in

LoveLove AgreeAgree OMGOMG AngryAngry

মালহামা বা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে মজলুম মুসলমানদের বন্ধু কারা?

মালহামা বা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে মজলুম মুসলমানদের বন্ধু বা মিত্র কারা?

মালহামা বা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বা শেষ জামানার ভয়াবহ যুদ্ধে মজলুম মুসলমানদের বন্ধু কারা সেটি অনেকেই ইতিমধ্যে জানেন। কারণ ভূরাজনীতিতে ইতিমধ্যে এক ধরনের মেরুকরণ হয়ে গেছে। তবে এখনও ধোঁয়াশা আছে। যাদের মনে করা হচ্ছে মিত্র, দিন শেষে সেটি নাও হতে পারে। যাদের মনে করা হচ্ছে মজলুম মুসলমানদের পাশে থাকবে কিন্তু দিনশেষে বাস্তবতা ভিন্নও হতে পারে। সম্প্রতি ছোট্ট একটি অনলাইন জরিপ করে বুঝতে পারি যে অনেকেই এ সম্পর্কে ভালো ধারনা রাখেন। তবে জরিপটি সংশ্লিষ্ট গ্রুপে ছিল যা থেকে সামগ্রিক চিত্র বোঝা সম্ভব না। কারণ এর বাহিরে বহু মানুষ বেখবর। চারপাশে যুদ্ধের দামামা শুরু হয়ে গেছে সে সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই কোন খবর রাখেনা। সম্ভাব্য ভয়াবহ যুদ্ধ সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষ যেখানে গাফেল সেখানে মজলুম মুসলমানদের মিত্র কারা সে আলোচনা বারাবারি মনে হতে পারে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা জানে শকুন দরজায় কড়া নাড়ছে। শীঘ্রই হয়ত এসব বিষয় পড়ার মতো অবস্থা আর নাও থাকতে পারে। তাই শত্রু মিত্র চিনে রাখার এখনই সময়।

শত্রু মিত্র চেনার উপায়

বিশ্ব দুটি দলে বিভক্ত হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে বলা যায় যার একটি পশ্চিমা শক্তি অপরটি পশ্চিমা বিরোধী। এখন শুধু ভাসমান ও দুই নৌকায় পা দিয়ে থাকা শক্তিগুলোর মেরুকরণের পালা। এই দুটি পক্ষই ধীরে ধীরে অন্ধকার এবং আলোর শক্তি হয়ে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে যাবে। এখানে কেউ যদি ভাবে যে, আপাতত পশ্চিমাদের সুবিধা আদায় করে পরে সুযোগ বুঝে সরে যাওয়া যাবে, এটা ভুল। কারা তাদের পক্ষে যাবে কারা বিরুদ্ধে যাবে এটা বাছাইয়ের চূড়ান্ত সময় এখনই। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যেমন তেমনি নিজেদের অগোচরেই ব্যক্তি পর্যায়েও এই বাছাই পর্ব চলছে। একটু ভিন্ন দৃষ্টি দিয়ে চারপাশ খেয়াল করলেই দেখবেন সম্প্রতি আমরা ভিনদেশী নানারকম এজেন্ডা দ্বারা বিভক্ত হয়ে যাচ্ছি। এটা আবাহনি-মহামেদান, আওয়ামী লীগ-বিএনপির বিভাজন না। আমরা এলজিবিটিকিউয়ের পক্ষে বিপক্ষে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছি। নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার পক্ষে বিপক্ষে। ইনক্লুসিভ শব্দের পক্ষে বিপক্ষে। ফিলিস্তিন নিয়ে আমরা বিভক্ত হয়ে গিয়েছি। সব জেনেবুঝেও ফিলিস্তিন নিয়ে যারা নিরব তারা আসলে নেতানিয়াহুর পক্ষ নিয়েছে। যদিও লোকলজ্জার কারণে তাদের অবস্থান এই মূহুর্তে স্পষ্ট করার মানসিক শক্তি নাই। কিন্তু বিভাজনটা তৈরি হয়ে গেছে। সময় সুযোগ বুঝে স্পষ্ট হবে। এভাবে সকল ধর্মের সমন্ময়ে নতুন এক ধর্মকে হাজির করার মহাপরিকল্পনা চলছে যার পক্ষ বিপক্ষ শ্রেণী তৈরি হবে। এই এজেন্ডাগুলোই আসলে ব্যক্তিপর্যায়ে আমাদেরকে দুটি দলে বিভক্ত করে ফেলছে যা ধীরে ধীরে প্রকট আকার ধারন করতে যাচ্ছে।

অনেকে মনে করেন ইহুদি জায়োনিস্ট ও তাদের সমর্থক পশ্চিমা শক্তিই বুঝি মজলুম মুসলমানদের একমাত্র শত্রু। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সম্প্রতি একটি কথা শোনা যায় যে, জায়োনিস্ট হওয়ার জন্য ইহুদি হওয়ার দরকার নাই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বলেন “জায়োনিস্ট হতে হলে আপনাকে ইহুদি হতে হবে না”। সত্য এটাই যে, বহু মুসলিম জায়োনিস্ট আরব বিশ্বসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যারা ছদ্দবেশী এবং যাদের অবস্থান সরাসরি মজলুমদের বিরুদ্ধে। এছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বীরাতো আছেই। আর তাদের পত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থক বা সুবিধাভোগীরা আছে আমাদের চারপাশে যারা কেউই অন্তত মজলুমদের বন্ধু হবে না।

শত্রু মিত্রের পার্থক্য করার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হলো এলজিবিটিকিউ। কারন এটি মহাপরিকল্পনার একটি অংশ। রাষ্ট্র, গোষ্ঠী, সংগঠন থেকে শুরু করে ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই মতবাদের হয়ে কাজ করলে, সমর্থন করলে, জেনেও কোন প্রতিবাদ না করলে তার অবস্থান সুস্পষ্টভাবে অন্ধকারের পক্ষে। যদিও এটিকেই তারা বলবে ডাইভার্সিটি, মানবাধিকার, আধুনিকতা, এটাই নাকি আলোর পথ! হিউমান রাইটস ওয়াচের মতে বিশ্বে ৬৩টি দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে সমকামীতা বেআইনি। এগুলো বেশিরভাগই মুসলিম দেশ। কিন্তু এর ভিতরও অনেক রাষ্ট্রযন্ত্র আছে যার মাধ্যমে মুসলিম দেশেও পরোক্ষভাবে এই মতবাদ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। কাজেই কোন আরব শাসক যদি তলে তলে এর সাফাই গায় তবে তাদেরকে মজলুমদের বন্ধু ভাবার কোন কারণ নাই।

মেরুকরণের শুরুতে অনেক দেশই পরাশক্তিদের চাপে তাদের মতো করে চলতে বাধ্য হতে পারে। কারণ সামরিক বাহিনীগুলো নিয়ন্ত্রিত থাকবে। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে যেভাবে পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে তা হলো প্রথমে দেশে দেশে গৃহযুদ্ধ দিয়ে শুরু হয়ে তা আঞ্চলিক যুদ্ধ এবং সবশেষ মহাযুদ্ধে রূপ নিবে। এইসব পরিস্থিতি ও সময়ের ব্যবধানে বদলে যেতে পারে শত্রু মিত্রের সমীকরণ।

চূড়ান্ত প্রস্তুতির জন্য দেশে দেশে ছদ্দবেশী শাসক গোষ্ঠী বসানো হয়েছে যারা প্রত্যেকে এক এবং অভিন্ন লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এদের চিহ্নিত করা সবার জন্য একটু কঠিন কাজ। তিনটি লক্ষণ শেয়ার করছি যেগুলো দেখলে চোখ বন্ধ করে ধরা যায় সে মজলুমদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ময়দান প্রস্তুতের কাজে ব্যস্ত। ১. এলজিবিটিকিউ নিয়ে প্রকাশ্যে অথবা আড়ালে সক্রিয় থাকা ২. ইনক্লুসিভ সমাজ গঠন ৩. ধর্মকে ব্যবহার করা (বিশেষ করে মুসলিম দেশে)। উল্লেখ্য ইনক্লুসিভ শব্দের মধ্যে যেহেতু ভালো ও মন্দের মারপ্যাঁচ আছে কাজেই এটি নিয়ে গোপনে কাজ করার প্রয়োজন নাই। কোন প্রশ্ন উঠলেই এই শব্দের এক ডজন ভালো মানে হাজির করা যায়।

মনে রাখার সুবিধার্থে উপরের আলোচনা থেকে কিছু বুলেট পয়েন্ট শেয়ার করছি:

▪ ইহুদি জায়োনিস্ট এবং পশ্চিমা জোট মজলুম মুসলমানদের বন্ধু হওয়ার কোন প্রশ্নই আসেনা।
▪ মজলুমদের শত্রু চেনার অন্যতম হাতিয়ার এলজিবিটিকিউ।
▪ পশ্চিমা সমর্থিত এবং তাদের সুবিধাভোগী আরব শাসকরা মজলুমদের বন্ধু না।
▪ পশ্চিমে হেলে থাকা নামধারী দেশী ও বিদেশী ইসলামী সংগঠনগুলো কখনও মজলুমদের বন্ধু হবে না। তবে এসব সংগঠনের বিশেষ করে অধঃস্তন পর্যায়ে অনেক নিবেদিতপ্রাণ মানুষ আছে যারা হয়ত ফিরে আসবে মজলুমদের কাতারে।
▪ সুবিধা আদায়ের বিনিময়ে পশ্চিমা ধ্যান-ধারনাকে লালন-পালন ও প্রচার করে আবার ইসলামিক কাজেও নিয়োজিত আছে এমন মানুষ আর যাই হোক মজলুমদের প্রকৃত বন্ধু হতে পারে না। এরা সুবিধাবাদী।
▪ দেশে দেশে ছদ্দবেশী শাসক গোষ্ঠী বসানো হয়েছে যাদের কাজ চূড়ান্ত পরিস্থিতি সামাল দেয়া। এরা খেলার পুতুল। এরা ভয়ংকর। এদেরকে মজলুমদের বন্ধু ভাবা হবে চরম বোকামী।
▪ পশ্চিমা মতাদর্শ বিরোধী এক পক্ষ আছে যারা মজলুমদের কথা বলে কিন্তু অবিশ্বাসী। এরা এখন চরম দোটানায়। পশ্চিমেও যেতে পারেনা আবার বিশ্বাসীদের কাতারেও আসতে পারে না। বাম সমর্থকরা এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। হয়ত তারা ফিরে আসবে। ক্ষেত্র বিশেষে নির্ভর করবে এরা মজলুমদের বন্ধু নাকি শত্রু।

এবার নিচে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ের উপর আলোচনার মাধ্যমে মজলুম মুসলমানদের বন্ধু চিহ্নিত করার চেষ্টা করবো।

রোমানদের সাথে মুসলমানদের সন্ধি চুক্তি ও চুক্তি ভঙ্গ

বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আলোচনার বিষয় হওয়া উচিত ছিল এই চুক্তির বিষয়টি। কিন্তু সেটির লেশমাত্রও কোথাও দেখা যায় না। রাতভর ওয়াজ মাহফিলের আলোচনায় নাই। কোন বিশ্লেষণে নাই। লাইভ ভিডিওতে নাই। বরং বাস্তবতা হলো মুসলমানদের থেকে খ্রিষ্টানরা এ ধরনের আলোচনায় বেশি সরব। যাহোক, ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, প্রত্যেক গবেষক, আলেম সমাজ, ভূরাজনীতি বিশ্লেষকদের এটি নিয়ে গভীরভাবে ভাবা উচিত। এখানে আমার ভাবনা শেয়ার করে রাখছি। হাদিসটি অনেকের জানা। তারপরও লেখার ধারাবাহিকতায় শেয়ার করছি।

“অদূর ভবিষ্যতে তোমরা রোমানদের (খ্রিস্টানদের) সাথে শান্তি চুক্তি করবে। পরে তোমরা ও তারা মিলে তোমাদের পিছন দিককার শত্রুর সাথে যুদ্ধ করবে। সেই যুদ্ধে তোমরা জয়ী হবে, গনিমত অর্জন করবে এবং নিরাপত্তা লাভ করবে। অবশেষে তোমরা ফিরে এসে একটা উঁচু সবুজ-শ্যামল ভূমিতে আশ্রয় নেবে। তখন এক খৃষ্টান ব্যক্তি ক্রুশ উঁচিয়ে ধরে বলবে, ক্রুশ জয়ী হয়ে গেছে। ফলে মুসলমানদের এক ব্যক্তি তাতে ক্রুদ্ধ হয়ে ক্রুশটিকে ভেঙ্গে ফেলবে। এই ঘটনার সুত্র ধরে রোমানরা বিশ্বাসঘাতকতা (সন্ধি চুক্তি ভঙ্গ) করবে এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হবে।”

“তখন রোমানরা তাদের রাজাকে বলবে, আরববাসীদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে আমরাই যথেষ্ট। ফলে তারা যুদ্ধের (মহাযুদ্ধের) জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে এবং তারা আশিটি পতাকার তলে সমবেত হবে। আর প্রতিটি পতাকার তলে বারো হাজার করে সৈন্য থাকবে।”

আল ফিতানের এক বর্ণনায় পাওয়া যায়, “তোমরা রোমানদের (খৃষ্টানদের) সাথে সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ হবে। এরপরে তোমরা একত্রে ‘টার্কস(বর্তমান রাশিয়া) এবং কারমান (ইরানের একটি প্রদেশ) আক্রমণ করবে। আল্লাহ তোমাদেরকে জয়ী করবেন

আল ফিতানের অপর বর্ণনায় বলেছেন, “তোমরা দশ বছরের জন্য (কোনও বর্ণনায় এসেছে সাত বছর) রোমানদের সাথে সন্ধি চুক্তি করবে। তোমরা এবং রোমানরা মিলে কুস্তুন্তুনিয়ার পেছনের দিককার শত্রুর সাথে যুদ্ধ করবে। যুদ্ধ শেষে ফেরার সময় তোমরা কুস্তুন্তুনিয়া দেখতে পাবে। এবার তোমরা এবং রোমানরা মিলে কুফা নগরী আক্রমণ করবে এবং একে ধ্বংস করে ফেলবে। এরপরে তোমরা এবং রোমানরা মিলে পূর্বের কিছু এলাকা (বর্তমান ইরান) আক্রমণ করবে”।

তবে অপর এক হাদিসে রোমানদের সাথে মোট ৪টি চুক্তি সাক্ষরিত হওয়ার কথা উল্লেখ পাওয়া যায়। মহানবী (সঃ ) থেকে বর্ণিতঃ তোমাদের রোমানদের মধ্যে টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এগুলোর ৪নং হিরাক্লিয়াসের বংশের এক ব্যাক্তির সাথে হবে এবং তা বছর টিকে থাকবে

হাদিস থেকে কয়েকটি মূল পয়েন্ট বের করে তালিকা তৈরি করা যাক-

▪ রোমানদের সাথে মুসলমানদের চুক্তি
▪ শান্তি ও নিরাপত্তা চুক্তি
▪ চুক্তির মেয়াদ ৭/১০ বছর
▪ রোমান ও মুসলমানরা সন্ধির পর একত্রে বিজয়ী হবে, গনিমত অর্জন করবে
▪ চুক্তি বাতিল এবং মুসলমানদের সাথে রোমানদের চূড়ান্ত যুদ্ধ ঘোষণা

প্রথমত, হযরত মুহাম্মদ (স.) এর সময়ে খ্রিষ্টান রোমান বলতে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যকে বুঝায়। এটি প্রথম রোমান সাম্রাজ্য। এ বিষয়ে দ্বিধান্বিত হওয়ার সুযোগ নেই। থিওলজিক্যাল ব্যাখ্যা অনুযায়ী পশ্চিমা সভ্যতাকে দ্বিতীয় রোমান সাম্রাজ্য হিসেবে ধরা হয় যার কেন্দ্র বর্তমান ভ্যাটিকান সিটি। এদের মধ্য থেকে অর্থোডক্স খ্রিষ্টানরা বিভক্ত হয়ে গেছে যারা বর্তমান রাশিয়ার মস্কো কেন্দ্রিক। এদেরকে থার্ড রোম বা তৃতীয় রোমান সাম্রাজ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কাজেই আমরা একটা চূড়ান্ত সিন্ধান্তে আসতে পারি যে, হাদিসে বর্ণিত রোমানরা হলো বর্তমান পশ্চিমা সভ্যতা। এই রোমানদের সাথেই মুসলমানদের চুক্তি ও চুক্তি ভঙ্গের বিষয়ে বলা হয়েছে। অনেকের মধ্যে এই ধারনা গেথে গেছে যে, হাদিসে উল্লেখিত রোমানরা হলো রাশিয়া এবং রাশিয়ানদের সাথেই চুক্তি হয়ে পশ্চিমাদের সাথে লড়াই করবে, পশ্চিমারা পরাজিত হয়ে রাশিয়া আবার সেই চুক্তি ভঙ্গ করে মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করবে। কে বা কারা এই ব্যাখ্যাটি মিলিয়ে দিলো জানা নাই। তবে বহু মানুষ এই ধারনা পোষণ করেন। আমি নিজেও তাই জানতাম। আসলে যে রোমানদের সাথে সন্ধি চুক্তি হবে তারা হলো বর্তমান পশ্চিমা জোট। আর যাদের সাথে বন্ধুত্ব হবে তারা হলো অর্থোডক্স খ্রিষ্টান। নিচে বিস্তারিত থাকবে।

পিছন দিককার শত্রু কারা?

দ্বিতীয়ত, এখানে পিছন দিককার শত্রু বলতে কাদেরকে বুঝানো হয়েছে? এরা যদি তৎকালীন পারস্য সাম্রাজ্য হয় তবে ব্যাখ্যা একরকম হবে আবার যদি বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যকে ধরা হয় তবে ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ উল্টে যাবে। এখানে বাইজেন্টাইন বা বর্তমান পশ্চিমা সভ্যতা অথবা বিচ্ছিন্ন হওয়া অর্থোডক্স খ্রিষ্টান সম্প্রদায় বা রাশিয়া উভয়ের কাউকে পিছন দিককার শত্রু হিসেবে ধরলে হাদিসটির ব্যাখ্যা মিলবে না। বর্তমান প্রেক্ষাপটেও বিষয়টি সহজে প্রমাণিত। যেমন সৌদি আরবসহ আরবদেশগুলো পশ্চিমাদের সাথে চুক্তি ও স্বার্থের বেড়াজালে যেভাবে আটকে আছে, বড় কোন সংঘাত ছাড়া তা থেকে বের হওয়া প্রায় অসম্ভব। সম্প্রতি রাশিয়ার সাথে ওপেক স্বার্থে ও বাহ্যিক কিছু বিষয়ে দহরমমহরম লক্ষ্য করা গেলেও সেই বেড়াজাল ছিড়ে আরবদেশগুলো রাশিয়ার সাথে বড় কোন সন্ধি চুক্তি করবে এটা অবাস্তব। ইরানের সাথে রাশিয়ার একাধিক চুক্তি হচ্ছে। হাদিসে বলা হচ্ছে “তোমাদের সাথে চুক্তি হবে”। এই তোমাদের বলতে আরবদেশ বুঝায়। কিন্তু ইরান তো আরবদেশ না। তাহলে কেনো এটা নিয়ে বিতর্ক? বরং আরবদেশগুলোর সাথে হাদিস ও বাইবেলের ব্যাখ্যা অনুযায়ী পশ্চিমাদের সাথে হুবুহু ফরম্যাটের সন্ধি চুক্তি ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে এবং সবচেয়ে বড় চুক্তিটি সৌদি আরবের সাথে যা সম্ভবত এখনও আলোচনার টেবিলে। আর এটি হওয়ার মধ্য দিয়ে হাদিস ও বাইবেলের ভবিষ্যৎবাণী সম্পূর্ণরূপে সত্য প্রমাণিত হবে। পরবর্তী একটি লেখায় আব্রাহাম চুক্তি সংক্রান্ত আরো বিস্তারিত থাকবে ইন শা আল্লাহ।

তাহলে পিছন দিককার শত্রু তৎকালীন পারস্য সাম্রাজ্য ছাড়া আর কেউ অবশিষ্ট থাকলো না। সে সময়ের পারস্য সম্রাট কিসরার (খসরু পারভেজ) যিনি মহানবী সা. এর ইসলামের দাওয়াত সম্বলিত চিঠি ছিড়ে ফেলেছিলেন যেই ধৃষ্টতা রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসও দেখাননি। এই পারস্য সাম্রাজ্য বা বর্তমান ইরানই হলো হাদিসে উল্লেখিত পিছন দিককার শত্রু। আরবদেশ ও পশ্চিমাদের মধ্যে সন্ধি চুক্তির পর একত্রে এদেরকেই পরাজিত করা হবে, সিরিয়ায় যার উদাহরণ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। যথাসাধ্য ভেবেচিন্তে আমার মতামত শেয়ার করলাম। বর্তমান প্রেক্ষাপটের সাথে এভাবে আশ্চর্যজনকভাবে হুবুহু মিলে যাওয়ার পরও এটি কারো আলোচনা/বিশ্লেষণে আসেনি কেন সেটিই বরং বিষ্ময়। আরো সুস্পষ্ট সমাধান পবিত্র কোরআনে আছে যা নিচের ধারাবাহিক আলোচনায় থাকবে।

মজলুম মুসলমান ও রাশিয়ার বন্ধুত্ব

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্পর্কে একটি ইন্টারপ্রিটেশন শেয়ার করে আসছি অনেক দিন হলো। এখানে আবার শেয়ার করছি। শত্রু মিত্র সম্পর্কে সিন্ধন্তে আসতে সহায়ক হবে আশা করি। সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় বিশ্লেষণ সাপেক্ষে ব্যক্তিগতভাবে এটি নিয়ে চূড়ান্ত সিন্ধান্তে পৌছায়, বাকিটা নিশ্চয় আল্লাহু আলম। এছাড়া বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ সাপেক্ষে আরো অনেকে এমন মতামত দিয়েছেন। সেদিক বিবেচনায় কেউ চূড়ান্ত হিসেবে না ধরলেও অবশ্যই পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।

বিষয়টির সারমর্ম হলো “জায়নবাদীদের পতন হবে রাশিয়ানদের হাতে আরো সুনির্দিষ্টভাবে এটি হবে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের হাতে। তার সাথে থাকবে মুসলিম লিডার।” ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, আল আকসা মুসলমানরা কখনও রক্তপাতের মাধ্যমে দখল করেনি। প্রথমবার হযরত উমর (রা.) দখল করে দ্বিতীয়বার সালাউদ্দিন আইয়ুবী। কোনবারই আল আকসা জয়কে কেন্দ্র করে রক্তপাতের কোন নজির নাই। তৃতীয়বার সেই সুসংবাদ আসলে সেখানেও কোন রক্তপাত হবে না ইন শা আল্লাহ। এটা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির সময়। জায়োনিস্টদের থার্ড টেম্পল তৈরি হলে তা বরং ধ্বংস হতে পারে অন্য কারো দ্বারা। এক্ষেত্রে রাশিয়া ছাড়া আর কাকে চোখে পরে!

এবার মূল আলোচনায় আসি। কথায় আছে শত্রুর শত্রু হলো বন্ধু। রাশিয়া ও নির্যাতিত মুসলমানদের ক্ষেত্রে এটা পুরোপুরি সত্য। দীর্ঘদিন ধরে একঘরে হয়ে থাকা রাশিয়া ও নির্যাতিত মুসলমানদের শত্রু এক। দীর্ঘদিন ধরে যে গোষ্ঠীর দ্বারা নির্যাতিত হয়ে আসছে মুসলমানরা সেই একই গোষ্ঠী কর্তৃক কোণঠাসা হয়ে আছে রাশিয়ার মতো পরাশক্তি। ন্যাটোর জন্মই হয় মূলত সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে কোণঠাসা করার জন্য। সামরিক, বাণিজ্যিক সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত তাদের ঘাড়ে আছে প্রায় ৩০ হাজার নিষেধাজ্ঞা। এতকিছুর পরও রাশিয়া টিকে আছে। একইভাবে মজলুম মুসলমানরাও টিকে আছে। এবার এই দুই পক্ষ এক হওয়ার পালা যে বন্ধুত্বের কথা বলা আছে পবিত্র কোরআনে।

প্রসঙ্গত রাশিয়ার কথা বললে কিছু মুখস্ত কথা শোনা যায়। বিশেষ করে চেচনিয়া ও সিরিয়ায় মুসলমান হত্যার প্রসঙ্গ সামনে আসে। সিরিয়ার বিষয়টি একটি গোলকধাঁধা। এখানে কে কাকে মারে, কোন বিদ্রোহী সংগঠন কার মদদে চলে এসব ঠাওর করাই কঠিন কাজ। এক্ষেত্রে ইরানের ভূমিকা বরং প্রশ্নবিদ্ধ। এখানে তুরস্ক, ইরান, আমেরিকাসহ সব পরাশক্তি যখন যাদের স্বার্থে আঘাত লাগে তখন তাদের শক্তির প্রদর্শন করে। বরং রাশিয়া এখানে না থাকলে শক্তি প্রদর্শনটা কেমন হতো সেটাই বিবেচ্য। তবে কৌশলগত কারণে রাশিয়ার অবস্থান ধরে নিলেও তারা দায় এড়াতে পারেনা। কিন্তু এই লেখায় বলতে চাচ্ছি যে চূড়ান্ত পর্যায়ে রাশিয়া মজলুম মুসলমানদের পক্ষে থাকবে যা নিচে রেফারেন্সসহ আলোচনা করা হয়েছে।

আর চেচনিয়া ঘটনার সময়কালটি দেখুন। প্রথম চেচেন যুদ্ধ ৯০ দশকের ঘটনা। দ্বিতীয় চেচনিয়া যুদ্ধ হয় ১৯৯৯ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত। যা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পুঁতে যাওয়া বীজের ফসল ছিল। তার প্রমাণ বর্তমান পরিবর্তিত চেচনিয়া যেখানে দেড় দশকের বেশি সময় ধরে বড় কোন সংঘাত নাই। পরিবর্তিত এই রাশিয়ার শাসনভার পাকাপোক্ত হয় ২০১২ সালের পর যখন প্রধানমন্ত্রী থেকে পুনরায় প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ভ্লাদিমির পুতিন। এটা নতুন রাশিয়া। এটা অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের রাশিয়া যাদের সাথে বন্ধুত্বের বিষয়ে পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে।

কোরআনের দুটি আয়াত শেয়ার করতে চাই যার একটি হলো “তোমরা ইহুদী ও নাসারাদের বন্ধু হিসাবে গ্রহন করো না” সুরা আল-মায়েদার ৫১।

এখানে নাসারা বলতে খ্রিষ্টানদের বলা হয় এবং ঢালাওভাবে সব খ্রিষ্টানদের এক কাতারে উল্লেখ করা হয় যা সঠিক না। এটি আসলে শয়তান পূজারী ইহুদি, খ্রিষ্টান বা যে কেউ হোক না কেন তাকেই বুঝায়। আর এদের সাথে বন্ধুত্ব করা নিষেধ।

উপরের আয়াতটি প্রায়শ শোনা গেলেও আরো একটি আয়াত কম শোনা যায়। সেটি হলো “আপনি সবার চাইতে মুসলমানদের সাথে বন্ধুত্বে অধিক নিকটবর্তী তাদেরকে পাবেন, যারা নিজেদেরকে খ্রিষ্টান বলে। এর কারণ এই যে, তাদের মধ্যে আলেম রয়েছে, দরবেশ রয়েছে এবং তারা অহঙ্কার করে না”– সূরা মায়েদাঃ ৮২। এরা কোন্ খ্রিষ্টান যাদের মধ্যে আলেম, দরবেশ আছে আবার অহঙ্কার করেনা? এরা ইউরোপ আমেরিকার ক্যাথলিক বা প্রটেস্টান্ট খ্রিষ্টান? না। এরা অর্থোডক্স খ্রিষ্টান যারা ভাটিক্যান সিটি থেকে বিভক্ত হয়ে এখন রাশিয়ার মস্কো কেন্দ্রিক। এটা ঠিক রাশিয়া বলে কথা না। খ্রিষ্টানদের মধ্যে যারা আলেম, দরবেশ এবং অহঙ্কার করেনা তারা যদি ল্যাটিন আমেরিকায়ও থাকেন তবে তাদের সাথে বন্ধুত্ব হবে। মালহামার প্রস্তুতি নিতে হলে আল্লাহর নির্দেশিত এই বন্ধুত্বকে মেনে একত্রে চলতে হবে। এটাই নির্দেশনা। কাজেই রাশিয়ান খ্রিষ্টানদের সাথে চুক্তি হয়ে ইহুদিদের পরাজিত করবে আবার এই অর্থোডক্স খ্রিষ্টান বা রাশিয়া চুক্তি ভঙ্গ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এমন ধারনা ভুল। এটা মনে করলে কোরআনের উক্ত আয়াতকে অস্বীকার করা হবে। চুক্তিটি পশ্চিমাদের সাথে এবং তারা সেটা ভঙ্গ করে মুসলমানদের সাথে চূড়ান্ত যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে। এটিই হবে প্রকৃতপক্ষে মালহামার চূড়ান্ত পর্ব। এতে রাশিয়া এবং অন্যান্য অর্থোডক্স মিত্ররা মজলুম মুসলমানদের পাশে থাকবে। বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং সম্প্রতি রাশিয়ার বদলে যাওয়ার গতিবিধিও তেমনটাই ইঙ্গিত করে।

শত্রু রাষ্ট্র নেই, রাষ্ট্রের ভিতর শত্রু আছে

সামগ্রিকভাবেআমাদের কোন শত্রু রাষ্ট্র নেই, রাষ্ট্রের ভিতর শত্রু আছে। ভারতে প্রায় ২০ কোটি মুসলমান, এছাড়া অন্য ধর্মের মানুষরাও মজলুমদের পক্ষে ছিল এবং থাকবে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকে দিয়ে সমগ্র দেশের জনগণকে মূল্যায়ন করা যাবে না। ইরানে শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে মোটাদাগে তিনটি পক্ষ আছে যার মধ্যে একপক্ষ্য মজলুমদের কাতারে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা আছে। ইসরায়েলের হারেদি ইহুদিরা জায়োনিস্টদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। ইউরোপ-আমেরিকার বিধর্মী তরুণরা মজলুমদের পক্ষে কাজ করছে। এছাড়া নিজ দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও যদি মুশরিকদের পক্ষে কাজ করে সেটিকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন? কাজেই প্রতিটি রাষ্ট্রের ভিতর থাকা শত্রুরা ইতিমধ্যে চিহ্নিত। পুরো রাষ্ট্র শত্রু নয়।

শত্রুপক্ষের শক্তি বিবেচনায় বন্ধুত্ব

আশিটি পতাকা তলে সমবেত হয়ে কারা চূড়ান্তভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করবে তা উপরের আলোচনায় আশা করি নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিশাল এই বাহিনীর শক্তি সামর্থও অকল্পনীয়। এই শক্তিকে মোটাদাগে নিচের দুই ভাগে ভাগ করা যায়:

  • বিশাল সামরিক শক্তি এবং
  • স্পিরিচুয়াল শক্তি

আমেরিকা ও মিত্র বাহিনীর যে বিশাল সামরিক শক্তি তা এক কথায় অপ্রতিদ্বন্দি। ন্যাটোর একক শক্তিবলেই তারা মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বের মাতব্বর যে ন্যাটোর সিংহভাগ ফান্ডিং এককভাবে আমেরিকা বহন করে। এই সামরিক শক্তির ব্যাপারে মোটামুটি সবাই জানলেও স্পিরিচুয়াল শক্তিকে মানুষ আমলে নেই না। কারণ এটি কামান, গোলাবারুদের মতো দৃশ্যমান নয়। অদৃশ্য শক্তি। তারা যে ডার্ক স্পিরিচুয়াল প্রাকটিস করে যুদ্ধক্ষেত্রে তার প্রয়োগ সবচেয়ে বেশি। উদাহরণস্বরূপ আল-আকসা ও ডম অফ দ্য রকের ক্ষেত্রে সামরিক শক্তি না বরং স্পিরিচুয়াল শক্তির ব্যবহার হয়। ইয়াহুদীদের লাল গাভী সাক্রিফাইস করাকে কোন সামরিক শক্তি দিয়ে মূল্যায়ন করা যাবে না। এটি নিঃসন্দেহে স্পিরিচুয়াল প্রাকটিস। এবং সামরিক শক্তি দিয়ে তা মোকাবিলাও করার বিষয় নয়। এই ডার্ক স্পিরিচুয়াল প্রাকটিসের চূড়ান্ত নির্মাণ হলো থার্ড টেম্পল যেখানে তাদের রাজা দাজ্জালকে বসানোর জন্য এতো আয়োজন। কাজেই এই দুটি শক্তিকেই আমলে নিতে হবে। এস্কেটোলজি দৃষ্টিকোণ থেকে এই শক্তি মোকাবিলার ক্ষেত্রে একটি স্বচ্ছ সমীকরণের ইঙ্গিত পাওয়া যায় আর তা হলো –

▪ বিশাল সেই সামরিক শক্তির মোকাবিলা হবে রাশিয়ানদের সাথে। রাশিয়া তাদের সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বী।
▪ স্পিরিচুয়াল শক্তির মোকাবিলা হবে মুসলমানদের সাথে। মুসলমানরা তাদের স্পিরিচুয়াল প্রতিদ্বন্দ্বী।

এর কোনটিই সহজ পথ নয়। রাশিয়াকে হয়ত কড়া মূল্য দিতে হবে তেমনি মুসলমানরা তাদের হারানো স্পিরিচুয়াল শক্তিকে ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত প্রতিপক্ষকে পরাজিত করা সম্ভব নয়।

মাওয়ালি বা নওমুসলিমদের দল কারা?

মাওয়ালি বা মাওয়ালা হলো ধ্রুপদি আরবির একটি পরিভাষা যা দ্বারা অনারব মুসলিমদের বুঝানো হতো। মাওয়ালি অর্থাৎ নওমুসলিমদের একটি দল শ্যামদেশে মজলুমদের বন্ধু হয়ে যোগ দিবে যখন তাদের উপর অত্যাচার জুলুম চরম আকার ধারন করবে। আবু হুরায়রা রা. এর বর্ণনায় সুনানে ইবনে মাজাহায় পাওয়া যায়, একটা সময় আসবে যখন বিশ্ব জুড়ে বড় বড় যুদ্ধ দেখা দিবে তখন আধুনিক অস্ত্রে স্বজ্জিত মাওয়ালিদের অর্থাৎ নওমুসলিমদের একটি দল সত্যের পক্ষে লড়াই করতে থাকবে। আল্লাহর এই বিশেষ সাহায্য যাবে শ্যামদেশে।

খুজে দেখার চেষ্টা করি যে, এই মাওয়ালি বা নওমুসলিমরা কারা? এখানে দুটি বড় শর্ত জুড়ে দেওয়া আছে। একটি হলো এরা অনারব হবে অর্থাৎ আরবদেশের বাহিরে অন্য কোন দেশ। দ্বিতীয়টি হলো এরা আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত থাকবে। অনারবদের মধ্যে দুটি অঞ্চল বা দল আছে যারা আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত। ১. রমজান কাদিরভের চেচেন বাহিনী। ২. ইরান বা ইরানের আইআরজিসি। শিয়া মতবাদের কারণে ইরানের বর্তমান ভূমিকা প্রশ্নবৃদ্ধ হলেও সময়ের পরিক্রমায় পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। তাদের ৩টি দলের একটি তুলনামূলক হক পথে আছে। পার্থক্য কেবল তারা খলিফাদের মধ্যে হযরত আলী (রা.) কে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। তবে সার্বিক দিক বিবেচনায় এক্ষেত্রে চেচেন বাহিনীকে অগ্রগণ্য হিসেবে ধরা যায়। অথবা এটি একক কেউ না হয়ে সম্মিলিত বাহিনীও হতে পারে।

বন্ধুদেশ আফগানিস্তান

খোরাসান হলো মধ্য এশিয়ার একটি ঐতিহাসিক অঞ্চল। মধ্যযুগে বর্তমান ইরানের উত্তরপূর্ব অঞ্চল, আফগানিস্তান, দক্ষিণ তুর্কমেনিস্তান, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তানের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল এই খোরাসানের অন্তর্ভুক্ত ছিল। অন্যসব দেশের কিছু অংশ করে হলেও বর্তমান আফগানিস্তানের সমগ্র অঞ্চলই খোরাসানের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে আফগানিস্তানের সম্প্রতি নাটকীয় উন্থান যেন অলৌকিকতাকেও হার মানায়। তাছাড়া সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও সবশেষ আমেরিকাকে পরাস্ত করে তাদের এই ধারাবাহিক উন্থান কিছু একটা ইঙ্গিত বহন করে। এ যেন রাসূলুল্লাহ (সা.) কথাকেই মনে করিয়ে দেয় – “যখন তুমি খোরাসানের দিক থেকে কালো পতাকাবাহী সৈন্য আসতে দেখবে, তখন তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাবে। কেননা তার মাঝে আল্লাহর খলীফাহ্ মাহদী থাকবেন।”

What do you think?

14 Points
Upvote Downvote

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

মধ্যপ্রাচ্য সংকট ও সমাধান, গ্রেটার ইসরায়েল ও আল আকসা মসজিদ

মধ্যপ্রাচ্য সংকট ও সমাধান; একটি এস্কেটোলজিক্যাল বিশ্লেষণ

দাজ্জালের আগমন

দাজ্জালের আগমন, আত্নপ্রকাশ এবং শাসনকাল