প্রথমত আমি নিজেই একজন এস্কেটোলজি বিষয়ের ছাত্র। এটি নিয়ে একাডেমিক পড়াশোনা হয়, অসংখ্য বই আছে, ভিডিও ডকুমেন্টারি আছে, বিভিন্ন অনলাইন সার্টিফিকেশন কোর্স আছে। আমার একাডেমিক পড়াশোনা বা কোন সার্টিফিকেশন নাই। গত কয়েক বছর নিজের মত করে যা জানার চেষ্টা করেছি সেখান থেকে কিছু বিষয় শেয়ার করব।
বিশেষ করে বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এস্কেটোলজিক্যাল গবেষণা যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা তুলে ধরার চেষ্টা করব। উন্নত সামরিক বাহিনীতে এস্কেটোলজিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। সামরিক বিশ্লেষণেও এস্কেটোলজির অনবদ্য ভূমিকা রয়েছে। এমন কি বড় বড় যুদ্ধের ক্ষেত্রে ধর্মীয় গ্রন্থভিত্তিক পর্যালোচনাকে বিবেচনায় নিয়ে মৌলিক সিন্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। নিচের আলোচনা থেকে বিষয়গুলো সম্পর্কে সম্যক ধারনা হবে আশা করি।
এস্কেটোলজি কি?
এস্কেটোলজি হলো শেষ জামানা (আখিরুজ্জামান) সংক্রান্ত ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। এটি প্রাচীন গ্রীক শব্দ ἔσχατος (éschatos) থেকে এসেছে যার অর্থ শেষ, এবং logy শব্দের অর্থ অধ্যয়ন। শাব্দিক অর্থ দারায় শেষ জামানা সংক্রান্ত অধ্যয়ন। সোজা কথায় শেষ জামানার বিদ্যা, তথ্য-উপাত্ত, থিওলজিক্যাল ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের সমাহার হলো এস্কেটোলজি। ইব্রাহিম আ. এর বংশধর এবং এর বাহিরে (আব্রাহামিক ও নন-আব্রাহামিক) অর্থাৎ ইহুদি, খ্রিষ্টান এবং মুসলমানসহ সকল ধর্মগ্রন্থে মৃত্যু, পুনরুত্থান, বিচারদিবস ইত্যাদি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আছে এবং শেষ জামানা নিয়ে অসংখ্য আলামত, তথ্য উপাত্ত আছে যেগুলো এস্কেটোলজির অন্তভুক্ত।
অন্যভাবে বলা যায়, ঈসা আ. এর দ্বিতীয় আগমনের সাথে সম্পর্কিত যত ঘটনা আছে, অর্থাৎ ওনার আগমনের আগে ও পরে কি কি ঘটবে তা সম্পর্কে সুষ্পষ্টভাবে ধর্মগুন্থে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ পাওয়া যায়। ঈসা আ. এর দ্বিতীয় আগমনের সাথেই মালহামা বা আর্মাগেডন সম্পর্কিত। সংজ্ঞাগত কিছু পার্থক্য থাকলেও মালহামা বা আর্মাগেডনকেই বলা হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। তার মনে এই প্রতিটা বিষয় কতটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে কতটা গুরুত্ব বহন করে তা নিশ্চয় বুঝতে আর বাকি থাকার কথা না। এ সব কিছুই এস্কেটোলজির অংশ।
ইসলামিক এস্কেটোলজি
পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত উপরোল্লেখিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের সমাহার হলো ইসলামিক এস্কেটোলজি। হাদিসে শেষ জামানার যুদ্ধ, প্রাকৃতিক ও কৃত্তিমভাবে তৈরি দুর্যোগ ও নানারকমের ফিতনা সম্পর্কে বলা আছে যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে চুলচেরা বিশ্লেষণের দাবি রাখে। ভূরাজনীতি, প্রকৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অসংখ্য ঘটনা আমাদের চোখের সামনে ঘটে যাচ্ছে যার সাথে কোরআন হাদিসের তথ্য উপাত্তের হুবুহু মিল খুজে পাওয়া যায়। এসব ঘটনার ধারাবাহিকতায় আগামীতে কি ঘটতে পারে সেগুলোরও বর্ণনা আছে। যেমন শ্যামদেশ বা বর্তমান সিরিয়া ও তার আশেপাশের এলাকার চলমান যুদ্ধ নিয়ে অনেক হাদিস আছে যা থেকে আমরা চলমান পরিস্থিতি নিয়ে স্পষ্ট ধারনা পেতে পারি। হাদিসগুলো সার্চ করলেই পাওয়া যায়, তাই এখানে আর আলাদা করে শেয়ার করলাম না। এসব বর্ণনায় চলমান ফিলিস্তিনের বর্বরতার কারন ও পরিণতি সম্পর্কে জানা যাবে। ভারতবর্ষের সম্ভাব্য বড় যুদ্ধ নিয়ে জানা যাবে। থার্ড টেম্পল তৈরি, নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা ও এর পরিণতি ইত্যাদি সম্পর্কে বলা আছে। এরকম অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর ও দিক নির্দেশনা পেতে ইসলামিক এস্কেটোলজি অত্যন্ত গরুত্বপূর্ণ উৎস। তবে এ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ও সতর্কতামূলক কিছু পয়েন্ট মাথায় রাখা প্রয়োজন যা নিচে উল্লেখ করছি:
➤ এস্কেটোলজি সংক্রান্ত অধিকাংশ হাদিসগুলোকে দুর্বল হাদিস হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এর একটি কারন এগুলো ভবিষ্যৎকে নিয়ে বলা হাদিস। তাই এর উৎস নিয়ে যেমন প্রশ্ন থাকতে পারে, তেমনি ভবিষ্যৎ হওয়ায় যতক্ষণ বাস্তবায়ন না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এগুলো দুর্বল না সহি তা প্রমাণ করা সম্ভব না। তবে কোনটির আলামত দেখা গেলে সেটি নিয়ে চুলচেরা গবেষণা শুরু করা উচিত।
➤ আখিরুজ্জামান সংক্রান্ত কোরআন হাদিসের ব্যাখ্যায় কোন ঘটনার এক্সাক্ট দিনক্ষণ বলা নাই। বিভিন্ন আলামতের কথা উল্লেখ আছে। তাই এক্সাক্ট সময় বা দিনক্ষণ বলা নিয়ে বারাবারি না করাই ভালো। এ নিয়ে বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে বরং আলামতের উপর জোড় দেয়া উচিত।
➤ পবিত্র কোরআন ও হাদিসে উল্লেখিত শেষ জামানা সংক্রান্ত ব্যাখ্যা ছাড়া অন্যগ্রন্থে উল্লেখিত ব্যাখ্যার উপর মুসলমানদের বিশ্বাস স্থাপনের কোন সুযোগ নাই। তবে বিশ্লেষণ বা গবেষণার খাতিরে সেগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করা যায়।
➤ শেষ জামানা নিয়ে অনেক জাল, বানোয়াট হাদিস ছড়ানো হচ্ছে অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য। এগুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত।
➤ ইসলামিক এস্কেটোলজির অন্যতম আলোচনার বিষয় ইমাম মাহদী। ইতিহাসে এ পর্যন্ত কয়েকশ ইমাম মাহদীর আবির্ভাব ঘটেছে আবার চলেও গেছেন। সবাই মিথ্যা দাবিদার ছিলেন। তাই এ ধরনের খবর ছড়ানোর আগে যাচাই করে নেয়া আবশ্যক।
খ্রিষ্টান এস্কেটোলজি এবং অন্যান্য
বাইবেল থেকে পাওয়া ইন্ড টাইম এবং ঈসা আ. এর দ্বিতীয় আগমনের পূর্বে ও পরের ঘটনা সংক্রান্ত অধ্যয়ন হলো খ্রিষ্টান এস্কেটোলজি। এগুলোকে বিবলিক্যাল প্রফেসি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। একইভাবে জিউস এস্কেটোলজিকেও সংজ্ঞায়িত করা যায়। এ সংক্রান্ত নিচে কিছু পয়েন্ট শেয়ার করছি:
➤ শেষ জামানার অধিকাংশ বড় বড় আলামতগুলো সব আব্রাহামিক ধর্মগ্রন্থে আছে। হয়ত নাম ভিন্ন। যেমন বাইবেলে গোগ এবং মাগোগ সেটি হাদিসে ইয়াজুজ ও মাজুজ, বাইবেলে আর্মাগেডন হাদিসে মালহামা ইত্যাদি। আবার শ্যামদেশ বা বর্তমান সিরিয়া ও তার আশেপাশের অঞ্চল সম্পর্কে প্রায় কাছাকাছি ধরনের ভবিষ্যৎবাণী আছে এগুলোতে।
➤ এস্কেটোলজিক্যাল দলিলের ক্ষেত্রে ইসলাম ও খ্রিষ্টানদের মধ্যে অনেক বিষয়ে মিল থাকলেও ইহুদের সাথে অমিল রয়েছে। অথবা মূল গ্রন্থের পরিবর্তন করায় তথ্যের ধারাবাহিকতা ভিন্ন হয়ে গেছে। বিশেষ করে ইহুদি জায়োনিস্টরা তাদের ধর্মীয় গ্রন্থের বরাত দিয়ে যে মাসিহার কথা বলে, ইসলাম ও খ্রিষ্টান ধর্মে তাকে ধোকাবাজ বা মিথ্যা মাসিহ হিসেবে উল্লেখ করা আছে। প্রকৃত মাসিহ হলো ঈসা আ. এর দ্বিতীয় আগমন যেটা উভয় ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী মিথ্যা মাসিহ এর আগমনের পরেই ঘটবে।
➤ হিন্দু ধর্মেও শেষ জামানার উল্লেখ আছে। ভারতের হিন্দুধর্মগুরুদের সম্প্রতি সাক্ষাৎকার দেখলে তাদের শেষ জামানা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার বিষয়টি বুঝা যাবে। তাদের ধর্মে কলি যুগ সম্পর্কে বলা হয়েছে যেখানে হিংসা, অধর্ম, পাপ ও ধ্বংসের লিলায় মত্ত হবে মানুষ যে যুগ এখন চলমান। এরপর সাদা ঘোড়াই চরে একজন কল্কির অবতার হবে। মানে শান্তির দূত আসবেন।
➤ ভূরাজনীতি ও রণকৌশলগত পরিকল্পনা বুঝার জন্য বিশেষ করে জিউস এবং খ্রিষ্টান এস্কেটোলজি সম্পর্কে সম্যক ধারনা থাকা বর্তমান প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। কারন এখানে উল্লেখিত ভবিষ্যৎবাণী অনুসরন করে অসংখ্য বড় বড় ইভেন্ট সাজানো হয়। জায়োনিস্ট ইহুদিরা মনে করে, তারা জিউস এস্কেটোলজি অনুসরণ করে তাদের মিথ্যা মাসিহাকে স্বগত জানাতে বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যসহ সারাবিশ্বে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। উপরে তুরস্কের মিডিয়া টিআরটি ওয়ার্ল্ড এর ভিডিও থেকে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে। আবার উদাহরণস্বরূপ কমনওয়েলথ গেমস ২০২২ এর উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানকে হুবুহু বাইবেল প্রফেসি অনুসরন করে সাজানো হয়েছে। Knowledgeispower নামে ইউটিউব চ্যানেলে Satanic Commonwealth Games 2022 Opening Ceremony শিরোনামে একটি ভিডিওতে বাইবেলের উদ্ধৃতিসহ অনুষ্ঠানের পিছনের কলা কৌশল পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা আছে। এই প্রফেসিগুলো সম্পর্কে সম্যক ধরানা না থাকলে এ ধরনের আয়োজনের পিছনের মূল ব্যাপার কখনও বুঝা সম্ভব না।
অবহেলিত ইসলামিক এস্কেটোলজি চর্চা
শেষ জামানা নিয়ে বিশেষ করে তরুন প্রজন্মের মনে অসংখ্য প্রশ্ন ও কৌতুহল। কিন্তু এর কোন উত্তর সচরাচর পাওয়া যায় না। কোন এক অদৃশ্য কারনে ইসলামিক এস্কেটোলজি বা শেষ জামানা নিয়ে বক্তব্য, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে যেতে দেখা যায় যায় না অধিকাংশ আলেমদের। হাতেগোনা কয়েকজন এ নিয়ে কথা বলেছেন এবং বলছেন। তাদের মধ্যে ড. ইসরার আহমেদ, শায়খ্ ইমরান নজর হোসেন, শায়খ হামজা ইউসুফ, আব্দুর রহিম গ্রীন। শায়খ্ ইমরান নজর হোসেনের ইসলামিক এস্কেটোলজি নিয়ে বাংলায় অনুবাদ করা অনেক বই বাজারে পাওয়া যায়। এছাড়া ওনার ইউটিউব চ্যানেলে ইংরেজীতে নিয়মিত এ সংক্রান্ত বক্তব্য দিয়ে থাকেন। ওনার কিছু বিষয় বিশেষ করে ইয়াজুজ-মাজুম, দাজ্জাল আগমনের সময়কাল, ফোরাত নদীর স্বর্ণের পাহাড় নিয়ে গবেষণাকে ঘিরে অন্যান্য বিশ্লেষকদের মধ্যে মতভেদ আছে। ভিন্ন মত থাকবে সেটা অস্বাভাবিক কিছু না। যে কোন মানুষের গবেষণা চূড়ান্ত সত্য না হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। কিন্তু কোরআন সুন্নাহ’র আলোকে তার বেশিরভাগ বিশ্লেষণই ভাবনার খোরাক যোগাতে বাধ্য। আমাদের উচিত গবেষণার মূল্যায়ন করা ও ভালো কিছুকে গ্রহণ করা। কোরআন সুন্নাহ’র সাথে সাংঘর্ষিক কিছু থাকলে সেটা বাদ দেয়া বা সেটা নিয়ে আরো বেশিবেশি গবেষণা করে সংশোধন করা। বাংলাদেশেও হাতেগোনা কয়েকজন এসব নিয়ে লিখেন এবং কথা বলেন। আখীরুজ্জামান ও তাত্ত্বিক বিষয় নিয়ে গবেষণাধর্মী কিছু বই আছে যা অত্যন্ত সহায়ক। যদিও চলমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনের তুলনায় যতটা বিশ্লেষণ ও গবেষণা হওয়া দরকার তা অনেক কম। অথচ সবাই একবাক্যে স্বীকার করে যে, শেষ জামানার প্রায় ৭০ শতাংশ আলামত ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়ে গেছে। এই ভয়াবহ কথাটির মর্ম বুঝে থাকলে প্রতি জুম্মায় আখিরুজ্জামান নিয়ে বিশেষ আলোচনা বাধ্যতামূলকভাবে হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এর লেশমাত্রওকি আমরা বাস্তবে দেখতে পাই? নিচে এর কারন সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত কিছু মতামত তুলে ধরছি।
➤ প্রথমত, মানুষ এ সম্পর্কে সচেতন না। কোনরকম নাম শুনলেও হয়ত আমরা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করিনি বা সুযোগ হয়নি। যদিও সময় দরজায় কড়া নাড়ছে, অন্তত চারপাশের পরিস্থিতি সেটাই বলে।
➤ শেষ জামানার অনেক কিছু এখনও সংগঠিত হয়নি। তাই এস্কেটোলজি চর্চা মানে অনেকে মনে করেন ভবিষ্যৎবাণী করা। কিন্তু এটা চিন্তা করা হয়না যে, ভবিষ্যতে হবে এমন অনেক বিষয় কোরআন হাদিসেই উল্লেখ আছে। আর সেসব আলামত দেখা গেলে তা নিয়ে গবেষণা, বিশ্লেষণে উৎসাহিত না করে বরং নানারকম ট্যাগ লাগানো হয়।
➤ এস্কেটোলজি মানেই শেষ জামানা, যুদ্ধ, সংঘর্ষ, দুর্যোগ ইত্যাদি। এগুলো নেতিবাচক বিষয় মনে করে অনেকে আগ্রহী হয় না।
➤ গবেষণাধর্মী বিষয় হওয়ায় এটি নিয়ে সাধারন মানুষের আগ্রহ কম।
➤ সাধারন মানুষের আগ্রহ কম থাকায় আলোচক বা বিশ্লেষকরাও নিরুৎসাহিত হন।
➤ ঝুকিপূর্ণও বটে। যদিও এখন খ্রিষ্টান, ইহুদি, মুসলমান এমন কি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও এসব নিয়ে আলোচনা ও বিশ্লেষণ বহুগুণ বেড়ে গেছে। এবং পূর্বের যেকোন সময়ের তুলনায় বিষয়গুলো এখন জনপ্রিয়। তবে একটা সময় ছিল যখন এগুলো নিয়ে কথা বলতে মানুষ ভয় পেত।
➤ মানুষের অবচেতন মন কঠিন পরিস্থিতিকে এড়িয়ে নিছক সান্তনা খোজার চেষ্টা করে। উদাহরনস্বরুপ, বিশ্ব নেতা ও বিশ্লেষকরা আর্মাগেডন সম্পর্কে বারবার সতর্ক করছেন, মুদ্রা বাজার ধসের আশঙ্কা, দুর্ভিক্ষের সংকেত, ভাইরাস মহামারি, ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ইত্যাদির কথা বলছেন। একরকম সময়ও বেঁধে দেয়া হচ্ছে যা ২০৩০ সাল। সব জেনেও মানুষ মনে করছে ভালোই তো আছি, যা হবার পরে দেখা যাবে। এটা একটা সান্তনা। এস্কেটোলজি থেকে মানুষ সম্ভাব্য দুর্যোগ সম্পর্কে জানতে পারত কিন্তু হয়ত নিজের অজান্তেই তা এড়িয়ে মানুষ সচেতন না হয়ে নিছক সান্তনা খুজে বেড়াচ্ছে।
➤ এস্কেটোলজি নিয়ে কথা বলে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে এমনটা মনে হতে পারে। বিষয়টিকে দুভাবে দেখা যায়। কেউ সত্য জেনে হেদায়েতের পথে ফিরে আসতে পারে। মিথ্যা বলা বন্ধ করতে পারে। সুদ, ঘুষ, দুর্নীতিসহ সব পাপাচার থেকে সরে আসতে পারে। কারন চারপাশে যা ঘটছে তার অসংখ্য দলিল আছে এবং সব সত্য। এসব উপলব্ধি করে কারো জীবন বদলে যেতে পারে। আবার কেউ সত্যিই আতঙ্কিত হয়ে আপনাকে সেকেলে, ধর্মান্ধ উপাধি দিতে পারে।
এস্কেটোলজি কি জ্যোতিষ বিদ্যা?
এস্কেটোলজি প্রসঙ্গ আসলেই কিছু মানুষ এটিকে জ্যোতিষ বিদ্যা বা ভবিষ্যৎ গণনা হিসেবে উল্লেখ করেন। আসলেই কি তাই? জ্যোতিষশাস্ত্র হলো নভোমণ্ডলে গ্রহ-নক্ষত্র ইত্যাদির অবস্থান বিবেচনা করে ভবিষ্যৎ বলা বা ভাগ্যগণনা করা। সেখানে এস্কেটোলজি সম্পূর্ণ ধর্মীয় গ্রন্থভিত্তিক শেষ জামানা সম্পর্কিত তথ্যের বিশ্লেষণমাত্র। এটি নিয়ে বিভ্রান্তির কোন সুযোগ নাই। হয়ত এই বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে যেন প্রকৃত সত্য থেকে আমাদের দৃষ্টিকে দূরে রাখা যায়, দৈনন্দিন জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকি, খেল তামাশায় মত্ত থাকি।
যেখানে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্প আর্মাগেডন সম্পর্কে বারবার সতর্ক করছেন সেখানে অধিকাংশ মানুষ আমরা জানিই না আর্মাগেডন কি। পৃথিবী সৃষ্টির পর সবচেয়ে ভয়ানক দুর্যোগের নাম হলো মালহামা বা আর্মাগেডন। এখন মালহামাকে কি বলা যাবে যে এটাতো ভবিষ্যৎবাণী বা জ্যোতিষীরা এসব বলে থাকে? অনেকের ধারনা যা এখনও সংগঠিত হয়নি তা নিয়ে বলা মানেই ভবিষ্যৎবাণী বা জ্যোতিষগিরি! এরপর মালহামা নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে গেলে আবার অসংখ্য ইভেন্ট আসবে যেগুলো সুস্পষ্টভাবে ধর্মগ্রন্থে বলা আছে এবং বলা হয় এই ইভেন্টগুলোর ৭০ শতাংশেরও বেশি ইতিমধ্যে সংগঠিত হয়ে গেছে এবং বাকিগুলো হওয়ার পথে। অধিকাংশ সংগঠিত হওয়ার মানে নিশ্চয় অনুধাবন করতে পারছেন। তাহলে বাকি যেগুলো এখনও হয়নি সেগুলো নিয়ে পর্যালোচনার গুরুত্ব নিশ্চয় বুঝতে পারছেন। এরপরও কি কেউ বলবে যে এগুলো জ্যোতিষীদের কাজ?
এস্কেটোলজিক্যাল গবেষণা
সত্য অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া হলো গবেষণা। অন্যথায়, রিসার্চ (re-search) এর অর্থ হলো পুনরায় অনুসন্ধান বা পুনঃঅনুসন্ধান যা একটি পদ্ধতিগত উপায়ে সসম্যা চিহ্নিত করে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সেই সমস্যা সমাধানের উপায় খোজা। এস্কেটোলজিক্যাল গবেষণা তাহলে শেষ জামানার বিভিন্ন বিষয়, আলামত, সমস্যা চিহ্নিত করে তথ্য সংগ্রহ, পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিন্ধান্তে পৌছানো, সমাধানের উপায় বের করা এবং প্রতিবেদন তৈরি করাকে বুঝায়। অন্য গবেষণার থেকে এস্কেটোলজিক্যাল গবেষণার বিষয় ও পরিধি অনেক আলাদা। এই গবেষণার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো সম্পর্কে অবশ্যই ধারনা থাকা প্রয়োজন:
- ধর্মীয় জ্ঞান
- তুলনামূলক ধর্ম তত্ত্ব (Comparative Religion)
- শেষ জামানা সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত
- দর্শন
- ইতিহাস
- ভূরাজনীতি
- প্রযুক্তি
এখানে প্রথম তিনটি নিয়ে নিশ্চয় কোন ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। প্রশ্ন হতে পারে পরেরগুলো কেন দরকার? লেখা লম্বা করা যাবে না। সংক্ষেপে কিছু উদাহরন দিব। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সংক্ষেপে এআই। এই আর্টিফিসিয়ালের সমার্থক শব্দ ডিকশনারী ঘাটলে পাবেন man-made, non-natural, false, bogus, fabricated, fake, pretended ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার আলাদা একটি লেখায় এ সংক্রান্ত বিস্তারিত আছে। এআই প্রযুক্তি নিয়ে নিশ্চয় গর্ব করার মতো অনেক কিছু আছে। এর মাধ্যমে অনেক কিছু সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু এআই দিয়ে ধর্মগ্রন্থ রিরাইট করা, নতুন ধর্ম প্রবর্তনের চেষ্টা করা, এআই জেনারেটেড চার্চ (জার্মানীতে চালু হয়েছে) বা নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার প্রবর্তনের চেষ্টা যদি করা হয় তবে অবশ্যই এটি এস্কেটোলজির অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়। এরকম অনেক প্রযুক্তির নাম উল্লেখ করা যায়। একইসাথে ভূরাজনীতি ও শতবছর বা হাজার বছরের যুদ্ধের ইতিহাস, বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ইতিহাস জানা থাকলে বর্তমান ও আগামীর যুদ্ধ বা বড় কোন পরিবর্তনের চিহ্ন সহজে বুঝা যাবে। কারন ইতিহাস ঘুরেফিরে আসে, এর পুনরাবৃত্তি হয়। এস্কেটোলজি বিদ্যা চর্চার মাধ্যমে এসব উপলব্ধির দৃষ্টি খুলে যেতে পারে। এগুলোর বাহিরেও অনেক কিছু আছে যা এস্কেটোলজিক্যাল গবেষণার জন্য জরুরী। এর মধ্যে স্পিরিচুয়ালিটি অন্যতম।
শেষ কথা হলো, দুনিয়াজুড়ে যুদ্ধের যে দামামা চলছে, কৃত্তিম ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ভোগ পাশাপাশি নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার (নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার) স্বপ্ন। যে স্বপ্নের মধ্যেও রয়েছে দুই ধরনের মেরুকরন। যেই শ্রেণী নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার পরিকল্পনা করছে, আদৌ কি সে অনুযায়ী নতুন বিশ্ব প্রতিষ্ঠিত হবে? নাকি তাদের পরিকল্পনার মধ্য দিয়েই আল্লাহর পরিকল্পনা এগিয়ে যাবে। উত্তর সহজ। কিন্তু যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এটি বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাবে সেটি সহজ না। আমরা কি এই মূহুর্তে এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই আছি? এরকম অসংখ্য প্রশ্ন ও কৌতুহল মেটানোর ক্ষেত্র হলো এস্কেটোলজি। প্রশ্ন, উত্তর, সংকট ও সমাধান সব যেন কল্পনাতীত ছন্দের মতো মিলবে যদি সত্যের পথে থেকে নিবিড়ভাবে এই বিদ্যা চর্চা করা যায় এবং সর্বোপরি যদি আল্লাহর অনুগ্রহ থাকে।
GIPHY App Key not set. Please check settings