“প্রতিবেশি দুই দেশ ইরান ও তুরস্ক। তুরস্কের আকাশে মেঘের ঘনঘটা আর ইরানে নেই মেঘের ছিটেফোটাও। পাশাপাশি দুই দেশে জলবায়ুর ধরনে কেন এত পার্থক্য এ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা কল্পনা। কেউ কেউ বলছেন উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ইরান থেকে মেঘ চুরি করছে তুরস্ক। ঘটনা অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে তেহরান।”
এটা চ্যানেল ২৪ এর ১৫ জানুয়ারীর একটি খবরের অংশ। এটা এ পর্যন্তই থাক। ফিরে যাব এ্যা রাফ গাইড টু হেল এ। তবে কাভারের সবকিছু নয়। শুধু জলবায়ু পরিবর্তন অংশটুকু।
জলবায়ু পরিবর্তন কি দ্যা ক্লাব অফ রোমের (THE CLUB OF ROME) তৈরি করা একটি কৃত্তিম সংকট? বছরের পর বছর ধরে যা হচ্ছেনা তাই কি বারবার বলে আসা হচ্ছে? এনজিও ফান্ডিং, মিডিয়া, সুশিল সমাজ ইত্যাদির মাধ্যমে এই ক্লাইমেট চেঞ্জ শব্দকে আমাদের কানে গেঁথে দেয়া হয়েছে। আসলেই কি প্রকৃতির ধারন ক্ষমতা এতটাই ঠুনকো, নাকি বাড়িয়ে বলা হয়েছে সুদূরপ্রসারী কোন লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে? আর যে ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে সেটাও কৃত্তিমভাবে তৈরি করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত?
এ্যা রাফ গাইড টু হেল
সম্ভবত ২০২২ সালে এসে ২০১২ সালে প্রকাশিত এ্যা রাফ গাইড টু হেল শিরোনামে দ্যা ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিনের কাভার সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে। কাভার ডিজাইনের দিকে চোখ বুলালেই এর কারন বুঝা যায়। এখনকার বড় বড় ঘটনাগুলো ঠিক যেন সেই কাভার ডিজাইনের প্রতিচ্ছবি।
নিচের ছবিটি দেখুন এবং প্রথমেই এটিকে দুটা দলে ভাগ করে নেয়া যাক। একটা দলে দুই শিংওয়ালা এবং অন্যরা শিংছাড়া। পরিস্কার ম্যাসেজ- শিংওয়ালারা হলো লুসিফার বা ইবলিশের অনুসারী। শিংছাড়াদের মধ্যে আবার দুই ভাগ করা যায় যেমন একপক্ষের হাস্যজ্জল মুখ এবং অপর আরেক পক্ষ উত্তপ্ত আগুনে ডুবে আছে। শিংওয়ালাদের দুটি কমন বৈশিষ্ট্য খেয়াল করুন। প্রত্যেকের দুটো শিং এবং পিছনে একটি লেজ।
শিংওয়ালাদের সর্দারকে নিশ্চয় চিনতে দেরি হওয়ার কথা নয়। হ্যা স্ক্রিপ্ট হাতে দারিয়ে ডিরেকশন দেওয়া লোকটিই সর্দার। তার ঠিক পাশেই “CLIMATE CHANGE” লেখাযুক্ত একটি যন্ত্র। এই একটি চিত্রই বুঝার জন্য যথেষ্ট নয় কি যে, শিংওয়ালাদের যত অস্ত্র আছে তার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র।
আগেই উল্লেখ করেছি, এটি ২০১২ সালের হলেও বর্তমান সময়ে প্রচণ্ডভাবে প্রাসঙ্গিক। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ঠিক এই মূহুর্তে আমরা কাভারে চিত্রিত পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হওয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া তাদের কাজের কৌশলই এমন। দীর্ঘদিন ধরে একটা বিষয়ের পরিকল্পনা করে মাঠে নামে। এটাকে ঠিকভাবে ডিকোড করে উপস্থাপন করা হলে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বহুরকমের সাপ বের হয়ে আসবে। কাজেই সুবোধরা দেখেও না দেখার ভান করে কেটে পরবে। অথবা কেন এটাকে ডিকোড করতে হবে এই ক্রোধে বিধ্বস্ত হবে। যদিও স্ক্রিপ্ট রচনাকারী মূল শিংওয়ালাদের এতে কিছুই যায় আসে না। তারা এখন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চূড়ান্ত পর্যায়ে। কে কি লিখল, দুটা ভিডিও বানালো, বই বের করল এসবে তাদের কিছু যায় আসে না।

শিংওয়ালাদের সর্দারকে নিশ্চয় চিনতে দেরি হওয়ার কথা নয়। হ্যা স্ক্রিপ্ট হাতে দারিয়ে ডিরেকশন দেওয়া লোকটিই সর্দার। তার ঠিক পাশেই ক্লাইমেট চেঞ্জ লেখাযুক্ত একটি যন্ত্র। এই একটি চিত্রই বুঝার জন্য যথেষ্ট নয় কি যে, শিংওয়ালাদের যত অস্ত্র আছে তার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র।
প্রেডিক্টিভ প্রোগ্রামিং
এখন প্রশ্ন হতে পারে এরকম কার্টুন দিয়ে কতকিছুই না বুঝানো হয়, বাঙ্গ করা হয়। এটাকে এতো সিরিয়াসলি নেয়ার কোন মানে হয় না। এসব বিশ্বাস করারও কোন মানে নাই। না। তাহলে এসব মিডিয়া সম্পর্কে আগে ধারনা থাকতে হবে। এসব কাভার ডিজাইনের ধারাবাহিক ইতিহাস এবং পিছনের রহস্য জানতে হবে। প্রেডিক্টিভ প্রোগ্রামিং বুঝতে হবে। এসব প্রারম্ভিক বিষয় তুলে ধরতে গেলে লেখা লম্বা হবে ও প্রাসঙ্গিকতা হারাবে। তাই সংক্ষেপে কিছু বিষয় উল্লেখ করছি। দ্যা ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিনের এধরনের কাভার ডিজাইন মূলত সুদূর ভবিষ্যতের নানা দিককে ঈঙ্গিত করে তৈরি হয়। কাজটি অত্যন্ত ক্রিটিক্যাল। তীক্ষ্য বিশ্লেষণের পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো প্রেডিক্টিভ প্রোগ্রামিং।
প্রেডিক্টিভ প্রোগ্রামিং হলো এক ধরনের পরিকল্পনা যা সম্পাদনের বহু আগে ডিজাইন করা হয়ে থাকে। হেরফের হয়না তা না। কিন্তু টার্গেট অত্যন্ত সুক্ষ। এই পরিকল্পনাগুলোকেই নানা পরিবেশনায় প্রকাশ করা হয়। কাজটি তাদের কাছে একটি পরিস্থিতি স্বাভাবিকীকরণ (নর্মালাইজেশন) পক্রিয়ার অংশ এবং একই সাথে এটা মাইন্ড কন্ট্রোল প্রোগ্রাম হিসেবে কাজ করে। যারা এখনও এ সম্পর্কে জানেনা তাদের জন্য ইংরেজীতে ২টা সংজ্ঞা হুবুহু কপি-পেস্ট করে দিলাম।
- Predictive programming is not a scientific theory, but a notion developed by contrarians and conspiracists who believe that the world is run by a totalitarian government of “lizard people”, or a powerful evil agency that fakes large-scale events to manipulate people’s opinions and further increase their dominance.
- There are many mind control tactics powerful people use to manipulate us. Predictive programming is one such tactic. It is also can be a proof that something was preplanned. It can also be a way of showing strength… see we can tell the world we are going to do this and no one can stop us.
এসব প্রেডিক্টিভ প্রোগ্রামিংকে ম্যাগাজিনের কাভার, মিউজিক ভিডিও, মুভি, রেসলিং গেইম, সিম্পসন কার্টুনসহ বড় বড় ইভেন্ট ইত্যাদির মাধ্যমে বিভিন্ন সাংকেতিক ভাষায় প্রকাশ করা হয়। এটা তাদের কাজের একটা বৈশিষ্ট্য ও কৌশল। তবে আবার এটা ধরে নেয়ার কোন কারন নাই যে, বড় বড় সব ঘটনাই তাদের সাজানো এবং প্রেডিক্টিভ প্রোগ্রামিং করা হয়। এসব প্রোগ্রামারদের অনেক উর্ধ্বে একজন প্রেগ্রামার আছেন যিনি পরিকল্পনাকারীদের নিয়েও উত্তম পরিকল্পনা করেন।
জলবায়ু পরিবর্তন তহবিল
জলবায়ু পরিবর্তন এবং এ সংক্রান্ত তহবিল গঠন প্রসঙ্গে স্রোতের বিপরীতে তিনটি সাক্ষাৎকার বিষয়ে নিচে উল্লেখ করব যার মাধ্যমে এই এজেন্ডা সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝা যাবে এবং সত্য অনুসন্ধানে চিন্তার খোরাক জোগাবে।

আমি হয়ত আপনাদের হতাশ করতে পারি, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত গ্রেটা থুনবারর্গের বক্তৃতা নিয়ে আমি সবার মত উৎসাহিত নয়। আপনারা জানেন যে, বিশ্বের বড় বড় সমস্যাগুলোতে তরুণ প্রজন্মরা এগিয়ে আসে। পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যার ক্ষেত্রেও এটা ঘটেছে এবং এটাকে সাধুবাদ। আমাদের উচিত তাদেরকে সহায়তা করা। কিন্তু যখন কেউ শিশু-কিশোরদের নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগায় তখন সে বিষয়টি আর প্রশংসার থাকে না, কেবল নিন্দা করা যায়। এটা খুবই জঘন্য যখন কেউ তহবিল সংগ্রহের উপায় হিসেবে এটি করে। – ভ্লাদিমির পুতিন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট
২০১৯ সালে ১৬ বছর বয়সী ক্লাইমেট আক্টিভিস্ট গ্রেটা থুনবারর্গের প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এসব কথা বলেন। ভিডিওটি দেখতে এই লিংকে ক্লিক করুন।
সবশেষ দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক কপ-২৮ সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের উপর গুরুত্বারোপ করা হয় কিন্তু শেষ হয় হতাশা দিয়ে। জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো জানে যে তাদের বারোটা বাজানোর জন্য এ আয়োজন। তবে ক্ষয়ক্ষতির তহবিল গঠন করা গেছে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে এই একটি চাকা সবসময় সচল থাকে। তা হলো তহবিল গঠন। এত তহবিল কোথায় যায়?

জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আমরা যে বিপদের সম্মুখিন তার কোন বাস্তবতা নেই। যুক্তরাষ্ট্রে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে পরিকল্পিতভাবে যে প্রচার প্রচারনা করা হয়েছে তা ক্রমশ জলবায়ু পরিবর্তনে নেয়া ঐক্যবন্ধ গতিকে উল্টো আঘাত করে যাচ্ছে এবং মিথ্যাকে সত্যরূপে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে কোটি কোটি ডলারের জালিয়াতির মুখে সমর্থকদের দ্বারা ভয় ভীতি প্রদানের মাধ্যমে, কল্পিত “টকিং পয়েন্ট”, অযৌক্তিক এবং সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক প্রস্তাবনার মাধ্যমে, চাকরি হারানো এবং ট্যাক্স সম্পর্কে মিথ্যা হুমকি প্রদানের মাধ্যমে। – জন কেরি, মার্কিন রাজনীতিবিদ ও ৬৮তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী
২০১২ সালে জন কেরির দেয়া বক্তব্য পড়তে ও ভিডিও দেখতে পারেন এই লিংক থেকে।
সম্প্রতি দক্ষিণ আমেরিকার গরিব দেশ গায়ানায় প্রচুর তেল পাওয়া গেছে। বিবিসি এই দেশটির প্রেসিডেন্ট ইরফান আলিকে প্রশ্ন করেন, দেড়শ বিলিয়ন ডলারের তেল পোড়ালে যে দুই বিলিয়ন টন কার্বন বাতাসে ছড়াবে তার দায় কে নিবে? জবাবে প্রেসিডেন্ট বলেন গায়ানার চিরহরিতে জঙ্গল আছে গোটা ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের চেয়ে বড় আয়তনের যা বছরের ২.৯ গিগাটন কার্বন হজম করতে পারে। এ সময় বিবিসির সাংবাদিক বাধা দিতে চাইলে প্রেসিডেন্ট বলেন “জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আপনার লেকচার আমি শুনব না। আমার লেকচার আপনারা শুনবেন। আমরা বন বাঁচায় আর সুবিধা ভোগ করবেন আপনারা? নিজেরাতো সব কেটেকুটে ছাপ করে ফেলেছেন। পৃথিবী ধ্বংস করে ফেলেছেন। কৈ একটা টাকা দিয়েছেন আমাদের বন রক্ষার জন্য? গত পঞ্চাশ বছরে পৃথিবীর ৬৫ ভাগ জীব বৈচিত্র ধ্বংস করা হয়েছে। আমাদের জীব বৈচিত্র ঠিক রেখেছি। কোন মূল্য দিয়েছেন তার? আমরা যদি আমাদের সমস্ত তেল উত্তোলন করি তাতেও কার্বন নির্সরন নেট জিরো থাকবে। কিন্তু উন্নত বিশ্ব কি করেছে? এ সময় বিবিসির সাংবাদিক আবারও বাধা দিতে চাইলে প্রেসিডেন্ট বলেন আগে আমি কথা শেষ করব তারপর প্রশ্ন। তিনি বলেন, তোমরা ভন্ডামি করছ, তোমরা একটি গোষ্ঠির হয়ে কাজ করছ। এই গোষ্ঠি পরিবেশ ধ্বংস করছে। তোমরা সেই গোষ্ঠির সিস্টেমেরই অংশ। তোমরা সবাই ভন্ড।
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে গায়ানার প্রেসিডেন্ট ইরফান আলি বিবিসির সাংবাদিককে বলেন, তোমরা ভন্ডামি করছ, তোমরা একটি গোষ্ঠির হয়ে কাজ করছ। এই গোষ্ঠি পরিবেশ ধ্বংস করছে। তোমরা সেই গোষ্ঠির সিস্টেমেরই অংশ। তোমরা সবাই ভন্ড।
দাবানল
পরিবেশ বিপর্যয়ের আরেকটি দিক দাবানল যার ভয়াবহ রূপ ২০২৩ সালে প্রত্যক্ষ করে বিশ্ব। গতবছর বহু অঞ্চলে এই দাবানলের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে কানাডায় হয় সবচেয়ে বেশি। CAMS (Copernicus Atmosphere Monitoring Service) -এর তথ্য অনুসারে, এ বছরে বিশ্বব্যাপী দাবানলে প্রায় ২১৭০ মেগাটন কার্বন নির্গমন হয়, যার মধ্যে কানাডিয়ান দাবানল ২২% ছিল।
বৈশ্বিক উষ্ণতা, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সর্বোপরি জলবায়ু পরিবর্তনকে দাবানলের একটি কারন হিসেবে বলা হয়ে থাকে।
আগস্ট ২০২৩ এ আমেরিকার হাওয়ায় দ্বীপের ভয়াবহ দাবানলের খবর নিশ্চয় অনেকে দেখেছেন। ব্রিটানিকার তথ্য অনুযায়ী এখনও এর সঠিক কারন সম্পর্কে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। সে যাই হোক, এসব প্রকৃত কারন বেশিরভাগ সময় অনুদঘাটিত থেকে যায়। কিন্তু কাকতালীয়ভাবে ডিসেম্বরে এসে এখানে ফেসবুক মেটা সিইও মার্ক জাকারবার্গ ১০০ বিলিয়ন ডলারের আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যাঙ্কার তৈরির ঘোষণা দেন। এটিকে তার অত্যন্ত সেকরেট এ্যাপোকালিপস বা ডুমসডে বাঙ্কার বলা হচ্ছে। আবার বলছি এটিকে বলা হচ্ছে “ডুমসডে বাঙ্কার”। মানে কি! ভিন্ন প্রসঙ্গ। ভিন্ন কোন লেখায় বিস্তারিত আলোচনা করা যেতে পারে।
ওয়েদার মডিফিকেশন ও কন্সপাইরেসি থিওরি
ওয়েদার মডিফিকেশন বা আবহাওয়া পরিবর্তন কি? এটি কি একটি কন্সপাইরেসি থিওরি বা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব? ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তি যার মাধ্যমে কৃত্তিম উপায়ে বৃষ্টিপাত ঘটানো হচ্ছে, এটি এখন প্রমাণিত সত্য। এটিই ওয়েদার মডিফিকেশন প্রোগ্রামের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। অতএব ওয়েদার মডিফিকেশন কোন কন্সপাইরেসি থিওরি না। এই প্রোগ্রামের আওতায় আরো অনেক কিছু আছে যা আলোচনার বাহিরে থাকে। সেটা না হলে ওয়েদার মডিফিকেশন নিয়ে এত গবেষণা ও ইনভেস্ট হতো না। হার্প প্রযুক্তি যার মাধ্যমে কৃত্তিমভাবে সুনামি এবং ভূমিকম্প ঘটানো যায় বলে মনে করা হয়। এই সবই কি কন্সপাইরেসি থিউরি? নাকি সত্যতা আছে? নিচের ভিডিওটি দেখুন। সিমপসন কার্টুন কারা বানায় কেন বানায় তা নিয়ে অনেক তথ্য ইন্টারনেট সার্চ করে পাবেন।
কমনওলেথ গেমস ২০২২ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে “বাল (Baal)” নামে যে দুই শিংওয়ালাকে আলিঙ্গন করা হয়েছিল সেও ছিল ঝড়-তুফান ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেবতা। সেপ্টেম্বর ২০২২ এ ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে রাজা তৃতীয় চার্লস হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজমুকুট পরেন। এই অভিষেক অনুষ্ঠানে দুই শিংওয়ালার একটি সংক্ষিপ্ত ফুটেজ অনেকের চোখ এরিয়ে গেলেও কিছু মানুষের চোখ আটকে যায়। যে ফুটেজটি বিবিসি’র লাইভ ক্যামেরায় উঠে আসে। প্রাচীন এই দেবতার সাথে জলবায়ু পরিবর্তন, ওয়েদার মডিফিকেশন প্রোগ্রাম, CERN (European Council for Nuclear Research) -এর বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজের সাথেও সম্পর্কিত বলে কন্সপাইরেসি থিওরির গন্ধ থাকলেও এটি একটি দীর্ঘ আলোচনা যা এই লেখায় না উল্লেখ করাই ভালো।
আজকে মেঘ চুরির অভিযোগে তেহরান তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কাল ভূমিকম্পের জন্য পরশু সুনামির জন্যও কি এরকম অভিযোগ আসবে? আগামীতে কোন দেশে বৃষ্টি হবে কোন দেশে খড়া হবে, দুর্ভিক্ষ হবে এসব কিছু কি কৃত্তিমভাবে নিয়ন্ত্রীত হবে?
ওয়েদার মেইড টু অর্ডার
১৯৫৪ সালে “ওয়েদার মেইড টু অর্ডার (Weather Made to Order) নামে একটি বইয়ে ওয়েদার মডিফিকেশন প্রোগ্রাম সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা পাওয়া যায়। সে সময়েই বলা হয় “Within 40 years, a top expert says, we may break up tornadoes and produce rain or snow virtually at will” অর্থাৎ হিসাব অনুযায়ী ১৯৯০ সালের পর মানুষ তার ইচ্ছামত টর্নেডো, বৃষ্টিপাত বা তুষারপাত ঘটাতে পারবে বলে একজন শীর্ষ বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়েছিলেন। একই রেফারেন্স অনুযায়ী ১৯৫৩ সালে আমেরিকার টেক্সাসে ওয়েদার মডিফিকেশন প্রোগ্রামের সফল পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ করা হয়।
আবহাওয়াকে যুদ্ধের একটি অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা যাবে, কৃত্তিমভাবে ঝড়-তুফান তৈরির মাধ্যমে প্রতিপক্ষের কৌশলগত পরিস্থিতি বদলে তাদের ধ্বংস করা যাবে। কৃত্তিম বৃষ্টির মাধ্যমে শত্রুকে প্লাবিত করা ও কোন মিলিটারী আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে। এমন কি কৃত্তিম উপায়ে বৃষ্টি আটকানোর মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটানোও সম্ভব হবে বলে বইটিতে উল্লেখ করা হয়।

বইটির লেখক আমেরিকান নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন হাওয়ার্ড টি. অরভাইল ছিলেন তৎকালিন প্রেসিডেন্ট ডুইট আইজেনহাওয়ার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ওয়েদার কন্ট্রোল প্রোগ্রামের উপদেষ্টা কমিটির চেয়্যারম্যান। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও একজন আবহাওয়া উপদেষ্টা এবং ইউএস ফ্লিটের কমান্ডার ইন চিফ এবং নৌ অভিযানের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বইটি প্রকাশের ৫৮ বছর পর ব্রিটিশ ম্যাগাজিন দ্যা ইকনোমিস্টের কাভার ডিজাইনে পরিষ্কারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয় যে ক্লাইমেট চেইঞ্জ একটি অন্যতম ডেমোনিক এজেন্ডা যার অন্তরালে কৃত্তিমভাবে বৃষ্টিপাত, খড়া, টর্নেডো, তুষারপাত ইত্যাদি ঘটিয়ে লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা হবে। অর্থাৎ ক্লাইমেট চেইঞ্জ এজেন্ডার আড়ালে ক্লাউড সিডিং, হার্প ইত্যাদি প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের মিলিটারি এজেন্ডা এবং ভূরাজনৈতিক লক্ষ্য বাস্তবায়ন করাই উদ্দেশ্য। লক্ষ্য পূরণ করে ক্লাইমেট চেইঞ্জকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করানো হবে।
ওয়েদার মডিফিকেশন ও জলবায়ু পরিবর্তন
আবহাওয়া কৃত্তিম উপায়ে পরিবর্তন করা হচ্ছে বললে মোটাদাগে সম্ভবত তিন শ্রেণীর মানুষ পাওয়া যাবে। একদল উড়ে এসে পাগল উপাধি দিবে। একটু জান্নেওয়ালা কিন্তু বিষয়টি মানে না তারা বলবে কন্সপাইরেসি থিওরি। আর এক শ্রেণীর মুমিন ভাইয়েরা বলবে ভাই ইমান নষ্ট হয়ে যাবে কিন্তু! জানেন এসব নিয়ন্ত্রণ কার হাতে?
আমরা আসলে বেখবর। দেশে দেশে গোপনে প্রতিযোগীতা চলছে এই সেক্টরে ইনভেস্ট করা নিয়ে। ২০২২ সালে প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণের সরঞ্জামাদি বিক্রির মার্কেট ছিল ২২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২৩-২৯ সাল প্রতি বছরে ৫.২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে।
হাদিস বলছে শেষ জামানায় প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। শেষ জামানা! এক শ্রেণীর আধুনিক মানুষ আকাশ থেকে পরে বলে বসতে পারে শেষ জামানায় আসছি এসব ফাও কথা কই পান। মানে.. তাদের ধারনা আল্লাহপাক মনে হয় প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এর দিনক্ষণ ঘোষণা দিবেন। আচ্ছা বাদ দেন। আধুনিক মানুষতো! কিন্তু গোপনে প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণের সরঞ্জামাদি বিক্রির যে বিশাল মার্কেট তৈরি হয়ে গেছে এবং অন্তত ৫০টি দেশ এরই মধ্যে এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করছে এটা কিন্তু খোদ ইউএন এর অফিসিয়াল খবর। ঠিক আছে!
চীন ২০১২ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ১.৩৪ বিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট করে এই ওয়েদার মডিফিকেশন প্রোগ্রামে। পরবর্তীতে এই বিনিয়োগ আরো বাড়ানো হয় এবং তারা আশা করছে ২০২৫ সালের মধ্যে একটি উন্নত ওয়েদার মডিফিকেশন সিস্টেম পাবে। আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলোও বহু বছর ধরে এর পিছনে ইনভেস্ট করে আসছে। তাহলে বিষয়টা কি দাড়ালো? ইন্ডিয়া যদি চায়নার সাথে এ প্রতিযোগিতায় না পারে তাহলে মৌসুমী বৃষ্টিসহ নানা কৃত্তিম জলবায়ু সংকটের কবলে পরবে। ফসল উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করতে পারে। অথবা চায়না যদি আমেরিকার সাথে আবহাওয়া প্রযুক্তিতে পেরে না ওঠে তাহলে বন্যা বা হিট ওয়েবে নাস্তানাবুদ করা হতে পারে। ইউরোপের কোন দেশ কথামত না চললে টর্নেডো দিয়ে ভাসিয়ে দেয়া হতে পারে। তার মানে ওয়েদার মডিফিকেশন প্রোগ্রাম কি সংঘাতের নতুন রসদ?
এছাড়া সামনে পরিবেশ বিপর্যয়ের আরো একটি বড় উদ্বেগের কারন হতে যাচ্ছে চীনের তৈরি করা কৃত্তিম সূর্য। একদিকে এসব অসুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কৃত্তিমভাবে জলবায়ু পরিবর্তন করে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করা হচ্ছে, অন্যদিকে তারাই আবার তহবিল গঠন করে এনজিওর মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে! ইউরোপ থেকে গ্রীক সেনাপতি সেলুকাস (Seleucus) ভারত দখলে এসে এখানকার মানুষের গঠন, ভিন্ন আচরন দেখে কি অনুভূতি হয়েছিল তা ইতিহাসে নাই তবে দিজেন্দ্রলাল রায় এই মুহূর্তটির অনুভুতি সম্পর্কে লিখেছেন “সত্যিই সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ!” শুধু ক্লাইমেট চেইঞ্জ না এমন অসংখ্য এজেন্ডার ভিতর, বাহিরে ভিন্নতা দেখে বিষ্মিত হই। অথচ মানুষ নির্বিকার। সত্যিই সেলুকাস, কি বিচিত্র এই পৃথিবী!
True Eyes ইউটিউভ চ্যানেলের শাফিন ইমরানের তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সমৃদ্ধ ভিডিওগুলো নিসন্দেহে সত্যের অনুসন্ধানে কয়েকধাপ সাহায্য করবে।

ট্রু আইস -এর ভিডিওতে এটা স্পষ্ট বুঝানো হয়েছে যে, সাধারন মানুষের দ্বারা যে পরিবেশগত পরিবর্তন হচ্ছে তা খুবই নগন্য। বরং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে অসুস্থ্য প্রতিযোগীতার মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করা হচ্ছে। অন্যদিকে তহবিল বিলিয়ে ভিন্ন উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এবং ফাইনালি ক্লাউড সিডিং বা হার্প প্রযুক্তি ব্যবহার করে এর চূড়ান্ত অসুস্থ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। জলবায়ু পরিবর্তন দ্যা ক্লাব অফ রোমের তৈরি করা একটি কৃত্তিম সংকট কিনা তা বুঝার জন্য এ ভিডিওটি সাহায্য করবে।
সৃষ্টির পর থেকে প্রতিনিয়ত জলবায়ু পরিবর্তন হয়ে আসছে। প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প হয়েছে, সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়েছে, গতিপথ বদলে গেছে, ভূপৃষ্টের প্লেট পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের নামে ইতিহাসে কখনও এত কর্মসূচী নেয়া হয়নি। এর নামে দেশে দেশে এত আইন করা হয়নি। এত ফান্ডের ছড়াছড়ি হয়নি। এসব কোনকছুই প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়না যদি না কার্যকর কিছু হতো। প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। বরং সাথে যুক্ত হচ্ছে কৃত্তিম সংকট। অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না যদি তুরস্ক ২০২৩ সালের প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পটি কৃত্তিম সন্দেহে তদন্ত কমিটি গঠন করে। অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না যদি সামনের দিনগুলোতে বড় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃত্তিমভাবে ঘটিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের উপর দায় চাপানো হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন একটি নির্দিষ্ট গতিতে হয়ে যাচ্ছে কিন্তু এটিকে ঘিরে যে কর্মসূচী ও তহবিল প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে সেখানে কতটুকু ধোকাবাজি আছে তা হয়ত পরবর্তী কোন এক প্রজন্ম খুজে বের করবে। সত্য, মিথ্যা, কৃত্তিম সংকট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ধোকা ইত্যাদি যেটাই হোক, এর চূড়ান্ত পর্যায় কি হতে পারে? যন্ত্রটি যার হাতের কাছে সেই দুই শিংওয়ালা পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণ করছে। এবং কখন কোথায় বৃষ্টি দিতে হবে, কোথায় খড়া, কোথায় সুনামি সেই দেনদরবার তার সাথে সারতে হবে। সেটা না করলেই কৃত্তিম সংকট, মানে জলবায়ু পরিবর্তন। কারন নিয়ন্ত্রণ তার হাতের নাগালে। অন্তত ম্যাগাজিনের কাভার এমন কথায় বলে।
“দাজ্জাল এক জনসমাজে গিয়ে মানুষকে তার প্রতি ঈমান আনয়নের আহবান জানাবে। এতে তারা ঈমান আনবে। দাজ্জাল তাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করার জন্য আকাশকে আদেশ দিবে। আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে, যমিন ফসল উৎপন্ন করবে এবং তাদের পশুপাল ও চতুষ্পদ জন্তুগুলো অধিক মোটা-তাজা হবে এবং পূর্বের তুলনায় বেশী দুধ প্রদান করবে। অতঃপর অন্য একটি জনসমাজে গিয়ে মানুষকে তার প্রতি ঈমান আনয়নের আহবান জানাবে। লোকেরা তার কথা প্রত্যাখ্যান করবে। দাজ্জাল তাদের নিকট থেকে ব্যর্থ হয়ে ফেরত আসবে। এতে তারা চরম অভাবে পড়বে। তাদের ক্ষেত-খামারে চরম ফসলহানি দেখা দিবে। দাজ্জাল পরিত্যক্ত ভূমিকে তার নিচে লুকায়িত গুপ্তধন বের করতে বলবে। গুপ্তধনগুলো বের হয়ে মৌমাছির দলের ন্যায় তার পিছে পিছে চলতে থাকবে।’’ – সহিহ মুসলিম
একটি বাস্তব ঘটনা বলে শেষ করব। ২০০৯ কি ১০ সালের ঘটনা। সাংবাদিকদের নিয়ে পাবনার চর এলাকা বেড়া উপজেলায় গিয়েছিলাম। সাথে দেশের কিছু বরেণ্য ব্যক্তিরা ছিল। একজন স্থানীয় এনজিও প্রধানের ক্লাইমেট চেঞ্জ বিষয়ক সাক্ষাৎকার নেয়া হলো। ভয়াবহতা ও হতাশার কথা শোনালেন, সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানালেন ইত্যাদি। ক্যামেরা অফ করা হলে মাইক্রোফোন সাংবাদিকের হাতে ধরিয়েই বলে বসলেন “কিসের ক্লাইমেট চেঞ্জ”! কথাটা এখনও মনে পরে। আমরা আসলে সত্য জানি। কিন্তু ফান্ডিং ও নানা ফন্দিফিকিরের কাছে আমরা বিক্রি হয়ে গেছি।
GIPHY App Key not set. Please check settings