in

AgreeAgree LoveLove OMGOMG CryCry

দাজ্জালের আগমন, আত্নপ্রকাশ এবং শাসনকাল

দাজ্জালের আগমন

হাদিসে পাওয়া যায় প্রত্যেক নবী তাদের উম্মতদেরকে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। এ থেকে বুঝা যায় দাজ্জালের জন্ম পৃথিবী সৃষ্টির শুরুতে অথবা অন্তত হযরত নূহ (আ.) এর সময় কালে। দাজ্জালের জন্ম হয়েছে এবং একটি দ্বীপে বন্দী অবস্থায় আছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর সময় ইবনে সায়্যাদ নামে একজনকে দাজ্জাল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল যার সম্পর্কে তিনি হ্যা অথবা না কোনকিছুই স্পষ্ট করেননি। অনেকের মতে দাজ্জাল তার পূর্বের দ্বীপ বদল করে অন্য কোথাও আছে। দাজ্জালের আগমন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করলে এই তথ্যগুলো মিলবে। এর মধ্যে কিছু বিষয় নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত পাওয়া যায়। উপরের তথ্যগুলো মাথায় রেখে সম্পূর্ণ বর্তমান প্রেক্ষাপটে আলোচনা করার উদ্দেশ্য নিয়ে এই লেখা। আসলে অনেকদিন ধরে বিশেষ একটি ইন্টারপ্রিটেশনকে উপস্থাপন করার জন্য যথোপযুক্ত প্রমাণ্য দলিলের অপেক্ষায় ছিলাম। এই লেখায় সেগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করব।

দাজ্জালের আগমন কি হয়ে গেছে? দাজ্জাল আগমনের লক্ষণগুলো কি কি? কখন দাজ্জাল আত্নপ্রকাশ করবে? দাজ্জালের শাসনকাল কতসময় স্থায়ী হবে? এরকম হাজারো প্রশ্ন, কৌতুহল মানুষের মনে। ইন্টারনেট সার্চ করলে হাজার হাজার কনটেন্ট পাওয়া যাবে। এগুলোর মধ্যে কোনটা সত্য, কোনটা ভুল বা আংশিক সত্য তা বোঝা কঠিন।

দাজ্জালের আগমন, শাসনকাল ইত্যাদি সম্পর্কে কোন জরিপ করা হলে সম্ভবত নিচের চার শ্রেণীর মানুষ পাওয়া যাবে:

১. একশ্রেণীর মানুষদের এসব নিয়ে কোন মাথাব্যথা নাই। জানে না, জানার চেষ্টা করেনা এবং হয়ত জানার প্রয়োজনও মনে করেনা।

২. দাজ্জাল সম্পর্কে অল্পবিস্তর ধারনা থাকলেও যতক্ষণ আত্নপ্রকাশ না করে ততক্ষণ পর্যন্ত এ নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি না। মানে আসুক আগে, তখন দেখা যাবে!

৩. দাজ্জাল সম্পর্কে ভালো জানলেও তার আগমন ও প্রকাশ্যে আসা সম্পর্কে দ্বিধান্বিত।

৪. এই শ্রেণীর মানুষ দাজ্জাল সম্পর্কিত হাদিস ও এস্কেটোলজি সম্পর্কে জানে এবং প্রতিনিয়ত আপডেট খবর রাখার চেষ্টা করে।

সিংহভাগ মানুষ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কাতারে। চতুর্থ শ্রেণীর মানুষের সংখ্যা সন্দেহাতীতভাবে অতি নগণ্য। লেখাটি সব শ্রেণীর জন্য সহায়ক হবে আশা করি।

দাজ্জাল এখন কোথায়?

এক কথায় উত্তর হলো দাজ্জাল এখন আড়ালে থেকে কলকাঠি নাড়ছে। আড়ালে থেকে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। কেন কিভাবে সে বিষয়গুলো পুরো লেখাজুড়ে থাকবে। আমরা জানি কনস্টান্টিনোপল (বর্তমান তুরস্ক) বেদখল হয়ে যাবে। যদিও আমার কাছে মনে হয় এই কনস্টান্টিনোপল বেদখলের সাথে মূলত আয়া সোফিয়া মসজিদ জড়িত। মানে এটি মূলত আয়া সোফিয়া মসজিদকে কেন্দ্র করে দখল বেখলের মামলা। ঠিক ফিলিস্তিনে যেরকম আল আকসা মসজিদকে কেন্দ্র করে সংঘাত চলছে। এখানে ভারতের বাবরি মসজিদ দখল করে টেম্পল তৈরি এবং আল আকসার মসজিদ দখল করে টেম্পল তৈরির পরিকল্পনা এক অদৃশ্য অভিন্ন সূত্রে গাঁথা। একই সূত্র ধরে আয়া সোফিয়া মসজিদ দখল হয়ে যেতে পারে শীঘ্রই। এগুলোর পিছনে অভিন্ন উদ্দেশ্যে ডার্ক ফোর্স কাজ করে যাচ্ছে। জার্মানী, ইরান, আবুধাবিসহ বিভিন্ন জায়গায় নতুন এক ধরনের ধর্মীয় উপাসনালয় স্থাপনের কাজ চলছে যেখানে একই ছাদের নিচে মসজিদ, গির্জা ও সিনাগগ থাকবে। আবুধাবিতে নির্মিত প্রকল্পের নাম “আব্রাহামিক ফ্যামিলি হাউস”, জার্মানীর প্রকল্পের নাম “হাউজ অফ ওয়ান”। এছাড়া এআই জেনারেটেড চার্চ সার্ভিসও চালু হয়েছে। দাজ্জালের চূড়ান্ত শাসনব্যবস্থা এসব নতুন ধারার ধর্মীয় উপাসনালয় ও টেম্পলকেন্দ্রীক করার পরিকল্পনা রয়েছে যেগুলোর প্রধান কার্যালয় জেরুজালেমের থার্ড টেম্পল। এস্কেটোলজিক্যাল ব্যাখ্যা অনুযায়ী এরই ধারাবাহিকতায় আয়া সোফিয়া মসজিদটি দখল-বেদখলের পর্ব আছে। এগুলো পরিকল্পনা। চূড়ান্তভাবে কি হবে সেটার উত্তর সংশ্লিষ্টরা জানেন। এই ধারাবাহিকতায় যাবতীয় এস্কেটোলজিক্যাল আলামত বিশ্লেষণ সাপেক্ষে যা পাওয়া যায় তা হলো এই উপমহাদেশ তথা বাবরি মসজিদ পুনরায় মুসলমানদের দখলের মধ্য দিয়ে প্রথম বিজয় শুরু হবে। এরপর আয়া সোভিয়া মসজিদ। এবং ধাপে ধাপে চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে আল আকসা। হাদিস অনুযায়ী কনস্টান্টিনোপল বা আয়া সোফিয়া মসজিদ পুনরায় মুসলমানদের দখলে আসার পরই দাজ্জাল রাগে ক্ষোভে প্রকাশ্যে বের হয়ে আসবে।

এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন হলো, দাজ্জাল বন্দী অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়া ও জনসম্মুখে আসার মধ্যবর্তী সময় কোথায় থাকবে? নাকি বন্দীদশা থেকে মুক্ত হয়ে সরাসরি খোরাসান অর্থাৎ ইরানের ইস্পাহান থেকে ৭০ হাজার ইহুদীর দল নিয়ে বের হবে? উত্তর সম্ভবত না। তাহলে সে কি হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবে? উত্তর না। সুস্পষ্টভাবে সে আড়ালে থেকে তার নির্বাচিত বাহিনীদের দিয়ে সক্রিয়ভাবে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাবে। নিচে ভিন্ন ভিন্ন প্রসঙ্গ টেনে এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা থাকছে। তার আগে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখা প্রয়োজন:

১. দাজ্জালের আগমন হয়ে গেছে কিনা তা বুঝতে হলে তার এজেন্ডা সম্পর্কে ধারনা থাকতে হবে। এর মধ্যে একটা সর্বজনীন বিষয় হলো সে যা কিছু করবে সেই সমস্ত কিছুর ভিতর ধোঁকাবাজি থাকবে। সে হলো পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধোঁকাবাজ।
২. সে কাজগুলো করবে আড়ালে থেকে। দাজ্জালের বাহিনী ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের খুজে বের করার যত আলামত পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম হলো তারাও নিজেদেরকে আড়াল করে রাখবে অথবা ছদ্দবেশ ধারন করে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে।
৩. আড়ালে থেকে বিশ্ব শাসন করবে যতক্ষণনা কনস্টান্টিনোপল তথা আয়া সোফিয়া মসজিদ মুসলমানদের হাতছাড়া হওয়ার পর পুনরায় দখলে না আসে।

চুক্তি সাক্ষর ও চুক্তি ভঙ্গের রেকর্ড

রোমানদের সাথে মুসলমানদের সন্ধি চুক্তি ও চুক্তি ভঙ্গ সংক্রান্ত হাদিস নিয়ে আগের লেখায় উল্লেখ করি যা এখানেও প্রাসঙ্গিক। আগের লেখাটি পড়ুন এই লিংক থেকে – মজলুম মুসলমানদের বন্ধু কারা? আগেরটি না পড়লে এই লেখার ধারাবাহিকতা বুঝতে অসুবিধা হতে পারে।

সন্ধি চুক্তি সংক্রান্ত উক্ত হাদিসের সাথে বাইবেলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লাইন শেয়ার করছি-

“He will confirm a covenant with many for one ‘seven.’ In the middle of the ‘seven’ he will put an end to sacrifice and offering. And at the temple he will set up an abomination that causes desolation, until the end that is decreed is poured out on him.”

অর্থাৎ তাদের রাজা একটি নির্দিষ্ট সময়ের (৭ বছর ধরা হয়) জন্য অনেক দেশের সাথে সন্ধি চুক্তি করবে। চুক্তির মাঝামাঝি সময়কালের দিকে টেম্পল মাউন্ট প্রস্তুত হয়ে যাবে। তারপর চুক্তি ভঙ্গ হয়ে হঠাৎ বিষ্ফোরণ ঘটবে! বাইবেলের উক্তিটি ঐ হাদিসের সাথে মিলে যায়। এখানে ‘He’ বলতে তাদের রাজাকে বুঝানো হয়েছে। আর এই রাজা আর কেউ নয়, তাদের বহু প্রতিক্ষিত মাসিহিদ দাজ্জাল বা অ্যান্টিক্রাইস্ট। উক্ত হাদিসেও একজন রাজার কথা উল্লেখ আছে। তবে উভয় রাজা কি একই? ২০২০ সালে ঘটে যাওয়া মুসলমানদের সাথে রোমানদের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি নিয়ে নিচে আলোচনা করা হবে যার সাথে এই রাজার কোন সম্পর্ক থাকতে পারে এমন অভিমত খোদ পশ্চিমা বিশ্লেষকদের।

আব্রাহাম অ্যাকর্ডস

ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকিকরনের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর আরব দেশতো বটেই প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে ১৯৭৯ সালে প্রথম চুক্তি সাক্ষর করে মিশর। এর ১৫ বছর পর ১৯৯৪ সালে একই পথ ধরে জর্ডান। এরপর আব্রাহাম অ্যাকর্ডস চুক্তি যার কথা না বললেই নয় যেটি ডোনাল্ড ট্রাম্প তার গত মেয়াদে সম্পন্ন করেন। হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর তিনটি ধর্ম অর্থাৎ ইহুদি, খ্রিষ্টান এবং ইসলাম এই তিনটি ধর্মকে এক করে চুক্তিটির নামকরন করা হয়। আব্রাহামিক অ্যাকর্ডস হচ্ছে খ্রিষ্টান ধর্মে বিশ্বাসী আমেরিকার মস্থস্ততায় আর ‍দুটি র্ধম ইহুদি ও মুসলমানদের মধ্যে চুক্তি। ২০২০ সালে আব্রাহাম আকর্ডস চুক্তিতে সাক্ষরের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মরক্কো এবং সুদান। এরই ধারাবাহিকতায় সবশেষ সৌদি-ইসরায়েল শান্তি চুক্তি যা এখনো পর্যন্ত আলোচনার টেবিলে আছে।

এসব চুক্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত না গিয়ে বরং দাজ্জালের আগমন এবং উক্ত হাদিস ও বাইবেলের উক্তির সাথে কোন সম্পর্ক আছে কিনা তা খুজে বের করব।

মিশর ও জর্ডানের ‍চুক্তির সাথে আরব আমিরাতের চুক্তির বিশেষ কিছু পার্থক্য রয়েছে। মিশর ও জর্ডান ইসরায়েলের সাথে বর্ডার শেয়ার করলেও আরব আমিরাতের সাথে কোন বর্ডার নাই। চুক্তির মাধ্যমে তারা কিছু বাণিজ্যিক সুযোগ সুবিধা আদান প্রদান করে। ইসরায়েলের সাথে টেলিযোগাযোগ স্থাপন করে। পর্যটন, সরাসরি ফ্লাইট, নিরাপত্তা, পরিবেশ, তথ্য প্রযুক্তি এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বিনিয়োগে সম্মত হয় উভয় দেশ। আরব আমিরাতে দুতাবাস স্থাপনের মাধ্যমে কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পায় ইসরায়েল। এগুলোর বাহিরে দুই দেশের একটি অভিন্ন স্বার্থ হলো ইরানের প্রভাব মোকাবিলা করা যা ঐ চুক্তির ফলে সহজ হয়ে যায়। কিন্তু ফিলিস্তিন বা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এর ভূমিকা কি তা নিয়ে প্রশ্নই রয়ে যায়।

উক্ত চুক্তির শর্ত ছিল ইসরায়েল আর কোন ভূমি দখল করবে না এবং মধ্যপ্রাচ্যে আব্রাহামিক ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে শান্তি, সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু চুক্তির এক বছরে কমপক্ষে ৩০ বার ইসরায়েল শর্ত ভঙ্গ করে। তারপরও বাণিজ্যিক স্বার্থে আরব আমিরাত বা কেউই আর কোন কথা বলেনি। চুক্তিটি হাদিসে উল্লেখিত শর্তসমূহ সুস্পষ্টভাবে পূরণ করে কিনা দেখুন:

▪ রোমানদের সাথে মুসলমানদের চুক্তি
▪ পশ্চিমাদের কাছ থেকে মুসলমানদের অর্থনৈতিক ও সামরিক নিরাপত্তা লাভ
▪ পিছন দিককার শত্রু পারস্যকে (ইরান) পরাজিত করার প্রস্তুতি
▪ প্রাথমিকভাবে চুক্তি ভঙ্গ এবং চূড়ান্তভাবেও ভঙ্গের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত
▪ রহস্যজনকভাবে এই চুক্তির মেয়াদ সম্পর্কে কোথাও কোন তথ্য খুজে পাইনি

আগের লেখায়ও যা উল্লেখ করি, আব্রাহাম অ্যাকর্ডস নিয়ে আমাদের চুলচেরা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন ছিল। কারণ এটি হুবুহু হাদিস ও বাইবেলে উল্লেখিত রোমানদের সাথে মুসলমানদের চুক্তির প্রায় সব শর্ত পূরণ করে। পশ্চিমাদের অনেক বিশ্লেষণে আব্রাহাম অ্যাকর্ডসকে বাইবেলের উক্তিটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ উল্লেখ করা হলেও অনেকে আবার তা অসম্পূর্ণ বলে দাবি করেন। আসলে হাদিসের রেফারেন্স আনলেই তা আর অসম্পূর্ণ থাকেনা। হাদিসে উল্লেখিত রোমানদের সাথে ৪টি বা একাধিক চুক্তির শর্ত পূরণ, সময় ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সন্দেহাতীতভাবে আব্রাহাম অ্যাকর্ডস চুক্তিটি অন্তভুক্ত হয়ে যায়। বাকি থাকল সৌদি আরব। সম্ভাব্য সৌদি-ইসরায়েল চুক্তির মধ্য দিয়ে বাকি শর্তও সুস্পষ্টভাবে পূরণ হয়ে যাবে। তবে যেহেতু একাধিক চুক্তির উল্লেখ পাওয়া যায় তাই সৌদির পর আরো কোন চুক্তিও যুক্ত হতে পারে। সৌদি আরবের সাথে সম্ভাব্য শান্তি চুক্তি নিয়ে বিস্তারিত নিচে উল্লেখ করা হলো।

এ্যাটমস ফর পিস ২.০

১৯৫৩ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার ‘শান্তির জন্য পরমাণু’ শীর্ষক একটি বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচীর যাত্রা শুরু হয় যার অন্যতম সুবিধাভোগী দেশ ছিল ইরান। ইরান ১৯৫৭ সালে প্রথম পরমাণু কর্মসূচি চালু করে যা শীতল যুদ্ধে আমেরিকার পাশে থাকার উপহার হিসেবে পায়। সম্প্রতি সৌদি আরবের সাথে অনুরূপ একটি চুক্তির পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে যার মাধ্যমে পরমাণু প্রযুক্তি পাবে দেশটি। ফরেন পলিসি রিসার্চ ইন্সস্টিটিউটের একটি প্রতিবেদনে সৌদি-ইসরায়েল সম্ভাব্য এই চুক্তিকে এ্যাটমস ফর পিস ২.০ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

সৌদি-ইসরায়েল শান্তি চুক্তি বা আব্রাহাম চুক্তি অথবা এ্যাটমস ফর পিস ২.০; যে নামই হোক, এটি সাক্ষরিত হলে হাদিস ও বাইবেলে উল্লেখিত সকল শর্ত সম্পন্ন হবে এবং সুস্পষ্টভাবে এটিই সেই চুক্তি তা নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমার আর কোন সন্দেহ থাকবে না।

৭ অক্টোবর ২০২৩ এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে একটা গুঞ্জন শুরু হলো সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে বহু প্রতিক্ষিত শান্তি চুক্তিকে ঘিরে। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আঞ্চলিক সংস্থা আরব লীগের দেশগুলোর সমর্থনে এই চুক্তি হওয়ার কথা শোনা যায়। ইসরায়েলের গণমাধ্যমসহ কয়েকটি মিডিয়াতে চুক্তি হয়ে যাওয়ার খবরও প্রচারিত হয়। পরক্ষণেই জানা যায় চুক্তিটি এখনও আলোচনার টেবিলে আছে। ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, “প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ঘোষণা করেন যে ইসরায়েল একটি নাটকীয় অগ্রগতির খুব কাছাকাছি রয়েছে: সেটি হলো ইসরায়েল এবং সৌদি আরবের মধ্যে ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি।”  ব্রিটানিকায় এটি এখন পর্যন্ত অপেক্ষমান বা প্রত্যাশিত চুক্তি হিসেবে উল্লেখ করা আছে। চুক্তিটি কি হয়ে গেছে নাকি এখনও ঝুলে আছে নাকি চূড়ান্ত না হলেও কোন সমঝোতায় পৌছেছে কিনা সেটা রহস্যঘেরা।

৩০ আগষ্ট, ২০২৩ এ ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল “Peace With Israel Means War With Iran.” সৌদি আরবের সাথে এই চুক্তির জের ধরেই ইরান তার প্রক্সি সংগঠনকে কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের ইন্ধন জোগায় এমন মতামত উঠে আসে অনেক বিশ্লেষণে। কারন এই চুক্তির ফলে সৌদি আরব পরমাণু শক্তি, সামরিক ও প্রযুক্তি সহায়তা পেতে যাচ্ছিল যা ইরান কোনভাবেই সমর্থন করেনা। যদিও একইরকম চুক্তির ফলে আমেরিকার সহায়তায় ইরান ১৯৫৭ সালে প্রথম পরমাণু কর্মসূচির সুযোগ পায় যা ছিল আমেরিকার “এ্যাটমস ফর পিস” প্রোগ্রামের অংশ ছিল। সৌদি আরবের সাথে আলোচিত এই চুক্তিকে বলা হচ্ছে “এ্যাটমস ফর পিস ২.০”। পুরনো কৌশল। সে যাই হোক, আমরা চুক্তির বিষয়টি খেয়াল করবো। এটি গুরুত্বপূর্ণ। ঐ সময় চুক্তিতে সৌদি আরবের প্রাপ্তির বিষয় কিছুটা জানা গেলেও বিনিময়ে ইসরায়েল কি পাবে সেটির কোনরকম ক্লু জানা যায়নি। তবে সম্ভাব্য ৭ বছরের এই চুক্তির ফলে সৌদি আরব সহায়তা পেলেও বিনিময়ে ফিলিস্তিনসহ মধ্যপ্রাচ্যে কতটা শান্তি ফিরে আসবে তা আশা করি বলার অপেক্ষা রাখে না।

বাইবেলে ৭ বছর মেয়াদী যে চুক্তির বিষয় পাওয়া যায় তার ব্যাখ্যা হলো ৭ বছরের অর্ধেক সময় অর্থাৎ সাড়ে তিন বছর হবে মিথ্যা শান্তি ও সমৃদ্ধির সময় যে সময়টাতে অ্যান্টিক্রাইস্ট ইসরায়েলবাসীর সাথে সমঝোতা করবে। সম্ভবত এই লাইনটি দ্বারা থার্ড টেম্পলের সূচনাকে বুঝায় যেটি ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। বাইবেলের উদ্ধৃতি অনুযায়ী এই সময়টুকু পার হওয়ার পরই হঠাৎ বিষ্ফোরণ হবে। অর্থাৎ চুক্তি ভঙ্গ হবে। বাইবেল অনুসরণ করলে তারা এ বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রেখে পরিকল্পনা সাজিয়েছে। সৌদির সাথে চুক্তিটি দীর্ঘদিন যাবৎ প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় আছে। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প এসেই যে এ ধরনের চুক্তির বিষয়ে জোর দিবেন তা কোন সন্দেহ নাই। এক হিসেবে তার জন্যই চুক্তিটি অপেক্ষমান এমনটাও বলা যায়। তার সংক্ষিপ্ত শাসনামলের শেষ মূহুর্তে থার্ড টেম্পল উদ্বোধনের পর বিদায় হওয়ার সম্ভাবনাকেও জোর দিয়ে বলা যায়।

এ চুক্তির ফলে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পরবে যে দুটি দেশ তারা হলো রাশিয়া ও ইরান। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়া ও ইরানের যত সামরিক ঘাঁটি আছে তা হুমকির মুখে পরবে। এছাড়া তাদের প্রক্সি বাহিনী, মার্সেনারি বাহিনীগুলো কোণঠাসা হবে বা পরাজিত হবে। সিরিয়ায় ইতিমধ্যে যে বিষয়টি ঘটে গেছে। এখানে রাশিয়াকে পিছু হটিয়ে ইরানকে টার্গেট করা মূল উদ্দেশ্য।

২২ ডিসেম্বর দ্যা জেরুজালেম পোস্টের কলামে বলা হচ্ছে “The fall of Assad is just the beginning”। মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে ইরানের আরো পরাজয়ের খবর হয়তো শীঘ্রই পাওয়া যাবে। আর রাশিয়াকে ইউক্রেনে ব্যস্ত রাখার এটা একটা অন্যতম কারণ। তারা চায় ইউক্রেনে রাশিয়া আরো শক্তি ব্যয় করুক যাতে অন্যদিকে ব্যয় করার শক্তি কমে যায়। সেখানেই সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেখাক যাতে অন্যদিকে ক্ষমতা দেখাতে না আসতে পারে। পরাজিত করতে না পারলেও একদল দৈত্যকার শক্তি রাশিয়াকে সেখানেই থিতু করে রাখতে চায় যাতে মধ্যপ্রাচ্যে মনোযোগ দিতে না পারে। আর এর পরিণতি হতে পারে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের পরাজয় যা হাদিসে উল্লেখিত পিছন দিককার শত্রুর পরাজিত হওয়ার হুবুহু ঘটনা।

তথ্য বিশ্লেষণ সাপেক্ষে সন্দেহাতীতভাবে বের হয়ে আসে যে আব্রাহাম অ্যাকর্ডসই হাদিসে উল্লেখিত রোমের সাথে মুসলমানদের ঐতিহাসিক সন্ধিচুক্তি এবং সুস্পষ্টভাবে হাদিস ও বাইবেলে উল্লেখিত সেই রাজা হলো দাজ্জাল/অ্যান্টিক্রাইস্ট।

এইটুকু পড়া শেষ হলে রোমানদের সাথে চুক্তি সংক্রান্ত হাদিস ও বাইবেলের উক্তিটি প্রয়োজনে আবার পড়ুন। তারপর আব্রাহাম চুক্তি ও সম্ভাব্য সৌদি-ইসরায়েল শান্তি চুক্তি এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটের সাথে মিলিয়ে দেখুন। আশা করি যেকেউ প্রতিটি বিষয় হুবুহু মিলাতে সক্ষম হবে। এখানে পিছন দিককার শত্রু তৎকালীন পারস্যকে (বর্তমান ইরান) আরবদেশগুলো ও পশ্চিমারা মিলে যেীথভাবে পরাজিত করার সমস্ত নকশা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। ইরানকে পরাজিত করার পরই ৮০টি পতাকা অর্থাৎ সব পশ্চিমা শক্তি এক হয়ে আরবদেশগুলোর উপর চূড়ান্ত আক্রমণ শুরু করবে। এই আক্রমণে ছদ্দবেশী মুসলমান সেই ভয়ংকর সুফিয়ানীর দলও থাকবে। আর হাদিস ও বাইবেল অনুযায়ী এই সমস্ত কিছুর আড়ালে আছে সেই রাজা। এই রাজা বলতে আশা করি রূপক অর্থে কোন পরাশক্তি বা নির্দিষ্ট কোন দেশকে বুঝানো হয়নি। এই রাজা একজনই, মিথ্যা মাসিহ বা মাসিহিদ দাজ্জাল।

মৃতকে জীবিত করার প্রযুক্তি

তিন হাজার বছরের পুরনো মমি করা মৃত ব্যক্তি কথা বলছে এমন খবর প্রচার করা হয় ২০২০ সালে নামকরা সব মিডিয়াগুলোতে। এআই এর সহায়তায় মৃত ব্যক্তির সাথে কথা বলার প্রযুক্তি আবিষ্কারের কথাও শোনা যায় একইরকম সময়ে। আলকোর ফাউন্ডেশন এবং ক্রায়োনিক্স ইন্সস্টিটিউট নামে দুই মার্কিন প্রতিষ্ঠান মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করার প্রযুক্তি আবিষ্কারের দারপ্রান্তে এমনটা দাবি করা হচ্ছে। শীঘ্রই তারা আশার আলো দেখবে বলে জানায়। এগুলো কি আসলেই প্রযুক্তির চমক নাকি দাজ্জালের ফিতনা তা নিয়েও নানা খবর প্রকাশিত হয়।

মৃত মানুষকে জীবিত করার বেশ কয়েকটি উদাহরণ আছে। হযরত মুসা (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.) এর এই মোজেজা সম্পর্কে আমরা জানি। এগুলো ছিল নবী রসূলদের উপর আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ মোজেজা। এছাড়া রোম সাম্রাজ্যের আসহাবে কাহাফের যুবকদের তিনশো বছর ঘুমিয়ে থাকার পর জীবিত হওয়ার ইতিহাসও আমরা জানি। এরপর দাজ্জাল মৃত ব্যক্তিদের জীবিত করতে পারার মতো অলৌকিক ক্ষমতা প্রাপ্ত হবে, হাদিসের ব্যাখ্যা থেকে সেটিও আমরা জানতে পারি। দাজ্জালকে এ ধরনের মোজেজা দেয়া হবে তবে সে যেহেতু পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজ তাই এই কাজের মধ্যেও ধোঁকা থাকবে। সে প্রকৃতপক্ষে মৃত মানুষকে জীবিত করতে পারবে না। বরং শয়তান জিনের সাহায্যে মৃত মানুষ বা অন্যান্য প্রানীর হুবুহু বেশ ধারণ করাতে পারবে।

এবার এআই প্রযুক্তি দিয়ে মৃত মানুষের সাথে কথা বলার আবিষ্কার সম্পর্কে জানুন। কোন মানুষের কণ্ঠ, ছবি, ভিডিওসহ অসংখ্য তথ্য এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে সংগ্রহ করে সেই মানুষকে ভার্চুয়াল রিয়ালিটি প্রযুক্তির মাধ্যমে আকৃতি দান করা সম্ভব হয়েছে। এখানে ঐ মানুষটির অসংখ্য তথ্য থেকে তার হুবুহু অবয়ব ধারণ করতেও সক্ষম এআই প্রযুক্তি। সে জীবিত নাকি মৃত সেটি কোন বিষয় নয়। মৃত হলেও ভিআর প্রযুক্তির মাধ্যমে তার সাথে কথা বলা বা গল্প করা সম্ভব। কিন্তু এতে করে কি সত্যিই মৃত মানুষ জীবিত হয়ে গেল? হলো না। এটি মৃতকে জীবিত করার ধোঁকাবাজির প্রথম ধাপ বলা যায়। আসল পর্ব এখনও শুরু হওয়া বাকি আছে।

তিন হাজার বছরের পুরনো মমি নাকি কথা বলছে! এরকম মৃত মানুষের সাথে কথা বলার মতো যত খবর মিডিয়াতে চাউর করা হচ্ছে এগুলো সব আসল পর্ব শুরুর আগে নর্মালাইলাইজেশন প্রক্রিয়ার অংশমাত্র। প্রকৃতপক্ষে মৃত মানুষকে জীবিত করার প্রযুক্তি আবিষ্কারের যে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে তা আসলে শয়তান জিনের সাহায্য নিয়ে মৃত মানুষের হুবুহু অবয়বকে সামনে আনা হবে। তার আগে মানুষের সামনে এটিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যেন বিশ্বাস করানো যায় যে সত্যি সত্যিই এমন কিছু হতে যাচ্ছে। এবং এস্কেটোলজিক্যাল ব্যাখ্যা এটাই যে বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক চিন্তার বহু মানুষ এমনকি বহু অসচেতন ধর্মপ্রেমী মানুষরাও দলেবলে এই আবিষ্কারের গুণগান গাইবে আর এই অভাবনীয় আবিষ্কারের পিছনে ছুটতে থাকবে! কিন্তু বিশ্বাসীরা জানে এই ধোঁকাবাজি আবিষ্কার সম্পর্কে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আগেই সতর্ক করে গেছেন। কোন সন্দেহ আছে যে এর আড়ালে দাজ্জাল বা অ্যান্টিক্রাইস্টের হাত রয়েছে? চোখের সামনে এই আবিষ্কারের কথা ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করা হচ্ছে তারপরও আমরা এর আবিষ্কারককে খুজে পাচ্ছি না! সে আড়ালে নিরলসভাবে চূড়ান্ত মূহুর্তের কাজ করে যাচ্ছে।

মৃত মানুষকে জীবিত করার প্রযুক্তি আবিষ্কারের পথে বিজ্ঞানিরা
ক্রায়োনিক্স নামের প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে মৃত মানুষকে জীবিত করার পথে বিজ্ঞানিরা এমন খবর প্রচার করা হচ্ছে। এটি কি আসলেই বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব আবিষ্কার নাকি দাজ্জালের ফিতনা?

এখন পর্যন্ত তার সমস্ত কাজ বা সে যেসব কাজ করবে বলে আমরা জানি তা সবকিছুই আড়ালে থেকে করছে। কারণ সে এখন প্রকাশ্যে আসবে না বা আসতে পারবে না যতক্ষণনা কন্সস্টানটিনোপল পুনরায় মুসলমানদের দখলে না আসে। নিচে আড়ালে থাকার ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

দাজ্জালের বিশ্ব শাসন

মুসলমানদের সালতানাত শেষ হয়ে যাওয়ার পর বৃটিশরা আসল, তারপর আসল আমেরিকা। এটা আমরা জানি। এবং তারপর আসতে যাচ্ছে জেরুজালেম। এটাও অনেকে জানি। অর্থাৎ প্যাক্স ব্রিটানিকা, প্যাক্স আমেরিকানা এবং প্যাক্স জুদাইকা। এবার ইতিহাসের নজিরবিহীর ঘটনাটি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। আর সেটি হলো, এই তিনটি শাসনব্যবস্থা প্রকৃতঅর্থে এক শাসকগোষ্ঠীর অধীনে পরিচালিত যে শাসকগোষ্ঠী নিজেকে আড়াল করে রেখেছে। এরা কারা এবং এ সম্পর্কে কিছু প্রমাণ নিচে তুলে ধরা হলো:

১. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরস্পরের মিত্র দেশ হওয়ার পরও কোন সংঘাত ছাড়া বিশ্ব শাসনের পর্ব ব্রিটিশদের কাছ থেকে আমেরিকায় হস্তান্তরিত হয়। ইতিহাসে এরকম আর কোন নজির নাই।

২. যে কয়টি ইহুদি পরিবারের কাছে সারাবিশ্বের ব্যাংকিং সিস্টেম, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, অস্ত্র ব্যবসাসহ বিশ্ব নিয়ন্ত্রণের সমস্ত চালিকা শক্তি ছিল, বিশ্ব শাসনের পালাবদলের পরও সেগুলোর কোন পরিবর্তন হয়নি। এগুলো ইরান বা রাশিয়ার অলিগার্কদের দখলে যায়নি।

৩. গ্রেটার ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এখন প্যাক্স আমেরিকানা থেকে প্যাক্স জুদাইকাতে স্থানান্তরিত করার চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ চলছে। আবার সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। স্বয়ং বৃটিশ-আমেরিকান জোট এই হস্তান্তর পক্রিয়ায় সহায়তা করে যাচ্ছে। এক শাসককে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পরাজিত করে তবেই না আরেক শাসনব্যবস্থার উদয় হয়। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? এক পরাশক্তি তার শাসন পর্ব আরেক স্থানে স্থানান্তরিত করছে কোনরকম সংঘাত ছাড়া! ব্রিটেন থেকে যেভাবে আমেরিকায় যায় একই পথ অনুসরন করে আমেরিকা থেকে জেরুজালেমে নেয়ার আয়োজন চলছে।

৪. আগের এই লেখায় আল আকসার সাথে বিশ্ব শাসন ব্যবস্থার অবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক তুলে ধরি। আল আকসা দখল-বেদখল এবং বিশ্ব শাসন যেন ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ একটা ধারাবাহিক পালাবদল। এটি প্রকাশ্যে যখন যার দখলে বিশ্ব তার দাপটে পরিচালিত হয়ে আসছে। কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর। মুসলমানরা পরাজিত হওয়ার পরও আল আকসা মুসলিম দেশ তুরস্কের অধীনে পরিচালিত হয়। এরপর সে দায়িত্ব সৌদি আরবের কাছে হস্তান্তরিত হয়। কিন্তু বাস্তবতা খুঁজলে দেখা যায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ আসলে অন্যকারো হাতে। আড়ালে এটি অন্য কারো নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়ে আসছে। এই আড়ালে থাকা শক্তি ও মুসলমান সালতানাত ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরের বিশ্ব শাসকের আসনে থাকা শক্তি এক।

এখন প্রশ্ন হলো এতবড় শক্তি হওয়ার পরও তারা আড়ালে কেন? দাজ্জালের সাথে কি তাদের কোন সম্পর্ক আছে?

উসমানীয় খেলাফতের পতনের পর প্রকৃতপক্ষে জায়োনিস্টদের হাতে বিশ্ব শাসনের ক্ষমতা চলে যায়। এটি রাতারাতি হয়নি। বরং অনেক আগে থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। বিশ্বের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় কয়েকটি ইহুদি অভিজাত পরিবারের হাতে যা এখন পর্যন্ত পরিবর্তন হয়নি। দেশ পরিবর্তন হয়েছে অর্থাৎ ব্রিটিশ থেকে আমেরিকায় গিয়েছে। নির্দিষ্ট সময় পরপর রাষ্ট্র প্রধানের পরিবর্তন হয় কিন্তু জায়োনিস্ট ইহুদিদের ক্ষমতা কখনও কমেনি বা পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু কি অদ্ভুত! এতো ক্ষমতাধর শাসকগোষ্ঠী হওয়ার পরও নিজেদের আড়ালে রেখেছে।

আমেরিকা থেকে বিশ্ব শাসন ব্যবস্থা স্থান পরিবর্তন করে জেরুজালেমে গেলেও মূল ক্ষমতার কোন পরিবর্তন হবে না। ব্রিটিশরা যেভাবে স্বেচ্ছায় আমেরিকার কাছে বিশ্ব শাসন ক্ষমতার আসন ছেড়ে দিয়েছিল, আমেরিকা ঠিক একইভাবে জেরুজালেমে এই ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এগুলো সবই আবরণগত পরিবর্তনমাত্র। মূল শাসন ব্যবস্থা একই শক্তির হাতে রয়ে গেছে। পার্থক্য শুধু তারা শেষবার আড়াল থেকে বের হয়ে প্রকাশ্যে শাসন করতে চায়। কিন্তু কেন?

কারণ তারা জানে তাওরাত অনুযায়ী ইহুদি রাষ্ট্র গঠন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ কারণে জায়নবাদীরা ছাড়া বিশেষ করে হারেদি ইহুদিরা এর কট্টর বিরোধী। বিবিসি বাংলার প্রাসঙ্গিক প্রতিবেদনটি পড়ুন যে ইহুদিদের অবস্থান ইসরায়েল রাষ্ট্রের বিপক্ষে। যাহোক, তারা এখন একটি বিশেষ আধ্যাত্মিক ক্ষমতা বলে সেই কাজটি প্রকাশ্যে করতে যাচ্ছে। এখানে ঝুকি আছে জানলেও তারা প্রকাশ্যে বিশ্ব শাসনের মোহাবিষ্ট হয়ে আছে। এই আধ্যাত্মিক শক্তিই হলো মাসিহিদ দাজ্জাল।

দাজ্জাল কত দিন রাজত্ব করবে?

সাহাবীগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছেন দাজ্জাল পৃথিবীতে কত দিন অবস্থান করবে? উত্তরে তিনি বলেন: সে চল্লিশ দিন অবস্থান করবে। প্রথম দিনটি হবে এক বছরের মত লম্বা। দ্বিতীয় দিনটি হবে এক মাসের মত। তৃতীয় দিনটি হবে এক সপ্তাহের মত। আর বাকী দিনগুলো দুনিয়ার স্বাভাবিক দিনের মতই হবে। মুসলিম, হাদিস: ৭১০৬

এই সময়কাল নিয়ে শায়খ ইমরান নযরের একটি ব্যাখ্যা আছে যা নিয়ে আলোচনা সমালোচনার কোন কমতি নাই। যারা সমালোচনা করেন জানা মতে তাদের কেউ আজ পর্যন্ত নিজস্ব গবেষণা দিয়ে ভিন্ন কোন মতামত প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। অথচ দাজ্জালের ফিতনা চারপাশে ছড়ানো। তার আত্নপ্রকাশটা শুধু বাকি আছে। শায়খ ইমরান নযরের গবেষণার সাথে মিল অবশ্যই থাকবে। তবে আরো কিছু বিষয় ভিন্ন আঙ্গিকে উল্লেখ করার সুযোগ আছে বলে মনে হয়।

যেহেতু তার জন্ম পৃথিবী সৃষ্টির শুরুতেই বা অন্তত নূহ আ. এর জন্মের পর এবং সে বন্দী অবস্থায় ছিল। এখন কবে কখন বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেল এবং সে এই মূহুর্তে ঠিক কোথায় অবস্থান করছে তা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান কেবল আল্লাহ’তায়ালার কাছেই আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু জানি তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকার চেষ্টা করব যে সূত্র ধরে উপরের তথ্যগুলো জানার সুযোগ হয়। আর এটি সত্য হলে তার রাজত্ব শুরু হয়েছে অনেক আগে ঠিক যখন শাসকগোষ্ঠী আড়ালে থেকে বিশ্ব শাসন পর্ব শুরু করে। এখানে নির্দিষ্ট দিন বা সময়ের উল্লেখ করব না। ঠিক কবে কখন তার শাসনকাল শুরু হলো এ জাতীয় সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ নিয়ে ঘাটাঘাটি না করাই উত্তম মনে হয়। আর সেটি আমার উদ্দেশ্যের জন্যও জরুরী না। বিষয়টি আবার উল্লেখ করছি – যখন থেকে শাসকগোষ্ঠী নিজেদেরকে আড়ালে রেখে বিশ্ব অর্থনীতি, ভূরাজনীতি ও কৌশলগত সমস্ত কিছুর নিয়ন্ত্রণ নেয়া শুরু করে ঠিক তখন থেকে দাজ্জালিক সময় শুরু হয়ে গেছে। এটি কি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর প্যাক্স ব্রিটানিকার শাসনামল নাকি তারও আগে সেই বিতর্কে যাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ না। ব্রিটেন ও আমেরিকা দুটি ভিন্ন ভিন্ন ভৌগলিক স্থান বটে। কিন্তু তাদের আড়ালের শাসকগোষ্ঠী অভিন্ন। এদের গ্লোবালিস্ট ফ্যামিলি বলা হয় যাদের মধ্যে রথচাইল্ড অন্যতম। এই পরিবারের উন্থান হয় পনেরো শতকের মাঝামাঝিতে। আর্থিক খাতের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও ফরাসী বিপ্লব থেকে শুরু করে বড় বড় যুদ্ধ বিগ্রহে তাদের ভূমিকার কথা জানা যায়। নিজেদের আড়ালে রেখে তারা সবকিছু করে এমন অভিযোগ আছে। এবং তারা যা কিছু করে তার একটা নামকরণ করা হয়েছে তা হলো কন্সপাইরেসি থিউরী, যা দিয়ে একটা গোলকধাঁধা তৈরির মাধ্যমে মানুষদেরকে ধোকা দিয়ে উদ্দেশ্য সাধন করা হয়। হতে পারে দাজ্জালিক শাসনপর্ব সেই থেকেই শুরু। যাহোক, এই শাসনপর্বের শুরুর নিশ্চিত দিনক্ষণ নিয়ে কোন বিতর্কে যেতে চাইনা। এটি শুরু হয়ে গেছে এবং তা এখন শেষের পর্যায়ে। এর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যারা মালহামার জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করছেন তাদের জন্য স্পষ্ট ধারনা থাকা আবশ্যক।

উপরের আলোচনা থেকে সিন্ধান্তে আসতে পারি যে তার আগমন হয়ে গেছে এবং আড়ালে থেকে তার বাহিনীদের দ্বারা বিশ্ব শাসন কার্য পরিচালনা করছে। একই সাথে চূড়ান্ত সময়ের প্রস্তুতি স্বরূপ সে তার এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। অন্যদের মতো একমত যে, হাদিসে উল্লেখিত প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন যথাক্রমে এক বছর, এক মাস ও এক সপ্তাহ কথাটি রূপক অর্থে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিজ্ঞজন শায়খ ইমরান নযরের গবেষণা যথার্থ যে, রূপক অর্থে উল্লেখিত প্রথম দিন সমান এক বছর যা ইতিমধ্যে ব্রিটিশ শাসনের মাধ্যমে শেষ হয়ে গেছে। এক সপ্তাহ অর্থাৎ আগের চেয়ে অনেক কম স্থায়িত্বের দ্বিতীয় দিনের শাসন আমেরিকার শাসন ব্যবস্থা তা নিয়েও কোন সন্দেহ নাই। দ্বিতীয় দিনের শাসনপর্বটি এই মূহুর্তে একদম শেষ পর্যায়ের ঠিক একধাপ আগ মূহুর্তে অবস্থান করছে। অথবা বলা যায় যে তা শেষ করে এখন তৃতীয় দিনের শাসন ব্যবস্থার কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে থার্ড টেম্পল উদ্বোধনের মাধ্যমে এই হস্তান্তর প্রক্রিয়া পাকাপোক্ত করবেন এমনটাই জানা যায়।

এখন জেরুজালেমে স্থান পরিবর্তন করে আর কত সময় তারা বিশ্ব শাসন করতে পারে তা বিশ্লেষণ করা ও তা নিয়ে তর্ক বিতর্ক করা জরুরী। তর্ক বিতর্কের মধ্য দিয়ে উত্তর বের হয়ে আসলে তা মজলুম মুসলমানদের জন্য একটি গাইড হতে পারে। তারা আরো ২০/৩০ বছর বিশ্ব শাসন করবে এমন ধারনার কোন ভিত্তি আমি খুজে পাইনি। প্যাক্স জুদাইকাকে তৃতীয় দিন ধরা হলেও প্রকৃতপক্ষে সেই প্রক্রিয়া আরো আগেই শুরু হয়ে গেছে। কারণ শাসকগোষ্ঠী বা দাজ্জালের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা নির্দিষ্ট কোন দেশ নয় বরং আড়ালে থাকা কতগুলো গ্লোবালিস্ট পরিবার। তাদের আরো দীর্ঘসময় ধরে বিশ্ব শাসনের কোন আলামত খুজে না পাওয়ার পিছনে নিজস্ব কিছু পর্যবেক্ষণ শেয়ার করছি:

▪ কোনো ইহুদিরাষ্ট্র ৮০ বছর টেকে না। অষ্টম দশকের অভিশাপ (Curse of the Eighth Decade) বা ইহুদিদের ৮০ বছরের অভিশাপ তারা করে বেড়াচ্ছে। তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ তালমুদের একটি ভবিষ্যৎবাণি থেকে এই ধারনা পাওয়া যায়। ইহুদিদের ইতিহাসও এমনটাই বলে। বর্তমান ইহুদি রাষ্ট্রের জন্ম ১৯৪৮ সালে এবং ২০২৮ সালে ৮০ বছর পূরণ হবে। ৮০ বছরের কিছু আগে পরেও যদি ভাঙ্গন শুরু হয় তবে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুই হচ্ছে ইসরায়েলের সবশেষ প্রেসিডেন্ট। এরপর তাদের রাজা এসে পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহতম একটা অস্থির সময় পার করে বিদায় হবে।

▪ ইহুদি রাব্বি হ্যানান বেক নভেম্বর ২০২৩ এ একটি সাক্ষাৎকারে জোর দিয়ে বলেন, “এটা শতভাগ নিশ্চিত যে ইসরাইল শীঘ্রই ধ্বংস হয়ে যাবে এবং সেই দিনটি খুব দূরে নয়। গাজায় যা ঘটেছে তা সত্যিকার অর্থে গণহত্যা এবং এটি ৮০ বছর আগে ইহুদি জনগণের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার সাথে খুব মিল রয়েছে যা ইহুদিবাদীরা এখন গাজার জনগণের সাথে একই আচরণ করছে।”

▪ আমরা জানি সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলো একটার সাথে আরেকটা সুতোয় গাঁথার মতো। থার্ড টেম্পল হয়ে যাওয়ার সাথে দাজ্জালের আবির্ভাব হওয়া সরাসরি সম্পর্কিত। তার মানে তার আগেই ইমাম মাহদির আগমন ঘটবে। আর ইমাম মাহদি ৭ থকে ১০ বছরের মধ্যে পৃথিবীতে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবেন। তাহলে ইমাম মাহদি পৃথিবীতে শান্তি ফিরিয়ে আনবেন আবার একই সাথে তারা তাদের রাজাকে নিয়ে নতুন বিশ্ব গড়বে ও আরো দীর্ঘ সময় ধরে শাসন করবে এটা হতে পারে না।

▪ হয়ত তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন। কিন্তু তোমরা যদি একই কাজের পুনরাবৃত্তি কর, তবে আমিও পুনরাবৃত্তি করব। আর আমি তো জাহান্নামকে কাফেরদের জন্য কারাগার বানিয়েই রেখেছি। [সূরা বনী ইসরাঈল: ৮] ইহুদিদের জুলুম নির্যাতনের প্রেক্ষিতে আয়াতটি নাযিল হয়। সবশেষ ফিলিস্তিনে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং হয়ত খুব শীঘ্রই এই মাত্রা আরো চরম আকার ধারন করতে পারে ও ছড়িয়ে পরতে পারে সারা দুনিয়ায়। সেই প্রেক্ষিতে তাদের উপর যে আল্লাহ’র ক্রোধের পুনরাবৃত্তি হবে তা উক্ত আয়াতে স্পষ্ট।

▪ ১৯৯০ সাল থেকে উপসাগরীয় যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মুসলমানদের উপর বড় ধরনের জুলুম শুরু হয় যা এখন পর্যন্ত চলমান। এই জুলুম নির্যাতনের সাথে হাদিসে উল্লেখিত নাশফ্, রাযফ্ এবং ঘন কালো অন্ধকার এই তিনটি পর্বের হুবুহু মিল খুজে পাওয়া যায়। অপর একটি লেখায় বিস্তারিত উল্লেখ আছে। ২০৩০ সালে এই জুলুম নির্যাতনের ৪০ বছর পূর্ণ হবে। ইতিহাস ও ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে ৪০ বছরের বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সম্পর্কে জানা যায় এবং ৪০ সংখ্যার স্পিরিচুয়াল গুরুত্বের উল্লেখ পাওয়া যায়। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ২০৩০ সালের পর বা এরই মধ্যে জুলুম নির্যাতন শেষ হবে ও মুসলমানরা ঘুরে দাড়াবে।

আসলে ২০/৩০ কেন, ঐ শাসকগোষ্ঠী এবং দুনিয়াজুড়ে তাদের অনুসারীরা মনে করে যে আরো অনেক লম্বা সময় তারা বিশ্ব শাসন করবে। যেটি তাদের পরিকল্পিত নতুন বিশ্ব হবে, ইনক্লুসিভ বিশ্ব হবে। যা নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডারের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে বলে মনে করে। এখন পর্যন্ত প্রতিটি বড় বড় ঘটনা তাদের সেই সুক্ষ পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছে। বিধি বাম! এবার দেখুন তাদের পরিকল্পনা প্রথম কোথায় হোঁচট খেতে পারে যার কথা একাধিকবার আগেও উল্লেখ করি। এটি অন্য কোথাও না। ভুল না হলে এটি হবে আমাদের এই অঞ্চলে। অর্থাৎ এই ভারত উপমহাদেশে। পাকিস্তানে প্রথম পরমাণু আক্রমণের মধ্য দিয়ে যে বিষয়ে বিস্তারিত এই লেখায় উল্লেখ করি। এটি তাদের পরিকল্পনা। এরপর যা হতে পারে তা তাদের পরিকল্পনার বাহিরে। আল্লাহ’র ক্রোধ আছড়ে পরবে। উল্কাপাত। যার ব্যাখ্যা হলো ইনসাফ প্রতিষ্ঠা হবে। অর্থাৎ টিকে থাকা অল্প কিছু মজলুমদের বিজয় হবে।

অতএব তাদের হাতে আর সময় নাই। নিচের ভিডিওতে ইসরায়েলের একজন ইতিহাসবিদের সাক্ষাৎকারে একই ইঙ্গিত পাবেন, শুনুন।

সম্প্রতি আল জাজিরায় প্রচারিত একটি প্রতিবেদনে একজন ইহুদি ইতিহাসবিদ দাবি করেন যে, জায়নবাদীরা তাদের শাসনকালের শেষ সময়ে অবস্থান করছে।

উক্ত হাদিসে প্রথম তিন দিনের সাথে চতুর্থ দিনের স্পষ্ট পার্থক্য আছে। প্রথম তিন দিনকে যেভাবে বলা হয়েছে বাকিদিনগুলো বলা হলো দুনিয়ার স্বাভাবিক দিনের মতো। অর্থাৎ এই বাকি ৩৭ দিন একদম নির্দিষ্ট করে দেয়া হলো। আর এটাই এখন পর্যন্ত বোঝাপড়া যে প্রথম তিন দিন সময় শেষ করে বাকিদিনগুলো সে দুনিয়াজুড়ে প্রকাশ্যে তান্ডব চালাবে। সেই কনস্টান্টিনোপল পুনরায় মুসলমানদের দখলে আসার পর।

সবশেষ, এতগুলো রেফারেন্সসহ আলোচনার পরও দাজ্জালের আগমন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ের কোথাও ভুল হতে পারে। কারণ সঠিক জ্ঞান কেবল আল্লাহর কাছে আছে। কিন্তু তার আগমন হয়ে গেছে, আড়ালে থেকে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে এবং আমরা এখন তার ফিতনার মধ্যে ডুবে আছি এসব ভেবে যদি সতর্ক থাকি তাহলে নিশ্চয় লাভ ছাড়া কোন ক্ষতি হবে না। আর এই আলোচনাকে যৌক্তিক মনে হলে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধোঁকাবাজের হাত থেকে বাঁচতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণের সময় এখনই।

What do you think?

16 Points
Upvote Downvote

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

মালহামা বা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে মজলুম মুসলমানদের বন্ধু বা মিত্র কারা?

মালহামা বা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে মজলুম মুসলমানদের বন্ধু কারা?

গাজওয়াতুল হিন্দ

গাজওয়াতুল হিন্দ, বাংলাদেশ প্রসঙ্গ এবং আমাদের করণীয়