলো মুমিনের হাতিয়ার, দীনের ভিত্তি এবং আসমান-জমিনের নুর।

যখনই মুমিন কোনো বিপদে পড়ে সে আল্লাহর কাছে দুআ করে। যখন সে কারো জুলুম বা নির্যাতনের শিকার হয় সে আল্লাহর কাছে দুআ করে। আর্থিক অনটন বা অভাবে পড়লে আল্লাহর কাছে দুআ করে। যখন কোনো কিছু পাওয়ার ইচ্ছা তার মনে তীব্র হয়, সে আল্লাহর কাছে দুআ করে। 

দুআ হলো একটি ইবাদত। সুনানু তিরমিজিতে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ ‏

দুআই হলো ইবাদত। [সুনানুত তিরমিজিঃ ৩৩৭২]

মুমিনের বৈশিষ্ট্যই হলো, সে আল্লাহর দরবারে বেশী বেশী দুআ করবে। ছোট থেকে ছোট ব্যাপারেও আল্লাহর কাছে দুআ করতে হবে। জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলেও আল্লাহর কাছে সেটার ব্যাপারে দুআ করুন। আমাদের রব মহান আল্লাহ তার কাছে কিছু চাইলে ভীষণ আনন্দিত হন, আর না চাইলে ক্রোধান্বিত হন। সুনানু তিরমিজিতে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

مَنْ لَمْ يَسْأَلِ اللَّهَ يَغْضَبْ عَلَيْهِ

যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে চায় না, আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত হন। [সুনানুত তিরমিজিঃ ৩৩৭৩]

অনেকেই দুআ করার সময় দুআর নিয়ম ও আদবের প্রতি খেয়াল রাখেন না। ফলে দুআর উপকার ও ফজিলত থেকে তারা বঞ্চিত হন। তাই আজ আমরা এ বিষয়ে সংক্ষেপে কিছু কথা বলব ইনশাআল্লাহ।

দুআ একটি ইবাদত। আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে দুআ করা যাবে না। কোনো পীর, ওলি, মাজার কিংবা দরগাহ থেকে কিছু চাওয়া শিরক। দুআ হবে শুধুমাত্র আল্লাহর কাছে। দুআর শুরুতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের হামদ ও প্রশংসা করতে হবে। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পাঠ করে নিজের মনের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টিজগতের রবের কাছে ব্যক্ত করতে হবে।

সুনানুত তিরমিজিতে ফাজালাহ ইবনু উবাইদ রা. হতে বর্ণিত,

قَالَ بَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَاعِدًا إِذْ دَخَلَ رَجُلٌ فَصَلَّى فَقَالَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهَ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ عَجِلْتَ أَيُّهَا الْمُصَلِّي إِذَا صَلَّيْتَ فَقَعَدْتَ فَاحْمَدِ اللَّهَ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ وَصَلِّ عَلَىَّ ثُمَّ ادْعُهُ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ ثُمَّ صَلَّى رَجُلٌ آخَرُ بَعْدَ ذَلِكَ فَحَمِدَ اللَّهَ وَصَلَّى عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ أَيُّهَا الْمُصَلِّي ادْعُ تُجَبْ ‏

একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মসজিদে) বসা অবস্থায় ছিলেন। সে সময় জনৈক লোক মসজিদে প্রবেশ করে সালাত আদায় করল, তারপর বলল, “হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও এবং আমার প্রতি দয়া কর।” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “হে সালাত আদায়কারী! তুমি তো তড়িঘড়ি করলে। যখন তুমি সালাত শেষ করে বসবে সে সময় শুরুতে আল্লাহ তাআলার যথোপযুক্ত প্রশংসা করবে এবং আমার উপর দরূদ ও সালাম প্রেরণ করবে, তারপর আল্লাহ তাআলার নিকটে দু’আ করবে।”

এরপর অপর লোক এসে সালাত আদায় করে প্রথমে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করল, তারপর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদ ও সালাম পেশ করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ “হে সালাত আদায়কারী! এবার দুআ করো কবুল করা হবে।” [সুনানুত তিরমিজিঃ ৩৪৭৬]

দুআয় দরুদ শরিফ পড়ার বিষয়টি খুবই গুরত্বপূর্ণ। আল মুজামুল আওসাতে বর্ণিত একটি সহিহ হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর ওপর দরুদ পড়া পর্যন্ত সকল দুআ আটকে দেওয়া হয়।

সহিহ মুসলিমে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বদরের দিন কিবলামুখী হয়ে হাত তুলে দুআ করেছিলেন। ইমাম নববি রাহ. শরহে মুসলিমে বলেন, দুআর সময়ে কিবলামুখী হওয়া ও হাত তুলে দুআ করা মুস্তাহাব। সুনানু আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

‏ إِنَّ رَبَّكُمْ تَبَارَكَ وَتَعَالَى حَيِيٌّ كَرِيمٌ يَسْتَحْيِي مِنْ عَبْدِهِ إِذَا رَفَعَ يَدَيْهِ إِلَيْهِ أَنْ يَرُدَّهُمَا صِفْرًا

নিশ্চয় তোমাদের রব চিরঞ্জীব ও মহান দাতা। বান্দা দু’ হাত তুলে তাঁর নিকট চাইলে তিনি খালি হাত ফেরত দিতে লজ্জবোধ করেন। [সুনানু আবু দাউদঃ ১৪৮৮]

আল্লাহর দরবারে দুআ করতে হবে অত্যন্ত বিনয়নম্র হয়ে। তার কাছে কাকুতিমিনতি করতে হবে। আল্লাহ কুরআনে বলেন,

اُدۡعُوۡا رَبَّکُمۡ تَضَرُّعًا وَّ خُفۡیَۃً ؕ اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الۡمُعۡتَدِیۡنَ ﴿ۚ۵۵﴾

তোমরা তোমাদের রবকে ডাক অনুনয় বিনয় করে ও চুপিসারে। নিশ্চয় তিনি পছন্দ করেন না সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে। [সুরা আরাফঃ ৫৫]

মনোযোগ সহকারে, দৃঢ়তার সাথে ইখলাসপূর্ণ দিলে আল্লাহর কাছে দুআ করতে হবে। দুআ কবুল হওয়ার ব্যাপারে পূর্ণ আস্থা থাকতে হবে। দুআ করার সময় মোটেও অন্যমনস্ক হওয়া যাবে না, অবহেলাভরে আল্লাহর কাছে দুআ করা যাবে না। সুনানুত তিরমিজিতে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

ادْعُوا اللَّهَ وَأَنْتُمْ مُوقِنُونَ بِالإِجَابَةِ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ لاَ يَسْتَجِيبُ دُعَاءً مِنْ قَلْبٍ غَافِلٍ لاَهٍ

তোমরা কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ কর। তোমরা জেনে রাখ যে, আল্লাহ তাআলা নিশ্চয় অমনোযোগী ও অসাড় মনের দুআ কবুল করেন না। [সুনানুত তিরমিজিঃ ৩৪৭৯] আমরা অধিকাংশ সময় মন দিয়ে দুআ করি না। দুআ করার সময় কেমন যেন উদাসীন থাকি। ফলে আমাদের অধিকাংশ দুআ আল্লাহর কাছে কবুলও হয় না। দুআর সময় কেবল নিজেদের জন্যই দুআ করব না, বরং পুরো মুসলিম উম্মাহকে আমরা দুআর মধ্যে শামিল করব। তাদের সুন্দর জীবন, সফলতা ও দুনিয়া-আখিরাতে কামিয়াবি কামনা করব। আল্লাহ আমাদের সকলের মনের আকাঙ্ক্ষাগুলো কবুল করে নিন। আমিন।

What do you think?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

ইসলামে দুশ্চিন্তা কমানোর উপায়

দুশ্চিন্তা করবেন না, আল্লাহ জানেন

are you cheating yourself

আপনি কি নিজের সাথে প্রতারণা করছেন?