in ,

AgreeAgree LoveLove CryCry

মধ্যপ্রাচ্য সংকট ও সমাধান; একটি এস্কেটোলজিক্যাল বিশ্লেষণ

মধ্যপ্রাচ্য সংকট ও সমাধান, গ্রেটার ইসরায়েল ও আল আকসা মসজিদ

মধ্যপ্রাচ্য সংকট ও চলমান যুদ্ধবিধ্বস্ত কয়েকটি দেশের মানুষের দুর্ভোগ অতীতের যেকোন সময়ের চাইতে এখন অনেক বেশি। ধারনা করা হচ্ছে এ সংকট আরো তীব্র থেকে তীব্রতার হবে নিকট ভবিষ্যতে। এসব সমস্যা নিয়েতো কম আলোচনা, গবেষণা হয়নি! সমাধান কি হয়েছে? সমস্যা সমাধানের বুদ্ধিবৃত্তিক পরামর্শসহ ভুরি ভুরি নথিপত্রও আছে যেগুলো বেশিরভাগই বাস্তবসম্মত না অথবা বাস্তবায়ন পক্রিয়া শুরু হয়নি অথবা সম্ভব হয়নি।

সেসব কোনকিছু এই লেখায় অন্তর্ভুক্ত না। আমরা ইতিহাসের একটি চূড়ান্ত সময়ের ঠিক দারপ্রান্তে অবস্থান করছি যে সময়ের কেন্দ্রবিন্দু হলো মধ্যপ্রাচ্য। বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যের সংকট মানে সারা বিশ্বের সংকট। এর সমাধান মানে সারা বিশ্বের সংকটের সমাধান। মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমাধানের ভিন্ন রাস্তা অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হবে এই লেখায়। আশা করি এ পথ ধরে সমাধানের দিকে এগিয়ে যাবে মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্ব। অন্যভাবে জোর দিয়ে বলা যায় যে, ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে এস্কেটোলজিক্যাল ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে যা পাওয়া যায় সেসব পথ ছাড়া অন্য কোন পথে এই সংকটের সমাধান সম্ভব না।

মধ্যপ্রাচ্য সংকটের শুরু ও শেষ

প্রথমত

মরুভূমির মেষ পালকদের ভাগ্য খুলে যায় যে কারণে সে কারণেই তাদের বৈশ্বিক পরাশক্তির দ্বাসত্ব বরণ করতে হয়। মেষ পালকরা যার বিনিময়ে অট্টালিকার মালিক হলো, রাজা বাদশা বনে গেল, ঠিক একই কারণে আবার সংকটও শুরু হলো। আর সেটি হলো খণিজ সম্পদ। এই খণিজ সম্পদ যেমন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দূয়ার খুলে দেয় তেমনি তৈরি হয় সংকট।

দ্বিতীয়ত

জায়োনিস্টদের গ্রেটার ইসরায়েল প্রকল্প। এই মূহুর্তে মধ্যপ্রাচ্য সংকটের অন্যতম কারণ এটি। গ্রেটার ইসরায়েল ম্যাপের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোকে টার্গেট করা হচ্ছে, দখল করা হচ্ছে এবং এই চেষ্টা অব্যাহত আছে। একেক দেশে একেক ধরনের কৌশল অবলম্বন করে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি শুধু গ্রেটার ইসরায়েল প্রকল্প না বরং পশ্চিমাদের নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার প্রকল্পের অন্যতম বৃহৎ অংশ যেটিকে কেন্দ্র হিসেবে ধরে জায়োনিস্টরা নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এটি এই মূহুর্তে দৃশ্যমান হলেও পরিকল্পনা সাজানো হয় শতশত বছর আগে যার চূড়ান্ত বাস্তবায়ন পক্রিয়া এখন চলমান। এটি একটি বাস্তবতা এবং অনেক বড় সংকট। এটিকে এভাবে বলা যায় যে, মধ্যপ্রাচ্যের এই সংকট তীব্রতর হওয়া মানে সারা বিশ্বে যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠা। অর্থাৎ সংকট শুধু মধ্যপ্রাচ্যের না, সারা বিশ্বের।

আপাতদৃষ্টিতে খণিজ সম্পদ ও গ্রেটার ইসরায়েল প্রকল্প এ দুটি বিষয় সম্পর্কহীন মনে হলেও অন্তর্নিহিত কোন সমীকরণ থাকতে পারে। খণিজ সম্পদ দিয়ে আরববাসীদের হয়ত পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু সুরম্য অট্টালিকা আর ভোগ বিলাসই শুধু না এমন কি মুসলমান হয়ে অন্য মুসলমানদের হত্যা, জুলুম, জুলুমকারীদের সহায়তা করে তারা স্পষ্টতো সেই পরীক্ষায় ফেল করে। এবার শাস্তি ভোগের পালা। হাদিস অনুযায়ী শ্যামদেশের খণিজ সম্পদের কারণেই ফোরাত (ইউফ্রেটিস) নদীকে ঘিরে মহাযুদ্ধ সংগঠিত হবে। একই ভূমিতে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহতম ফিতনা দাজ্জালের আত্নপ্রকাশ ঘটবে যার নৃশংসতা পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে পরবে।

মধ্যপ্রাচ্যের যত সমস্যার কথা উল্লেখ করুন না কেনো সবকিছুর মূলে এই দুটি সমস্যা চূড়ান্তভাবে ঘুরেফিরে আসবে। সমস্যাগুলোকে দুটি পয়েন্ট আকারে পুনরাবৃত্তি করছি।

১. যে খণিজ সম্পদের বদৌলতে মেষপালক থেকে আরবরা অট্টালিকা/সম্পদের মালিক হলো সেই সম্পদই সমস্যার অন্যতম কারণ।

২. গ্লোবালিস্ট ফ্যামিলি/এলিট ইন দ্যা ওয়েস্ট/জায়োনিস্টদের হাজার বছরের স্বপ্নের গ্রেটার ইসরায়েল তথা থার্ড টেম্পল নির্মাণের বাসনা।

অত্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত এই দুটি সমস্যার আলোকে সমাধানের পথ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, আমরা হয়ত খুঁজে দেখার চেষ্টা করিনি। কোন্ সে পথ এবার সেদিকে নজর দেয়া যাক। বলে রাখা ভালো, এগুলো প্রচলিত কোন পথ না। এস্কেটোলজি নিয়ে অ্যালার্জি থাকলে শুধু শুধু পড়ে সময় নষ্ট না করাই উত্তম। আর যদি সত্যিকার অর্থে সমাধানের জন্য নিবেদিত হোন, তবে আশা করি এটাই অনুসন্ধানের একমাত্র পথ। এ পথ সম্পর্কে জানতে হবে। এ পথের পথিকরা হোচট খাবে, নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা হবে আবার ঘুরে দাড়াবে, এভাবেই পথের শেষ হবে। সুশীল আলোচনা দিয়ে এর কোন সমাধান নাই।

সংকট সমাধানে এস্কেটোলজিক্যাল পর্ব

এই মূহুর্তে সিরিয়ায় যে সংকট চলছে ঠিক সেখান থেকে সম্ভাব্য এস্কেটোলজিক্যাল পর্বগুলো নির্ণয়ের চেষ্টা করা হলো। এই পর্বগুলো আপাতদৃষ্টিতে চলমান সংকটকে তীব্র থেকে তীব্রতর করার অনুঘটক হিসেবে বিবেচিত হলেও প্রকৃতপক্ষ্যে এগুলোই চূড়ান্ত সমাধানের লক্ষ্যে পথ বাতলে দিবে। এগুলোই আমাদের পরিণতি এবং একই সাথে পরীক্ষার অংশ। এসব পরীক্ষায় মধ্য দিয়েই চূড়ান্ত সমাধানের দিকে পৌছাবে।

▪ গ্রেটার ইসরায়েল এবং নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার।
▪ পশ্চিমাদের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর শান্তি ও নিরাপত্তা চুক্তি।
▪ শ্যামদেশে তিনটি দলের উন্থান, সুফিয়ানীদের উন্থান।
▪ গ্রেটার ইসরায়েলের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোকে দখলের অব্যাহত প্রচেষ্টা।
▪ ভারত উপমহাদেশে ব্যাপক যুদ্ধ, সংঘাত, বিপর্যয়।
▪ আফগানদের উন্থান এবং পূবের যুদ্ধে তাদের অবদান।
▪ রাশিয়ানদের (অর্থোডক্স খ্রিষ্টান) সাথে মুসলমানদের মিত্রতা স্থাপন
▪ পরমাণু যুদ্ধ
▪ পূবে ব্যাপক ধ্বংসলীলা শেষে টিকেথাকা অল্পসংখ্যক মজলুমদের বিজয়।
▪ বিজয়ী দলের শ্যামদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা।
▪ আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত নওমুসলিমদের একটি দলের যোগদান।
▪ খণিজ সম্পদকে কেন্দ্র করে সৌদি আরবে গৃহযুদ্ধ।
▪ গ্রেটার ইসরায়েলের মধ্যে সৌদি আরবকে অন্তর্ভুক্তিকরণের চেষ্টা।

এই পয়েন্টগুলো সম্পর্কে মানুষের সাধারণ একটা ডায়ালগ ছিল একসময় যে, এগুলোতো অনেক দূরের ব্যাপার। যদিও চলমান পরিস্থিতি দেখে এই ডায়ালগ এখন কমে গেছে। তারপরও কেউ প্রশ্ন করলে তার জন্য একটিমাত্র পয়েন্টই যথেষ্ট, সেটি হলো গ্রেটার ইসরায়েল এবং থার্ড টেম্পল প্রকল্প। চোখের সামনে গ্রেটার ইসরায়েল প্রকল্প চলমান। আর থার্ড টেম্পলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন সময়ের ব্যাপারমাত্র। যদি এতটুকু বার্তা কানে পৌছে থাকে তবে জেনে রাখবেন বাকি পর্বগুলো একটার সাথে আরেকটা সুতোয় গাঁথার মতো। একটার পর একটা ঘটতে থাকবে। এবার উপরের ঘটনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় নিচে তুলে ধরার চেষ্টা করব।

সমাধানের গ্রেট আলামত গ্রেটার ইসরায়েল!

১৯১৭ সালে বেলফোর ডিক্লারেশনের মাধ্যমে যে সংকট শুরু হয় তার চূড়ান্ত পর্ব হলো গ্রেটার ইসরায়েল প্রকল্প। এই প্রকল্প একদিকে যেমন মধ্যপ্রাচ্যে সংকট ঘনিভূত করছে একই সাথে আমরা জানি যে এটি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা মানে পরবর্তী পর্ব আর দেরি নাই। গ্রেটার ইসরায়েল আসলে চূড়ান্ত সমাধানের সবচেয়ে বড় বা গ্রেট আলামত। কাজেই যা হচ্ছে তা অনিবার্য ছিল। বস্তুত এটি চূড়ান্ত সমাধানের দিকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। চূড়ান্ত ফলাফলও আমরা জানি। তাদের হাজার বছরের কল্পিত নতুন বিশ্ব চূড়ান্তরূপে বাস্তবায়িত হবে না। বরং এই জমিনের সবচেয়ে অস্থিরতম সময় পার হয়ে একটি চূড়ান্ত সমাধানের দিকেই এগিয়ে যাবে। এই কথার সাথে অনেকে দ্বিমত পোষণ করতে পারে। কারণ এরই মধ্যে একটি কথা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যে, গ্রেটার ইসরায়েল প্রকল্প সম্পন্ন করে একটা নির্দিষ্ট সময় অনেকের মতে আরো ২০ থেকে ৩০ বছর তারা বিশ্ব শাসন করবে। এই হিসাব আমি মিলাতে পারিনি। সুযোগ হলে অন্য কোন লেখায় বিস্তারিত শেয়ার করব। কিন্তু একথা স্পষ্ট যে, গ্রেটার ইসরায়েলের কাজ চূড়ান্তভাবে শুরু মানে সংকটও চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছাবে এবং তার পরিসমাপ্তি ঘটবে।

সুফিয়ানীর উন্থান

সিরিয়ায় হঠাৎ একটি দল আবির্ভূত হয়ে ঝড়ের গতিতে রাজধানী দামেস্ক দখলে নেয়াতে সুফিয়ানীর উন্থানের ব্যাপারটি অনেকের মাথায় আসে। যদিও এখানকার সমীকরণ মিলানো অনেক জটিল। পশ্চিমাদের ডিপ ফেইক চেনার অনেক উপায় আছে। কিন্তু নেক সুরতে আবির্ভূত হওয়া সুফিয়ানীকে চেনা সহজ না। এসব বেশিরভাগ দলেই পশ্চিমা চক্রান্ত যেমন আছে তেমনি সেই একই দলে আবার সত্যিকার মুজাহিদরাও আছে।

তবে এটি নিশ্চিতভাবে বলা যায়, শ্যামের পরিস্থিতির উন্নতি তো দূরের কথা বরং ভয়াবহ রকমের খারাপের দিকেই ইঙ্গিত করে। সেই ভয়াবহ খারাপটা হবে সুফিয়ানীদের হাত ধরে। শুধু সিরিয়া না বরং মিশর, জর্ডান, ইরাক, তুরস্ক, সৌদি আরবসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্য লন্ডভন্ড হয়ে যাবে। ভালো কিছু না সেটা নিশ্চিতভাবে বুঝা গেলেও সুফিয়ানীদের উন্থান নিয়ে এখনই কোন জোড়ালো মন্তব্য না করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করাই শ্রেয়। বাশার আল-আসাদের পতন, সময় ও চলমান পরিস্থিতি সুফিয়ানীদের উন্থান অতি নিকটে সেই সম্ভাবনাকেই ইঙ্গিত করে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নাই। কিতাবুল ফিতান ৮৩৪ নং হাদিসে বলা হয়েছে “যখন কালো ঝান্ডাধারিদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হবে তখন তাদেরকে তিনটিভাগে বিভক্ত হতে দেখবে। একদল বনু ফাতেমার দিকে। আরেকদল বনু আব্বাসের দিকে। আরেকদল তাদের নিজেদের দিকে।” কিতাবুল ফিতান ৮৩৫ নং হাদিসেও বলা হয় “যখন তাদের মধ্যে মতানৈক্য তৈরি হবে তখন শ্যাম অঞ্চলে তিন ধরনের ঝান্ডা প্রকাশ পাবে। ১. আবকা জাতির ঝান্ডা, ২. আসহাব জাতির ঝান্ডা এবং ৩. সুফিয়ানীর ঝান্ডা।

আশ্চয্যজনকভাবে সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল এখন বড় তিনটি দলের দখলে। তারপরও সব বিবেচনায় তিনটি দল উপরের তিনটি ঝান্ডাকে প্রতিনিধিত্ব করছে কিনা সে বিষয়ে এখনি চূড়ান্ত সিন্ধান্তে না গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা উচিত এবং তাদের কার্যক্রম ও সেখানে আরো কোন দলের আবির্ভাব ঘটে কিনা সেব্যাপারে সজাগ থাকা উচিত।

এখানে বাশার আল-আসাদের পতন একটি পর্বের শেষমাত্র। যে পর্বটি শেষ হওয়া জরুরী ছিল। অত্যাচার, জুলুমের অবসান হওয়া জরুরী ছিল। কিন্তু এস্কেটোলজি সম্পর্কে ধারনা রাখা প্রত্যেকে ইতিমধ্যে সমীকরণ মিলিয়ে ফেলেছেন যে, এই পর্বের শেষ মানে আরো কোন ভয়ঙ্কর সংকটের সূচনা হওয়া। হয়ত এ পর্বের মধ্য দিয়েই দাজ্জালের ভয়াবহতম ফিতনার সূচনা হলো যা মালহামার তৃতীয় বা চূড়ান্ত পর্বের দিকে নিয়ে যাবে। এবং এই চূড়ান্ত পর্যায়ের সংকটই বস্তুত সমাধানের পথ।

গাজওয়াতুল হিন্দ

গাজওয়াতুল হিন্দ নিয়ে আলাদা একটি লেখা আছে। অবস্থাদৃষ্টে নিশ্চিত ধরে নেয়া যায় যে, এই মূহুর্তে চোখের সামনে একটি বড় যুদ্ধের মহড়া চলছে ভারত উপমহাদেশে। এর নাম গাজওয়াতুল হিন্দ কিনা জানিনা তবে নিশ্চিতভাবে জানি খুব খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে। এটা একটা নতুন সংকট যা মধ্যপ্রাচ্য সংকটের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কারণ এটি গাজওয়াতুল হিন্দ হলে এই সিন্ধু নদের যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা অতি অল্পসংখ্যক মজলুমদের দল বিজয়ী হবে এবং তারাই যাবে মধ্যপ্রাচ্যে। সম্ভবত এটিই হবে প্রথম প্রকৃত বিজয়।

মধ্যপ্রাচ্যের সাথে সম্পর্কিত বিধায় এই ফাঁকে বিজয় প্রসঙ্গে ভিন্ন একটি আলোচনা করা দরকার। আবার সেই ১৯৯০ সালে ফিরে যাই। কারণ এই ৯০ হলো মুসলমান তথা এই সময়ের ভূরাজনীতির জন্য একটা ল্যান্ডমার্ক বলা যায়। তখন থেকে শুরু করে আজ অবধি মুসলিম লিডার, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ও রাষ্ট্রপ্রধানদের মৃত্যু বা পতন বা শাসনাবসান ঘটিয়ে আমরা মুসলিমরাই বিজয় উদযাপন করে আসছি।

সাদ্দাম হোসেন, মুয়াম্মার গাদ্দাফি, বাশার আল-আসাদ এর মূর্তি ভাঙ্গার একইরকম দৃশ্য
ইরাক থেকে লিবিয়া সবশেষ সিরিয়া, প্রায় হুবুহ স্টাইলে একেকটা শাসনপর্বের পতন হয়, বিজয়োল্লাস হয়, মুক্তির নিশ্বাস ফেলা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে মুক্তি মিলেনি বরং সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। বিশ্লেষণ অনুযায়ী প্রথম ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটবে সিন্ধু নদের যুদ্ধে যেখান থেকে প্রথম প্রকৃত বিজয় শুরু হবে।

ইরাক থেকে শুরু করে সিরিয়া পর্যন্ত সেই উদযাপনের একটা লম্বা তালিকা করা যায়। এগুলোর কোথাও অত্যাচারের মাত্রা এতটাই বেড়ে যায় যে সাধারণ জনগণের স্বার্থে সরকার পতন অনিবার্য হয়ে পরে, আবার কোথাও সেই প্রয়োজন সম্পূর্ণই প্রশ্নবিদ্ধ। কিন্তু একটা উদাহরণও কি দেয়া যাবে যেখানে এসব পতনের পর শান্তি-সমৃদ্ধি ফিরে আসছে? অথবা বিক্ষোভকারীরা সেই পতন পরবর্তী শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পেরেছে? এরকম কোন উদাহরণ নাই। বরং পরবর্তীতে অনেকেই বুঝে যায় যে এগুলো ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল। তারমানে এগুলো একেকটা পর্বের শেষমাত্র এবং পরবর্তী তীব্র সংকটের সূচনা। ইতিহাস সেটাই বলে। তাই অনেকে এই পর্বগুলোকে বিজয় বললেও কেউ কেউ আঁতকে ওঠে, কপালে ভাঁজ পরে। তবে আশার কথা হলো, এ সময়ের প্রতিটি ফিতনা বা চক্রান্তের আড়ালে খেলাফতের পথ লুকিয়ে আছে। মানে একদিকে তারা চক্রান্ত করবে তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কিন্তু উল্টা এরই মাধ্যমে একের পর এক মুক্তির পথ খুলে যাবে। কাজেই এসব পরিবর্তন যেমন ফিতনার অংশ তেমনি আবার আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য প্রতিষ্ঠার একেকটা ধাপ। কথাটি সবশেষ সিরিয়ার ক্ষেত্রে যেমন প্রযোজ্য তেমনি বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও।

আসলে প্রথম প্রকৃত বিজয় হবে যখন মূল চক্রান্তকারী বা তাদের দোসরদের কাউকে পরাজিত করা যাবে বা দখল হয়ে যাওয়া ভূমি পুনরুদ্ধার করা যাবে। বিগত ১০০ বছরেও এরকম কোন নজির নাই। আফগানিস্তানসহ কিছু উদাহরণ থাকলেও তা এখনও পর্যন্ত অসমাপ্ত। হাদিস অনুযায়ী ব্যতিক্রম হলো সিন্ধু নদের যুদ্ধ। তবে ধারনা করা হয় চূড়ান্ত যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই কাশ্মির ভূমি পুনঃদখলে আসবে। হতে পারে এই দখল/বেদখলকে কেন্দ্র করেই চূড়ান্ত লড়াই হবে। এই যুদ্ধে মজলুমরা প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে ধ্বংসস্তুপ থেকে দাড়িয়ে তারাই বিজয়ী হবে। এই বিজয়ী বাহিনী যাবে মধ্যপ্রাচ্যে বা শ্যামদেশে, সেখানকার সংকট সমাধানের জন্য। কিন্তু এই মূহুর্তের একেকটা পর্ব শেষ হওয়া মানে পরবর্তী আরো খারাপ পর্বের সূচনার ইঙ্গিত বহন করে। এটাই বাস্তবতা। আর এরকম একেকটা পর্ব শেষ হতেই এর পিছনে ষড়যন্ত্র না বুঝে বারবার তৃপ্তির ঢেকুর তোলার মানে হলো-

  • এস্কেটোলজিক্যাল দর্শন আমরা আমলে নেই না
  • আমরা ইতিহাস মনে রাখিনি
  • চক্রান্ত ধরতে পারিনি বা ধরার চেষ্টাও করিনি অথবা
  • এতকিছু ভাবার টাইম নাই

সৌদি আরবে গৃহযুদ্ধ

আলোচিত গ্রেটার ইসরায়েল ম্যাপের বড় অংশ জুড়ে আছে সৌদি আরব। গাজার পর লেবানন, এরপর সিরিয়া; এভাবে একের পর এক দেশে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে আগ্রাসন ও দখল অব্যাহত আছে। সৌদি আরবে কি হতে পারে? এর উত্তর মিলবে হাদিসে। রাসুল সা. বলেন তিনজন ব্যক্তি কাবায় বা মক্কায় যুদ্ধ করবে যারা প্রত্যেকে বাদশার সন্তান হবে কিন্তু এদের মধ্যে কেউই সফল হবে না। ব্যাখ্যায় আরো পাওয়া যায় এক বাদশার মৃত্যুর পর এটি ঘটবে। এই তিনজন বাদশার ছেলে বাদশা কারা?

“সৌদি আরব ভাগ বাটোয়ারা করে খাচ্ছে বাদশাহর তিন ছেলে”, দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার ২১ মে, ২০১৮ তারিখের একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম এটি। শিরোনাম গুগল করে বিস্তারিত পাওয়া যাবে। স্বচ্ছ পানির মতো সমীকরণ মিলাতে পারলেও ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত চেপে যাওয়াই উত্তম! বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ অনেকদিন হলো অসুস্থ। সৌদি আরবের আবহাওয়ার আমূল পরিবর্তন, নতুন স্বর্ণের খনিসহ এরকম আরো কিছু বিষয় পর্যবেক্ষণে থাকলে পরবর্তী পরিস্থিতিই বলে দিবে সমীকরণটা ঠিকঠাক এগুচ্ছে কিনা!

এখানেও কিন্তু খণিজ সম্পদের ভাগ বাটোয়ারাকে ঘিরে নিজ ভাইদের মধ্যে সংঘাত শুরুর উল্লেখ পাওয়া যায় যা ক্রমেই ভয়ঙ্কর রূপ ধারন করবে এবং গৃহযুদ্ধে পরিণত হবে। এর সাথে নিচের তিনটি বিষয় সরাসরি সম্পর্কিত:

১. পশ্চিমাদের সাথে শান্তি ও নিরাপত্তা চুক্তি
২. সৌদি আরবে সুফিয়ানীদের তাণ্ডব
৩. ইমাম মাহদির আত্নপ্রকাশ

দাজ্জালের আগমন সংক্রান্ত লেখায় পশ্চিমাদের সাথে আরবদের শান্তি ও নিরাপত্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই চুক্তি নিয়ে অনেকে এখনও দ্বিধান্বিত যা দূর করা জরুরী। আমার মাথায়ও ভিন্ন ধারনা ছিল যদিও কোনভাবেই মিলাতে পারতাম না কিন্তু এখন মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে গেছে। এই চুক্তির পরবর্তী কোন এক পর্যায়ে তিন ভাইয়ের দ্বন্দ্বে ঘি ঢালবে পশ্চিমা চক্রান্ত ও সুফিয়ানীরা যাদের দ্বারা সৌদি আরবে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চলবে। তিন নাম্বারটি হবে প্রথম টার্নিং পয়েন্ট। অর্থাৎ ইমাম মাহদির আত্নপ্রকাশ হবে গ্রেটার ইসরায়েল প্রকল্পের টার্নিং পয়েন্ট। এখানেই তারা থমকে যাবে। এর আগ পর্যন্ত বিশেষ ক্ষমতাবলে একের পর এক ভূমি দখল করলেও এই পর্যায়ে চোরের দশ দিন গেরস্তের এক দিন অবস্থা! আর এখানেই একটি উত্তর আমি খুজে পাই তা হলো- অনেকে বলেন যে গ্রেটার ইসরায়েল হওয়ার পর তারা আরো ২০-৩০ বছর বিশ্ব শাসন করবে যে হিসাবটি আমি মিলাতে পারিনি। তাদের বিশ্ব শাসন পর্বের সময়সীমা অর্থাৎ প্যাক্স জুদাইকা যাকে বলে তা সম্ভবত অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছে এবং এখন তা শেষের পর্যায়ে। এটিও বিস্তারিত আলোচনা করব ইন শা আল্লাহ। এর সাথে চতুর্থ যে বিষয়টি সম্পর্কিত তা হলো, এরই মধ্যে সিন্ধু নদের যুদ্ধ বা ভারত উপমহাদেশের যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা এবং বিজয়ী দলের মধ্যপ্রাচ্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করার পালা। এবার মিলিয়ে দেখুন, সংকট চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছার পর সমাধান আসবে কিনা? এগুলো আমার বানানো কোন গল্প না। শুধু হাদিস না, একাধিক এস্কেটোলজিক্যাল গ্রন্থ থেকে প্রায় একই ধরনের সমাধানের উল্লেখ পাওয়া যাবে।

আরো যে পয়েন্টগুলো বাকি থাকলো তার অনেককিছু বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন লেখায় আছে। সুযোগ হলে পরবর্তী কোন ব্লগে সাজিয়ে গুছিয়ে শেয়ার করার চেষ্টা করব।

সবশেষে খণিজ সম্পদ নিয়ে যে সংকট তার সমাধান নিহিত সেই খণিজ সম্পদকে ঘিরেই একটি মহাযুদ্ধের মাধ্যমে যে যুদ্ধের কথা হাদিসে বলা আছে, যেখানে হাজারে নয়শ নিরানব্বই জন মারা যাবে। গ্রেটার ইসরায়েল, থার্ড টেম্পল তৈরি করাকে ঘিরে যে সংকট তার সমাধান নিহিত সেই মহাযুদ্ধ পরবর্তী দাজ্জালের মৃত্যুর মাধ্যমে। এগুলো কোনটাই নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটি, আলোচনার টেবিল বা কোন পরাশক্তির মধ্যস্ততায় সমাধান হবে না। সংকটের সমাধান হবে রক্তের বিনিময়ে।

What do you think?

20 Points
Upvote Downvote

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

অন্তরের কঠোরতা এবং এর শাস্তি

অন্তরের কঠোরতা: কুরআন ও হাদিসে অন্তরের কঠোরতার শাস্তি

মালহামা বা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে মজলুম মুসলমানদের বন্ধু বা মিত্র কারা?

মালহামা বা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে মজলুম মুসলমানদের বন্ধু কারা?