in ,

LoveLove AgreeAgree

বয়কট একটি নিনজা টেকনিক!

Boycott is a ninja technique

বয়কট কেন করব? বয়কট করে আসলেই কি কোন লাভ হয়? কাকে, কিভাবে, কখন, কতক্ষণ বয়কট করতে হবে? বয়কট একটি নিরব কৌশলী প্রতিবাদের ভাষা। বয়কট একটি নিনজা টেকনিক!

বয়কটের সফলতা কতখানি আসবে তা মূলত এর স্থায়িত্ব এবং প্রাসঙ্গিক অনেক কিছুর উপর নির্ভর করতে পারে। কিন্তু এই লেখায় কল্পিত নিনজা টেকনিকের মাধ্যমে পণ্য বয়কটে হেরে যাবার সম্ভাবনা খুব কম। গ্যারান্টি! 💪

নিনজা টেকনিকের বয়কটে যেমন আবেগ থাকবে তেমনি থাকবে সচেতন ও কৌশলী অবস্থান। এটা এমন নয় যে, আবেগে দুদিন বয়কট করলাম এরপর ভুলে গেলাম। এমন নয়, বয়কট করে নিজেরা বিপদে পরলাম। এমনও নয়, যখন তখন যারে তারে বয়কট করে বাজার ব্যবস্থাপনা নষ্ট করলাম। অথবা বিকল্প চিন্তা না করেই বয়কট করে নিজে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রন্থ হলাম।

তাহলে এটা কি? সেদিকে যাওয়ার আগে নিনজা সম্পর্কে একটু ধারনা নেয়ার চেষ্টা করা যাক।

নিনজা টেকনিক কি?

১২শ শতাব্দী’তে জাপানে এক শ্রেণীর অত্যন্ত দক্ষতাপূর্ণ গোপন সৈন্যদলকে “নিনজা” অথবা “শিনোবি” (Shinobi) বলা হত, যার অর্থ এমন কেউ, যে কিনা লুকিয়ে থাকে। নিনজা বলতে গুপ্তচরকে বোঝানো হত, যারা বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ মানুষের বেশে গোপন ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানার চেষ্টা করত। এরা প্রায়ই কামার, পোশাক বিক্রেতা, কারিগর অথবা সন্ন্যাসীর রূপ নিয়ে থাকত। অনেকে এই কাজে এতটাই দক্ষ হয়ে উঠেছিল যে বছরের পর বছর অথবা পুরো জীবনটাই গুপ্তচর হয়ে কাটিয়েছে অথচ আশেপাশের মানুষ সেটি জানতেও পারেনি।

নীতি-নৈতিকতা আদর্শের ব্যাপারে তারা কোন ছাড় দিতনা। প্রয়োজনে গোপনে শত্রুদের উপর কৌশলী আক্রমণ করত। এ কারনে নিনজাদের বর্বরতার কিছু উদাহরন থাকলেও ইতিহাসে তাদের আলাদা সম্মানের চোখে দেখা হয়। তারা এটিকে একটা শিল্পে রূপান্তরিত করে। প্রয়োজনে অস্ত্র ব্যবহারের রীতি থাকলেও এটা ছিল মূলত একটা নিরস্ত্র যুদ্ধ।

চোখের সামনে একটা জাতিগত নিধন চলছে। এর পিছনে কারা সেটাও স্পষ্ট হয়ে গেছে। অথচ কিছু করার নেই সাধারন মানুষের। একটি মাত্র জোড়ালো প্রতিবাদের রাস্তা খোলা আছে আমাদের মত নিরস্ত্র সাধারন মানুষদের কাছে। সেটি হলো বয়কট।

নিনজারা জাপানে যেভাবে নিরবে নিরস্ত্র প্রতিবাদের ভাষা তৈরি করেছিল বয়কট তেমনি একটি নিরব, নিরস্ত্র কিন্তু কৌশলী প্রতিবাদ। এটা শুধুমাত্র কোকা-কোলা বয়কট করা নয়, আগ্রাসনকারীদের যেকোন পণ্যে বয়কটের অবিচল কৌশলী প্রক্রিয়া।

বয়কট কেন?

কৌশলী অবস্থানের জন্য সবার আগে সচেতনতা জরুরী। কেন বয়কট করবেন সে প্রশ্ন সবার আগে। নিজেকে এর উত্তর সবার আগে খুজে বের করতে হবে।

➤ বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রথম উত্তর হলো বয়কট একটি নিরস্ত্র প্রতিবাদের ভাষা। আগ্রাসনকারীদের উৎপাদিত ও বাজারজাতকৃত পণ্য বর্জনের মাধ্যমে তাদের একটি বার্তা দেয়া।

➤ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরাসরি যে মজলুমরা লড়াই করছে তাদের কাছেও বার্তা পৌছানো যে সাধারন জনগন পক্ষে আছে।

➤ বর্তমান যে শক্তির আগ্রাসনের ব্যাপারে বলা হচ্ছে তাদেরকে এ মূহুর্তে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করা বাস্তবসম্মত চিন্তা না। কিন্তু বিশ্বে তাদেরও বিপরীত অর্থনৈতিক শক্তি আছে যাদের দমিয়ে রাখা হয়েছে। তারাও পুনরুজ্জীবিত হওয়ার শক্তি খুজে পাবে।

➤ দুনিয়া ইতিমধ্যে দুভাগ হয়ে গেছে। পশ্চিমা এলিট শক্তি তাদের বিপরীত শক্তিধর দেশগুলোর হাজার হাজার পণ্যের উপর স্যাংশন দিয়ে রেখেছে। এখন নিজ দেশের সাধারন জনগণ তাদেরই তৈরি পণ্যের উপর বয়কটের ডাক দিচ্ছে। এর থেকে উত্তম চপেটাঘাত আর কি হতে পারে? ইঁট মারলে পাটকেল খেতে হয়। কাজেই বয়কট অনর্থক নয়।

➤ কৌশলী বয়কটের উদ্দেশ্য নিজে বিপদে পরা না। সেই পণ্যই বয়কট করা যার বিকল্প বাজারে আছে।

➤ বয়কট শুধুমাত্র আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিরব প্রতিবাদ না বরং কৌশলী বয়কট আমাদের মধ্যে সংযম তৈরি করবে এবং ভোগবাদী মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করবে।

➤ ভোগবাদী বিদেশী আগ্রাসীদের পণ্য বয়কটের ফলে একদিকে তারা মার্কেট হারাবে অন্যদিকে দেশীয় পণ্যের বাজার তৈরি হবে। দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে।

➤ যে কোকাকোলাতে বিন্দুপরিমাণ পুষ্টিগুণ নাই বরং ক্ষতিকর উপাদানে ভরা সেটা শুধু ফিলিস্তিনের কথা চিন্তা করে নয়, বহু আগে বয়কট করা উচিত ছিল। ডাবের পানি, ফলের জুস, লেবুর শরবত, ত্রিফলা শরবত এরকম অসংখ্য ভেষজগুণ সম্পন্ন পানীয় আছে যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। কিন্তু শুধু বিজ্ঞাপনের ম্যাজিকে সব ভুলে আমরা বিষ খাচ্ছি। এই বয়কটের এটাও উদ্দেশ্য হওয়া উচিত যে, এসব বিষ খাওয়া ভুলে আমরা স্বাস্থ্যকর পানীয় পান করব।

➤ এরকম আরো উদাহরন দেয়া যায়। আত্নীয় বাড়িতে দেশীয় ফল নিয়ে যাওয়া মানে রীতিমতো অপমানিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আপেল, নাসপাতি, আঙ্গুর, আনার ইত্যাদি বিদেশী ফল নিতে হবে। এগুলোকে বয়কট করা বা ইমপোর্ট কমিয়ে দেশীয় ফলে অধিক মনযোগী হওয়া কি খুব কঠিন? পুষ্টিগুণের কথা বলে বিদেশীরা এগুলোর বাজার তৈরি করেছে। কেন, দেশী ফলে কি পুষ্টিগুণ কম আছে? বিদেশী ফল বয়কট করলে বা খাওয়া কমিয়ে দিলে দেশী ফলফলাদির চাষবাস বেড়ে যাবে। স্থানীয় উদ্যোক্তা, কৃষকরা উপকৃত হবে।

➤ বয়কটের উদ্দেশ্য যেমন অত্যাচারী আগ্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তেমনি এটি দেশপ্রেমেরও জলন্ত উদাহরন।

➤ সার্ফ এক্সেলের অসংখ্য বিকল্প বাজারে আছে। নিজেকে প্রশ্ন করুন, কেন সার্ফ এক্সেল পছন্দের তালিকায় রেখেছেন। কারন আপনি বিজ্ঞাপন ও তাদের মার্কেট পলিসির দারা প্রভাবিত। হয়ত কখনও এভাবে ভেবে দেখেননি। দশ টাকা কম দিয়ে দেশী বিকল্প একটা ডিটারজেন্ট পাউডার কিনে যাচাই করে দেখুন। খুব বেশি পার্থক্য পাবেন না। তাহলে বয়কটের ফলাফল কি দাড়াবে? হ্যা, দেশীয় পণ্যের বিস্তার ঘটবে।

➤ দেশি কোম্পানী হওয়া সত্তেও সমাজ ও রাষ্ট্র বিরোধী বিদেশী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে এমন তথ্যের ব্যাপারে যদি নিশ্চিত হোন তবে সেক্ষেত্রেও সাবধান। গত ঈদে অ্যাড়ংয়ের পাঞ্জাবী এর উদাহরণ। তারা পাঞ্জাবীতেও এলজিবিটিকিউ এজেন্ডা প্রচার করতে ছাড়েনি। সমাজ, রাষ্ট্র সর্বোপরি আমাদের সন্তান বা পরবর্তী প্রজন্মের কথা চিন্তা করে যেসব দেশী কোম্পানী এ ধরনের এজেন্ডা নিয়ে কাজ করবে তাদের চিহ্নিত করে বয়কট করা উচিত।

কোকা-কোলা সম্পর্কিত ভুল মেসেজ

আমরা ভুলের মধ্যেই ঘুরপাক খাই। কোক ছেড়ে মজো ধরো, এটা একটা ডাহা ভুল। যে জিনিসটাতে ক্ষতিকর উপাদান ছাড়া আর কিছুই নাই, তার নাম কোক হলে কি আর মজো হলেই বা কি! ব্যক্তিগতভাবে এই জিনিসের প্রতি খুব বেশি টান আগেও কখনো ছিল না। এখন এসব ছাইপাশ খাওয়া একদমই বাদ।

এখন ধরুন ঈদের সময়। পরিবারের কেউ চাইল। অথবা মেহমান আসলে এই ড্রিংকস ছাড়া প্রেসটিজ চলে যাবে মনে হলো। তাহলে ঠিক আছে, এতো কট্টর হয়ে জীবনকে জটিল করার দরকার তো নেই! কোকা-কোলার অনেক বিকল্প ব্র্যান্ড বাজারে আছে। এটা মন্দের ভালো।

যেকোন ব্র্যান্ডের কোল্ড ড্রিংকস খাওয়ার বিরুদ্ধে আমি। যদি কিনতেই হয় তবে দেশীয় ব্র্যান্ডের কেনা মন্দের ভালো।

বিশেষ করে কোকা-কোলা বয়কট প্রসঙ্গে বাজারে কিছু কথার প্রচলন আছে। যেমন –

  • এটাতো ইসরায়েলি পণ্য না।
  • এই বয়কটে তাদের কিছু হবে না অতএব এসব করে লাভ নাই।
  • বয়কট করে যদি আগ্রাসন থামানো যেত তবে আমিও বয়কট করতাম।
  • সোশ্যাল মিডিয়ায় এসব পোস্ট দিয়ে কোন লাভ হয়না ইত্যাদি।

এটা ঠিক যে বয়কট করে তাদের আগ্রাসন থামানো যাবে না। কিন্তু যারা এসব বলে নিরব থাকতে উৎসাহিত করে তাদের উদ্দেশ্য ভালো না। আর সাধারন মানুষের সাধ্যের মধ্যে বয়কটই হলো এটম বোমা যা প্রতিটি সাধারন মানুষ অনায়াসে মারতে পারে।

কোক ইসরায়েলি পণ্য কি না তা জানার আগে জানা দরকার যে, কোন্ মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি আসলে তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বিনিয়োগ ছাড়া? হারিকেন দিয়ে খুজতে হবে বটে। প্রকাশ্যে সমকামীতাকে সাপোর্ট করে বার্কশায়ার হ্যাথাওয়েসহ প্রায় সব পশ্চিমা কোম্পানি। বার্কশায়ার হাথাওয়ের কর্ণধার ওয়ারেন বাফেট। বহু মানুষের ক্যারিয়ারের আইডল। ব্লাকরক, ব্যাংকিং সিস্টেম যাদের পকেটে থাকে। এ রকম অসংখ্য জায়োনিস্ট প্রতিষ্ঠানের জাল বুনানো দুনিয়া জুড়ে। এদের লাভের অংশ ডান বাম, পূর্ব পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ কোন দিক দিয়ে ইসরায়েলে পৌছায় তার দলিল কেউ চাইলে তাকে আহম্মক উপাধি দেয়া শ্রেয়।

সম্প্রতি কোকা-কোলার নির্মিত একটি বিজ্ঞাপনের প্রেক্ষিতে নেটিজেনদের মধ্যে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয় এবং কোক বয়কটের ডাক আবারো জোড়ালো হয়। ইউটিউব চ্যানেল থেকে ভিডিওটি সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় তারা। অভিনয় শিল্পিও ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু প্রতিবাদ থেমে নেই। কোকের অফিসিয়াল বিজ্ঞাপনের বিপরীতে তৈরি হয়েছে একাধিক বাঙ্গাত্নক ভিডিও।

ভিডিও দেখতে নিচের ছবিতে ক্লিক করুন

বয়কট সম্পর্কে কিছু সাবধানতা

বয়কট একটি শক্তিশালী অস্ত্র হতে পারে। আবার হুজুগে বা ভুল সিন্ধান্তের কারনে বয়কট নিজেই একটা বড় বিপদের কারন হয়ে যেতে পারে। কারন এর সাথে বাজার ব্যবস্থাপনা, আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য, দেশের অর্থনীতি, কূটনৈতিক সম্পর্ক ইত্যাদি নানা বিষয় জড়িত। তারমানে নিনজাদের আদলে ঠান্ডা মাথায় টেকনিক প্রয়োগের কোন বিকল্প নাই। মাথায় এ সংক্রান্ত কিছু হ্যাকস ঘুরঘুর করছে তা শেয়ার করলাম–

➤ চোখের সামনে এখন পর্যন্ত ৩৭ হাজার নিরস্ত্র মানুষ মেরে ফেলেছে তারা। যদি অস্থির হয়ে যান এই ভেবে যে, মজলুমদের জন্য কিছুই করতে পারছেন না। অথচ কিছু একটা করা দরকার। তাহলে আপনাকেই বলছি। মাইন্ডসেট করুন। শুধু কোক নয়, প্রথমেই জুলুমবাজদের পণ্যের তালিকা তৈরি করুন। এই তালিকা অনেক লম্বা। এবার সচেতনতার সাথে দেখে নিন কোনটা বয়কট করলে নিজে ও দেশ বিপদে পরবে না। কোন পণ্যের বিকল্প খুব সহজে বাজারে পাওয়া যায়। বয়কট শুরু করুন। এটা এক দুই দিনের জন্য না। অবিচল প্রক্রিয়া।

➤ কোন পণ্য উৎপাদনের পিছনে কারা আছে তা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা অবশ্যই থাকতে হবে।

➤ উৎপাদক বা মালিক পক্ষ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গেলে বিকল্প অন্নেষণের বিষয় মাথায় নিন।

➤ বিকল্প পণ্যের সাথে অভ্যস্ত হওয়া।

➤ মান কিছুটা কম বা প্যাকেজিং সাদামাটা মনে হলেও তা ছাড় দেয়ার মানসিকতা তৈরি করা জরুরী।

➤ বয়কট কখনও সাময়িক সময়ের জন্যও হতে পারে। বিশেষ করে দেশীয় পণ্যের ক্ষেত্রে।

➤ তবে অত্যাচারী আগ্রাসীদের পণ্য বয়কটের ক্ষেত্রে এটি একটি অবিচল প্রক্রিয়া। নিনজাদের মত বছরের পর বছর ধরে নিরবে চলতে থাকবে। 

➤ বিশেষ করে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য যেগুলো দেশে উৎপাদন হয়না সেগুলো বয়কটের ক্ষেত্রে সাবধানতা জরুরী। এছাড়া শিশুখাদ্য, মেডিসিন, আমদানি নির্ভর কৃষি ও স্বাস্থ্য উপকরন ইত্যাদি জরুরী পণ্যে বয়কটের আওয়াজ তুলে নিজে ও দেশ বিপদে পরবে কিনা সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

ফেসবুক, গুগল কেন বয়কট করিনা?

যারা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে মজলুমদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে তাদের কেউ উড়ে এসে শকুনের মতো হামলা করে বলতে পারে এখনই ফেসবুক বাদ দেন। এটা জায়োনিস্ট কোম্পানি। এবং এই প্রশ্ন করে তারা হাহা হিহি করে, তৃপ্তির ঢেকুর তোলে। মনে মনে ভাবে দিছি একটা গিট্টি লাগায়ে! আরে ভাই, এ জন্যই তো নিনজা টেকনিক! বয়কট করে আমার লস নাকি তাদের লস এই অংক করতে কি গণিতে খুব পারদর্শী হতে হবে? প্রতিটি পণ্য আমরা টাকার বিনিময়ে কনজিউম করি। যতক্ষণ বয়কট করে নিজের ও দেশের লস নাই ততক্ষণ বয়কট চলবে। যতক্ষণ সমমানের পণ্য বা সেবা বাজারে আছে ততক্ষণ বয়কট চলবে। যখন নাই তখন বিকল্প অন্বেষণের বিষয় মাথায় রেখে সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলবে। আর ফেসবুকও আমরা টাকার বিনিময়ে ব্যবহার করি। ফ্রি ফ্রি দেয় না। এই সাধারন তথ্য সম্পর্কেও যদি কোন আধুনিক বয়কট বিরোধী তর্ক করতে চান তবে তার আগে ফ্রি প্রযুক্তি পণ্যের বাজার ও কিভাবে তারা আমাদের পকেট থেকে টাকা নিয়ে যায় সে সম্পর্কে পড়ালেখা করবেন।

কিছুদিন আগেও ফিলিস্তিন নিয়ে প্রতিবাদ করায় গুগল প্রায় ৫০ জন কর্মী ছাঁটাই করে। এটা নিয়ে কেউ প্রশ্ন করবে, গুগলকে কিভাবে বয়কট করেন দেখি এবার! একই উত্তর। নিনজা টেকনিক! প্রসঙ্গক্রমে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেয়ার করে রাখি। আপনি কি রাশিয়ার গুগল বলে পরিচিত কোন কোম্পানির নাম জানেন? খুব সম্ভবত উত্তর হবে, না। কারন তার চিহ্ন খুজে পাওয়া দুষ্কর। স্যাংশন দিয়ে তাকে পুঁতে রাখা হয়েছে। কোম্পানিটির নাম ইয়ানডেক্স (Yandex)। কি নেই তাদের! কাজেই এমন দাম্ভিক ভাব নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে নিজের অজ্ঞতার প্রচার করে বেড়াবেন না। দুনিয়া বদলে যাচ্ছে।

ইয়ানডেক্স ব্রাউজারের কথা যদি বলা হয় তবে বয়কটের চিন্তা করে নিশ্চিন্তে গুগল ক্রম, মাইক্রোসফট এজ বা ফায়ারফক্সকে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দেয়া যায়। বিকল্প হিসেবে ডেস্কটপ ও মোবাইলে এক কথায় চমৎকার ব্রাউজার এটি। নিজে অনেক দিন ব্যবহার করার পর বলছি। আবার প্রশ্ন করতে পারেন সামান্য ব্রাউজার বয়কট করলে কি আর না করলেই বা কি। বাস্তবতা হলো ইন্টারনেট ব্রাউজার একটি মহামূল্যবান পণ্য যার মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে মার্কেটিংসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা হয়।

বয়কট এ্যাপস; একটি অসাধারণ উদ্যোগ

যুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থন দেয়া কোম্পানি এবং ব্র্যান্ডের নাম সনাক্ত করতে বয়ক্যাট (Boycat) নামে একটি মোবাইল এ্যাপস আছে যার মাধ্যমে খুব সহজে বারকোড স্কানিংয়ের মাধ্যমে তাদের পণ্য সনাক্ত করা যায়। তাদের সমর্থিত পণ্য হলে স্ক্যান করার সাথে সাথে মোবাইল স্ক্রীনে একটি সতর্ক বার্তা ভেসে উঠবে।

বয়ক্যাট (Boycat) মোবাইল এ্যাপসের মাধ্যমে খুব সহজে স্ক্যান করে জানা যাবে কোনটি যুদ্ধে সমর্থিত কোম্পানির পণ্য

বিডিএস মুভমেন্ট

বয়কট (বর্জন), ডিভেস্টমেন্ট (বিনিয়োগ প্রত্যাহার) এবং স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) সংক্ষেপে বিডিএস (BDS) মুভমেন্ট যার উদ্দেশ্য সেসব কোম্পানির পণ্যের বিরুদ্ধে বয়কটের ডাক দেয়া যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থন দেয়ার অভিযোগ আছে। গোপনে তাদের তথ্য খুজে বের করা এবং তালিকা তৈরি করে ওয়েবসাইটে দিয়ে বয়কটের জন্য প্রচার করা।

২০০৫ সালে ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রায় ১৭০টি ফিলিস্তিনি নাগরিক সমাজ সংস্থা এই মুভমেন্টটি চালু করে। এই মুভমেন্টের কৌশলও কিন্তু নিরস্ত্র এবং অহিংস উপায়ে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করা।

সর্বোপরি এটা শুধু ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের লড়াই না। এটা এলিট ইন দ্যা ওয়েস্ট মানে সেই পশ্চিমা এলিটদের বিরুদ্ধে লড়াই। তাই এত সহজে পেরে ওঠার কথা চিন্তা করা যায় না এবং সহজে শেষও হচ্ছে না। আবার বয়কট করে হয়ত তাদের আগ্রাসন থামানো যাবে না। কিন্তু একটা বার্তা যাবে। ছোট ছোট এসব প্রতিরোধ জমা হয়ে একদিন গলা টিকে ধরবে। সেদিন খুব দূরে না। কাজেই বয়কট করে কাজ হবে কি হবে না দেখার দরকার নাই। বয়কট চলবে। তবে টেকনিক অবলম্বন করে। নিনজা টেকনিক!

What do you think?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

The Arrival of Imam Mahdi

ইমাম মাহদি: উম্মাহর কাঙ্খিত খলিফার আগমন

julian assange and new world order

উইকিলিকস বস জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ কি নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডারের সুবিধাভোগী?