in

LoveLove AgreeAgree

উম্মাহর খলিফা ইমাম মাহদির আগমন

১ম পর্ব

ইমাম মাহদির আগমন

ইমাম মাহদি (অর্থঃ সুপথপ্রাপ্ত) হলেন এক ন্যায়পরায়ণ নেতা (ইমাম) যিনি উম্মাহর ক্রান্তিলগ্নে পৃথিবীতে আসবেন, ইসা আলায়হিস সালামের আগমনের কিছু আগে। তিনি নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হিস সালামের বংশধারা থেকেই আসবেন। মুসলিমরা তাকে কাবার সামনে খলিফার দায়িত্ব নিতে বাধ্য করবে। আল্লাহ তার দ্বারা অলৌকিক কাজ করিয়ে নেবেন, যা প্রমাণ করবে তিনিই প্রকৃত ইমাম মাহদি।

অনেক প্রখ্যাত মুহাদ্দিস যেমন ইমাম তিরমিজি, আবু দাউদ এবং ইবনু মাজাহ মাহদিকে নিয়ে আলাদা অধ্যায়ই রচনা করেছেন। কিছু আলিম বলেছেন, মাহদি সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো “তাওয়াতুর”। হাদিসের পরিভাষায় “তাওয়াতুর” বুঝতে হলে আগে মুতাওয়াতির বুঝতে হবে।

যে বিষয়ের বর্ণনাকারী এত অধিক সংখ্যক হয় যে, তাদের সবার পক্ষে মিথ্যা বলা বিবেকের কাছে অসম্ভব, সে বিষয়কে “মুতাওয়াতির” বলা হয়। আর বিষয়টির এভাবে বর্ণিত হয়ে চলে আসাকে “তাওয়াতুর” বলে।

সুতরাং ইমাম মাহদির বিষয়টি ইসলামিক এস্কেটোলজির অপরিহার্য অংশ। তবে অদেখা সকল এস্কেটোলজি সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে ঢালাওভাবে গ্রহণ করা যাবে না। বরং দুর্বল বর্ণনা থেকে সহিহ বর্ণনাকে আলাদা করতে হবে। অনেক প্রতারক ও ভণ্ড নানা হাদিসের মারপ্যাঁচ দেখিয়ে নিজেদের ইমাম মাহদি বলে দাবি করেছে। তাদের ফিতনা থেকে বাঁচতে সঠিকটা জানা আমাদের জন্য জরুরী।

ইমাম মাহদি ইসা আলায়হিস সালামের পুনঃআগমনের কিছুকাল আগে পৃথিবীতে আসবেন। তারা একসাথে মিথ্যা মাসিহের (আল-মাসিহ আদ-দাজ্জাল) বিরুদ্ধে লড়বেন, তাকে পরাজিত করবেন। দাজ্জালের পরাজয়ের মাধ্যমে সেকুলার ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটবে। পৃথিবীতে ইমান, শান্তি ও নিষ্ঠার এক নতুন প্রজন্ম শুরু হবে।

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا نَزَلَ ابْنُ مَرْيَمَ فِيكُمْ وَإِمَامُكُمْ مِنْكُمْ

তখন তোমরা কেমন থাকবে, যখন তোমাদের মাঝে ইসা আলায়হিস সালাম অবতরণ করবেন এবং তোমাদের ইমাম (মাহদি) তোমাদের মাঝে অবস্থান করবেন। [বুখারি ও মুসলিম]

জারির ইবনু আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, নবি করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

يَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَقُولُ أَمِيرُهُمْ تَعَالَ صَلِّ لَنَا فَيَقُولُ لَا إِنَّ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ أُمَرَاءُ تَكْرِمَةَ اللَّهِ هَذِهِ الْأُمَّةَ

মরিয়ম-তনয় ইসা আলায়হিস সালাম আসমান হতে অবতরণ করবেন। মুসলমানদের সেনা প্রধান মাহদি তাকে স্বাগত জানিয়ে বলবেন, আসুন! নামাজের ইমামতি করুন। ইসা আলায়হিস সালাম বলবেন, না, (তুমিই ইমামতি করো)। তোমাদের একজন অপরজনের নেতা। এই উম্মতের জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এ এক মহা সম্মান। [সহিহ মুসলিমঃ ১৫৬]

সত্যিকারের মাহদির বিশিষ্ট নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি হল, তিনি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের বংশধর হবেন, তাঁর কন্যা ফাতিমা রা. এর মাধ্যমে।

আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

لَا تَذْهَبُ الدُّنْيَا حَتَّى يَمْلِكَ الْعَرَبَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي يُوَاطِئُ اسْمُهُ اسْمِي

দুনিয়া ধ্বংস হবে না যে পর্যন্ত না আরব রাজ্যাধিপতি হবে আমার পরিবারের এক লোক, তার নাম হবে আমার নামের অনুরূপ। [সুনানু তিরমিজিঃ ২২৩৩]

উম্মু সালামাহ রা. সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি,

الْمَهْدِيُّ مِنْ عِتْرَتِي مِنْ وَلَدِ فَاطِمَةَ

মাহদি আমার পরিজন থেকে ফাতিমার সন্তানদের বংশ থেকে আবির্ভূত হবে। [সুনানু আবু দাউদঃ ৪২৮৪]

মাহদির আবির্ভাবের পূর্বে মিথ্যা মাসিহ পৃথিবীজুড়ে প্রাধান্য বিস্তার করবে। ফলে পৃথিবী কুফর, মূর্তিপূজা, জুলুম ও অত্যাচারে ভরে যাবে। মাহদি আল্লাহ ও ইমানদার মুসলিমদের সাহায্যে এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাবেন।

আবু সায়িদ আল-খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

الْمَهْدِيُّ مِنِّي أَجْلَى الْجَبْهَةِ أَقْنَى الْأَنْفِ يَمْلَأُ الْأَرْضَ قِسْطًا وَعَدْلًا كَمَا مُلِئَتْ جَوْرًا وَظُلْمًا يَمْلِكُ سَبْعَ سِنِينَ

আমার বংশ থেকে মাহদির আবির্ভাব হবে, সে হবে প্রশস্ত ললাট ও উন্নত নাকবিশিষ্ট। তখনকার দুনিয়া যেরূপে জুলুমে ভরে যাবে, সে তার বিপরীতে তা ইনসাফে ভরে দিবে, আর সে সাত বছর রাজত্ব করবে। [সুনানু আবু দাউদঃ ৪২৮৫]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

يَخْرُجُ فِي آخِرِ أُمَّتِي الْمَهْدِيُّ يَسْقِيهِ اللَّهُ الْغَيْثَ وَتُخْرِجُ الْأَرْضُ نَبَاتَهَا وَيُعْطِي الْمَالَ صِحَاحًا وَتَكْثُرُ الْمَاشِيَةُ وَتَعْظُمُ الْأُمَّةُ يَعِيشُ سَبْعًا أَوْ ثَمَانِيًا

আমার শেষ উম্মতের মাঝে মাহদি প্রকাশ পাবে। আল্লাহ তাআলা তাদের উপর কল্যাণের বারিধারা বর্ষণ করবেন। ভূ-পৃষ্ঠ গচ্ছিত সকল খনিজ সম্পদ উন্মোচন করে দিবে। ধন-সম্পদের সুসম বন্টন নিশ্চিত করবে। গবাদিপশু বৃদ্ধি পাবে। মুসলমানদের হারানো মর্যাদা ফিরে আসবে। সাত বা আট বছর তার রাজত্ব হবে। [মুস্তাদরাকে হাকিম-৪/৫৫৭-৫৫৮]

আরেক বর্ণনায় নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

يَكُونُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ خَلِيفَةٌ يَقْسِمُ الْمَالَ وَلَا يَعُدُّهُ

আখিরি যুগে এমন খলিফা আসবেন, যিনি মাল বণ্টন করবেন কিন্তু মোটেই গণনা করবেন না। [সহিহ মুসলিমঃ ২৯১৩]

মাহদির আবির্ভাব খুব দ্রুত হবে। কেউ তার ব্যাপারে সংশয়ে থাকবে না। অনেক প্রতারকই নিজেকে মাহদি বলে দাবি করেছে। কিন্তু সত্যিকারের মাহদি এক রাতেই প্রসিদ্ধি লাভ করবেন। মুমিনরা তাঁর তাকওয়া, নেতৃত্ব এবং কর্তৃত্বের ব্যাপারে কোনো দ্বিমত পোষণ করবে না।

আলী রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

الْمَهْدِيُّ مِنَّا أَهْلَ الْبَيْتِ يُصْلِحُهُ اللَّهُ فِي لَيْلَةٍ

মাহদি আমাদের আহলে বাইত থেকে হবে। আল্লাহ তাআলা তাকে এক রাতে খিলাফতের যোগ্য করবেন। [সুনানু ইবনু মাজাহঃ ৪০৮৫]

আলি কারি এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,

يُصْلِحُ الله أَمْرَهُ وَيَرْفَعُ قَدْرَهُ فِي لَيْلَةٍ وَاحِدَةٍ أَوْ فِي سَاعَةٍ وَاحِدَةٍ مِنَ اللَّيْلِ حَيْثُ يَتَّفِقُ عَلَى خِلَافَتِهِ أَهْلُ الْحَلِّ وَالْعَقْدِ فِيهَا

আল্লাহ তার বিষয়গুলো ঠিক করে দেবেন। তার মর্যাদা এক রাতে বা রাতের এক মুহুর্তে এমনভাবে উন্নীত করবেন যাতে কর্তৃত্বশীলরা তার খিলাফতের প্রতি অনুগত হবে। [মিরকাতুল-মাফাতিহ ৮/৩৪৩৯]

What do you think?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Dajjal's Fitnah and Sura Kahf

দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার দোয়া: সূরা কাহাফের দশ আয়াত

The Arrival of Imam Mahdi

ইমাম মাহদি: উম্মাহর কাঙ্খিত খলিফার আগমন